বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়ায় ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত তিনটি কমিটিতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং জামায়াত-শিবিরের ২৩ জনকে অর্থের বিনিময়ে স্থান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে জেলা ছাত্রদলে ১৮ জন, শহর ছাত্রদলে তিন জন ও সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখায় দুজন। পদবঞ্চিত নেতারা এদের বহিষ্কার ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা স্মারকলিপির কপি গ্রহণ করেছেন। পদবঞ্চিত নেতাকর্মীর পক্ষে নাছিরুজ্জামান মামুন, আলমগীর হোসেন, শাহরিয়ার পারভেজ শাকিল ও রুবেল মিয়া অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল থেকে গত ৪ জুন বগুড়া জেলা ছাত্রদল, শহর ছাত্রদলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬৮টি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। পদবঞ্চিত কয়েকজন নেতাকর্মী পরদিন শহীদ খোকন পার্কে আমরণ অনশন শুরু করেন। সন্ধ্যায় জেলা বিএনপি নেতা এমআর ইসলাম স্বাধীন, সহিদ-উন-নবী সালাম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ তাদের বিবেচনার আশ্বাস দিয়ে অনশন ভাঙিয়ে দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এতে কাজ না হওয়ায় উল্লিখিত পদবঞ্চিত চার নেতাকর্মী গত ১৭ জুন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দেন। এর অনুলিপি দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বকুল, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির ও রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকতকে দেওয়া হয়। তারা অভিযোগের বিষয় হিসেবে উল্লেখ করেন, সদ্য ঘোষিত বগুড়া জেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আওয়ামী লীগ দোসর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী ও হাইব্রিডদের বহিষ্কার এবং ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন। তারা বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে থেকে আমরা ছাত্রদলের পতাকা বুকে ধারণ করে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছি। হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতিত হয়ে গুলিবিদ্ধের শিকার হয়েছি। অথচ দুঃখজনকভাবে সদ্য ঘোষিত বগুড়া জেলা ছাত্রদলের কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে যাদের পদায়ন করা হয়েছে তারা অতীতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিল। জামায়াত-শিবির ঘরানা থেকে এসেছে এবং যারা ৫ আগস্টের দলে যোগ দিয়েছে। বছরের পর বছর রাজপথে থেকে যারা ছাত্রদলকে আগলে রেখেছে, তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। যা আমাদের মনোবলে গভীর আঘাত করেছে। তারা আরও বলেন, যেখানে প্রাণের সংগঠন ছাত্রদল বগুড়া জেলা শাখার কমিটি সারা দেশের মাঝে মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পাবে সেখানে সদ্য ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আওয়ামী লীগ দোসর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী ও হাইব্রিডদের স্থান দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে জেলা কমিটিতে ১৮ জন, শহর কমিটিতে তিন জন ও সরকারি আজিজুল হক কলেজ শাখায় দুজন। এ ২৩ জনের প্রমাণ সংযুক্ত করা হয়েছে। বঞ্চিত নেতাকর্মীরা বগুড়া জেলা ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি পুনর্গঠন, অনুপ্রবেশকারী ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও জামায়াত-শিবিরপন্থিদের অপসারণ, ৫ আগস্টের পর দলে আসাদের অগ্রাধিকার না দিয়ে পরীক্ষিত, ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন এবং ১৫ বছরের রাজপথের সংগ্রামীদের নেতৃত্বে পদায়ন করার অনুরোধ জানান। অভিযোগকারীদের মধ্যে নাছিরুজ্জামান মামুন বলেন, গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলন করতে গিয়ে আমার নামে তিনটি মামলা হয়। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালে আন্দোলন করতে গিয়ে দুটি মামলা হয়। আমি জেলা ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী ছিলাম। আশা করেছিলাম আমাকে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহসভাপতি করা হবে। অথচ ১৩১ সদস্যের কমিটিতে আমার স্থানই হয়নি। তিনি আরও বলেন, আন্দোলন করতে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন আলমগীর হোসেন, ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন শাহরিয়ার পারভেজ শাকিল। পুলিশের মারধরে তার দাঁত ভেঙে যায়। রুবেল মিয়ার নামে একাধিক মামলা হয়। অথচ তাদের কোনো কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি। অনশন শুরু করলে বিএনপি নেতৃবৃন্দ আমাদের বিষয়টি দেখার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রাখা হয়নি। এ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক এম আর হাসান পলাশ বলেন, কমিটি ছোট করার নির্দেশনা ছিল। যার কারণে অনেকের নাম বাদ পড়েছে। আলোচনার মাধ্যমে পদবঞ্চিতদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। কিন্তু পদ না পেয়ে তারা যা করছেন, তাতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তিনি অর্থের বিনিময়ে কাউকে পদ দেওয়ার বিষয়টি দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকার করেছেন। জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা পদবঞ্চিতদের স্মারকলিপি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক রহমান) দেখবেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
