
গুঁড়া দুধ আমদানির টাকা দিয়ে চিলিং সেন্টার করতে পারি- প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
- আপলোড সময় : ২৯-০৬-২০২৫ ১০:১৯:০২ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৯-০৬-২০২৫ ১০:১৯:০২ পূর্বাহ্ন


মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, আমরা যেই টাকা দিয়ে গুঁড়া দুধ আমদানি করি, সেই টাকা দিয়ে আমরা অনেকগুলো চিলিং সেন্টার করতে পারি। গতকাল শনিবার সকালের দিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জয়নগর স্কুল মাঠে গবাদি পশুর রোগ প্রতিরোধে টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, কেন আমরা সেই চিলিং সেন্টার করছি না? এটা আমরা সরকারিভাবে করার চেষ্টা করব। পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও আমরা উৎসাহ দেবো যাতে তারা সেটা করেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা আরও বলেন, রপ্তানি করার জন্য ক্ষুরা রোগের (এফএমডি ভাইরাস) টিকা দেওয়া হচ্ছে বিষয়টা এমন নয়। আমরা যদি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন করি সেগুলো কিন্তু একটি প্রাণ, কোনো রোগ হলে তারও কষ্ট হয়। কোনো রোগেই যেন প্রাণীর কষ্ট না হয় এজন্যই আমরা ভ্যাকসিনটা দেব। শুধুমাত্র মাংস ভালো পাওয়ার জন্য কিংবা শুধুমাত্র রপ্তানি করার জন্য না। ফরিদা আখতার বলেন, যেসব দেশ থেকে আমরা মাংস আমদানি করি ওসব দেশে প্রাণীর দুরারোগ্য রোগ নির্মূল করা হচ্ছে। আমরা চাই যে মানুষের কোনো রোগ না থাকুক, তেমনি প্রাণী সম্পদেরও কোনো রোগ না থাকুক সেটা আমরা চেষ্টা করব। সরকার অনেক চেষ্টা করছে। এফএমডি ভ্যাকসিন আনার জন্য যেই সময় চলে যাচ্ছে, মানুষ পাচ্ছে না এটা নিয়ে যে উৎকণ্ঠা তার জন্য মন্ত্রণালয় অব্যাহত প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আমরা এমন একটা ভ্যাকসিন এনেছি যে ভ্যাকসিনটা প্রাণীদেহে কাজ করে। আর্জেন্টিনাতে গিয়ে এটা অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই আনা হচ্ছে। এরই মধ্যেই এ ভ্যাকসিন প্রথম ডোজের জন্য চলে এসেছে। যেটা এসেছে দ্বিতীয় ধাপে ছয় মাস পর আরও আসবে। কাজেই এখন আমাদের এ ভ্যাকসিন প্রয়োগে আপনাদের (খামারি) সহযোগিতা খুবই দরকার। এ সময় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু সুফিয়ান, জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মজিবুর রহমানসহ ২ শতাধিক খামারি উপস্থিত ছিলেন।
নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন জরুরি: মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের ওপর গুরুত্বারোপ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, মাছ আমিষের যোগানদাতা; প্রাণিজ আমিষ হিসেবে মাছ বাঙালির অবিচ্ছেদ্য অংশ। গতকাল শনিবার বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) ময়মনসিংহ আয়োজিত ‘বার্ষিক গবেষণা অগ্রগতি (২০২৪-২৫) পর্যালোচনা ও গবেষণা পরিকল্পনা (২০২৫-২৬) প্রণয়ন’ শীর্ষক আঞ্চলিক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। উপদেষ্টা বলেন, মাছ বিশেষ করে ছোট মাছ কীভাবে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যায় তার জন্য বিএফআরআইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিভাগ, বিএফআরআই এবং মৎস্য অধিদফতরকে অভিন্ন লক্ষ্যে আন্তঃসমন্বয় করে কাজ করতে হবে; তবেই বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের গুণগত পরিবর্তন সম্ভব। বিজ্ঞানীদের জাতির মূল্যবান সম্পদ উল্লেখ করে প্রধান অতিথি বলেন, তারা যেন তাদের মেধা দিয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারেন, গবেষণায় আরও মনোনিবেশ করতে পারেন- সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা নিশ্চিত করা হবে। তিনি আরও বলেন, বিজ্ঞানীদের এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে, যা সাধারণ মানুষের বোধগম্য হবে এবং যার উপকারিতা জনগণ সরাসরি বুঝতে পারবে। এসব প্রযুক্তি যদি মৎস্য অধিদফতরের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারিত করা যায়, তাহলে দেশে মাছের সংকট থাকবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। উপদেষ্টা আরও বলেন, কৃষি কার্যক্রমে ব্যবহৃত কীটনাশক হাওর এলাকার মাছের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কীটনাশক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এই কমিটিগুলোর কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে হাওরাঞ্চলে কীটনাশক ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে কমবে; ফলে জলজ প্রাণীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায় ও হুমকির মুখে থাকা মাছ শনাক্তে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) প্রজাতিগুলোকে লাল (বিপন্ন), হলুদ (ঝুঁকিপূর্ণ) ও সাধারণ (নিরাপদ) শ্রেণিতে ভাগ করেছে। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে মাছের সংকট নিরসনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় বিএফআরআই কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। আর তা সফল হলে সেটা দেশের মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণে একটি বড় মাইলফলক হবে। বিএফআরআই’র মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার। এছাড়া ছিলেন- ময়মনসিংহ বিভাগের মৎস্য অধিদফতরের পরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, বিএফআরআই’র বিজ্ঞানী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা, মৎস্য খামারিরা। কর্মশালায় স্বাদুপানি কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হারুন উর রশিদ গবেষণা পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন। এর আগে উপদেষ্টা বিএফআরআই’র গবেষণা মাঠের ঘারুয়া, রাণী, মহাশোল, দেশী স্বঁরপুটি, ভাগনা, গুলশা, পাবদা, টেংরা, বাটা, বিএফআরআই তেলাপিয়া, বটমক্লিন সিস্টেম (পাবদা ও মাগুর), গুড়া চিংড়ি, কুচিয়া, কার্প রেণু হ্যাচারি এবং মুক্তা ল্যাব পরিদর্শন করেন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ