ঢাকা , মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫ , ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
গোপালগঞ্জে যাত্রীবাহী বাস উল্টে ৬ শিশুসহ আহত ২০ বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে দুই ট্রাকের সংঘর্ষে হেলপারসহ নিহত-২ শিশু সৌরভ হত্যার দুসপ্তাহেও উদঘাটন হয়নি রহস্য গ্যাস সরবরাহে পিছিয়ে পড়ছে বাপেক্স রিকশা চালিয়ে বিদায়ী শুভেচ্ছা জার্মান রাষ্ট্রদূতের হাতিরঝিলে শিশু ধর্ষণচেষ্টায় আসামির ১০ বছর কারাদণ্ড দুদক কর্মকর্তা পরিচয়ে ঘুষ চাওয়া প্রতারক চক্রের ৫ সদস্য রিমান্ডে গোপালগঞ্জে সালিশ বৈঠকে সংঘর্ষ আহত অর্ধশতাধিক গাজীপুরে কিশোর গ্যাং লিডারের গুলি ছোড়া নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ডিবি পরিচয়ে ৩০ লাখ টাকা ছিনতাই : এক আসামি কারাগারে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ৫ জন নিহতের ঘটনায় বাসচালক গ্রেফতার দেশে বছরে পাটের উৎপাদন ১৫ লাখ টন বিপুল বিনিয়োগ সত্তেও কমেনি জ্বালানি খাতের ভর্তুকি পোশাকশ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা, বিক্ষোভের পর কারখানা বন্ধ ঘোষণা ডেঙ্গু রোগীর ভীড় হাসপাতালে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে পোরশায় মাদকদ্রব্য বিরোধী সচেতনতামূলক সভা কটিয়াদীতে প্রতিপক্ষের জোরপূর্বকভাবে জায়গা দখলের অভিযোগ আমতলীতে পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে বিএনপির কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের কমিটি গঠন সম্পন্ন আমতলীতে গোজখালী মাজার শরিফের পীরজাদা মরহুম মাওলানা শাহ্ ছলিমউদ্দীন আহম্মদ কাদরী এর ছোট ছেলে পীরজাদা জলিল কাদরী ইন্তেকাল করেছেন

বিপুল বিনিয়োগ সত্তেও কমেনি জ্বালানি খাতের ভর্তুকি

  • আপলোড সময় : ০১-০৭-২০২৫ ০১:১০:৪৬ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০১-০৭-২০২৫ ০১:১০:৪৬ পূর্বাহ্ন
বিপুল বিনিয়োগ সত্তেও কমেনি জ্বালানি খাতের ভর্তুকি

বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে বিগত পাঁচ অর্থবছরে সরকার ২ লাখ ৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে।
বিদ্যুতে প্রায় ১ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে এবং গ্যাস ও জ্বালানির অন্যান্য খাতে ৬৮ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে।
পাঁচ বছরের ব্যবধানে বিদ্যুতে ভর্তুকি ৫৯৩ শতাংশ এবং জ্বালানি খাতে ৩১০ শতাংশ বেড়েছে।
স্টাফ রিপোর্টার
দেশী-বিদেশী বিপুল অর্থ বিনিয়োগেও দেশের জ্বালানি খাতের ভর্তুকি কমেনি। বেশি দামে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে কম মূল্যে গ্রাহকের কাছে সরকার বিক্রি করায় মূলত ভর্তুকি দিতে হয়। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সরকারের কাছ থেকে বছরের পর বছর ভর্তুকি নিচ্ছে। কিন্তু কিন্তু কমছে না বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকি। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে গিয়ে ব্যাপক হারে বেসরকারি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। বিগত সরকারের ১৪ বছরে ৮২টি বেসরকারি ও ৩২টি রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। এ পরিমাণ ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এ পেমেন্ট প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে বিগত পাঁচ অর্থবছরে সরকার ২ লাখ ৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। তার মধ্যে বিদ্যুতে প্রায় ১ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে এবং গ্যাস ও জ্বালানির অন্যান্য খাতে ৬৮ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর সময়কালে সরকার এ পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিয়েছে। আর ওই পাঁচ বছরের ব্যবধানে বিদ্যুতে ভর্তুকি ৫৯৩ শতাংশ এবং জ্বালানি খাতে ৩১০ শতাংশ বেড়েছে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুতে বিপিডিবিকে ৮ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ভর্তুকি ৩ হাজার ১৮ কোটি টাকা বেড়ে ১১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা দাঁড়ায়। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দেয়া হয় ২৩ হাজার কোটি টাকা। যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভর্তুকি দেয়া হয় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। আর ২০২৪-২৫ সংশোধিত অর্থবছরে বিপিডিবির ভর্তুকি ছিল ৬২ হাজার কোটি টাকা। বিগত পাঁচ অর্থবছরের হিসাবে বিদ্যুতের ভর্তুকি পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে ৫৩ হাজার ৫৫ কোটি টাকা বেড়েছে। আর এ সময়কালে বিদ্যুতে ভর্তুকি ৫৯৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও ২০২০-২১ অর্থবছরের বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ছিল (ইনস্টল ক্যাপাসিটি) ২২ হাজার ৩১ মেগাওয়াট। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুতে সক্ষমতা দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৯৮ মেগাওয়াট। ২০১০ সালে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান বা বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ খাতে প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে চাহিদা বাড়বে। কিন্তু বাস্তবে ওই সময়কালে বিদ্যুতের সক্ষমতা ব্যাপকহারে বাড়ানো হলেও ১০ শতাংশ হারে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়েনি। ফলে উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় অর্ধেক বসিয়ে রেখে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে বিগত সরকারের আমলে অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষত বিদ্যুৎ খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। কিন্তুজ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা অবহেলিত ছিল। যে কারণে ব্যয়বহুল জ্বালানি আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে। এমনকি সরকারি সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রাখার মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশের গ্যাস খাতে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা ভর্তুকি ছিল। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়। ওই পাঁচ অর্থবছরে বিদ্যুতে ভর্তুকি ৫৯৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্যাস খাতে এলএনজিতে মূল ভর্তুকি যায়। বিশ্ববাজার থেকে উচ্চমূল্যে এলএনজি কিনে কম মূল্যে সরবরাহ করাতে সরকারকে মোটা অংকের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। দেশের জাতীয় গ্রিডে গড়ে ২০ শতাংশ এলএনজি আমদানির পরিমাণ। ওই এলএনজি আমদানিতে সরকারকে বড় অংকের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। বিশেষত বেশি দামে এলএনজি আমদানি করে কম মূল্যে বিক্রি করায় পেট্রোবাংলার বিপুল ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। আর তা ভর্তুকি দিয়ে মেটাতে হয়। বর্তমানে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে সংস্থাটির ২৯ টাকা ৩৯ পয়সা খরচ হচ্ছে। আর গ্রাহক পর্যায়ে ২২ টাকা ৮৭ পয়সা বিক্রি করা হচ্ছে। ঘাটতির অর্থ প্রতি বছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি হিসেবে পেট্রোবাংলা নিচ্ছে। চলতি অর্থবছরে গ্যাস খাতে সরকারের ভর্তুকি ২১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস খাতে ভর্তুকি ছিল ৮ হাজার ২২০ কোটি টাকা।
এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার বদলে বিগত সরকার বছরের পর বছর গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিয়েছে। ব্যয়কে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে ভর্তুকি আরো বাড়বে। আর দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রের অনুসন্ধান না করাও গ্যাস খাতে ভর্তুকি বেড়ে যাওয়ার কারণ। ২০১৮ সালে দেশে এলএনজি আমদানি শুরু হলে স্থানীয় গ্যাস খাতের উন্নয়নে তেমন কোনো বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়নি। প্রতি বছর বাজেটে ১ থেকে দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়। সীমিত ওই অর্থ বরাদ্দ নিয়ে পেট্রোবাংলা বড় আকারে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাতে পারেনি। এমনকি বড় বড় কূপ খননের পরিকল্পনা নিয়েও পিছিয়ে আসতে হয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনতে সরকার বিভিন্ন চুক্তি রিভিউ করছে। কোথায় কোথায় ব্যয় বেশি হচ্ছে, কোন জ্বালানি ব্যবহারের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন সাশ্রয়ী হবে, সেই বিষয়গুলোতে নজর দেয়া হচ্ছে। বিগত সময়ে গ্যাস-বিদ্যুতে বিপুল পরিমাণ বকেয়া ছিল। বর্তমান সরকার ওসব বকেয়া পরিশোধ করেছে। বিগত সময়ের বকেয়া চলতি অর্থবছরে গ্যাস-বিদ্যুৎ খাতে যুক্ত হয়ে ভর্তুকির পরিমাণ বেড়েছে। তবে প্রস্তবিত অর্থবছরে বিদ্যুতে ভর্তুকি কমানো হয়েছে। ৩৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি রাখা হয়েছে। সামনের দিনে এটা আরো কমে যাবে। এখন কোনো বকেয়া নেই। বকেয়ার বিলম্ব মাশুল নেই। ফলে পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স