ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫ , ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
আ’লীগ ছাড়া অন্য দলগুলোকে আয় ব্যয়ের হিসাব দিতে বললো ইসি গণঅভ্যুত্থানের ভুয়া মামলা বাণিজ্য গণপিটুনিতে থামছে না হত্যাকাণ্ড ওয়ালটনের প্যাসেঞ্জার কার ব্যাটারি গ্রাভিটন উদ্বোধন করলেন কন্ঠশিল্পী তাহসান জুলুমের প্রতিবাদ করায় যাত্রী ফারুক এর উপর বাস স্টাফদের হামলা পুষ্টি কর্মসূচি শিশুস্বাস্থ্যে পরিবর্তন আনতে পারে যশোরে ১১ আ’লীগ নেতার আদালতে আত্মসমর্পণ ময়মনসিংহে ডাম্পট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে চালকসহ নিহত ২ হবিগঞ্জে ১৪৪ ধারা ভেঙে সংঘর্ষ, ভাঙচুর-লুটপাট স্মার্ট পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে আটাব-আরেফ মালয়েশিয়ায় আটকদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে সরকার প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্বোধন করলেন রাষ্ট্রপতি উৎপাদনশীলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ইলেকট্রনিক্স শিল্পখাত আ’লীগ সরকারের সুবিধাভোগী জসিম মোল্লা এখন বিএনপি নেতা ঢাকার রাস্তায় দেশীয় প্রযুক্তির ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানোর উদ্যোগ ঝিকরগাছা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের হিসাবরক্ষকের খুটির জোর কোথায় ? দেশ গঠনে কোনও আপস করবো না -নাহিদ এবার অস্ত্র মামলায় রিমান্ডে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকের প্রতি অসম্মানজনক আচরণের প্রতিবাদ বিশিষ্ট নাগরিকদের মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার হারানোর শঙ্কা
* জীবিত স্বামীকে গণঅভ্যুত্থানে ‘মৃত’ দেখিয়ে স্ত্রীর মিথ্যা মামলা * মামলা বাণিজ্য ও ভুয়া মামলা বন্ধে আইন সংশোধন হচ্ছে: আইন উপদেষ্টা

গণঅভ্যুত্থানের ভুয়া মামলা বাণিজ্য

  • আপলোড সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ০১:১৯:২৯ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৮-০৭-২০২৫ ০১:১৯:২৯ অপরাহ্ন
গণঅভ্যুত্থানের ভুয়া মামলা বাণিজ্য
’২৪ এর জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নিহত-আহতদের নামে অনেক মামলায় ভুয়া বাদী রয়েছে। এসব মামলা মূলত করা হচ্ছে ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে। অনেকে আবার মামলা বাণিজ্য করছেন। নিজের সন্তানকে হত্যা করা প্রতিবেশিকে ফাঁসানোর ঘটনা রয়েছে কুড়িগ্রামে। যাত্রাবাড়ি এলাকায় জুলাই আন্দোলনে নিহত ও হতাহতের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি। এই এলাকার সহিংসতায় মামলাও হয়েছে বেশি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মামলার জোয়ার ওঠে দেশ জুড়ে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন এমন হাজার হাজার মানুষকে আসামি করা হয় অনেক মামলায়। মূলত হয়রানি আর বাণিজ্য করাই এসব মামলার উদ্দেশ্য। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ভুয়া ও মিথ্যা মামলা হচ্ছে। যারা মিথ্যা মামলা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ধরনের মামলায় কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য জেলায় জেলায় কমিটি করে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। ৫ আগস্ট, দুপুর ২টায় যাত্রাবাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শাহিন। মামলার এজহারে বলা হয়েছে তিনি একজন গাড়ি চালক। শাহিনকে হত্যার অভিযোগে ঢাকার আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়। যেখানে ৩৪ নম্বর আসামি তৌহিদুল ইসলাম। যিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তিনি অভিযোগ করছেন ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকেই মামলার সূত্রপাত। ঘটনার সময় তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করেছেন। তৌহিদুল ইসলাম বলেন, একটা ব্যবসায়ীক কাজে সাংহাইতে ছিলাম। তখন ৪,৫ ও ৬ আগস্ট আমি দেশের বাইরে ছিলাম। আমি বাংলাদেশের ফিরে আসি ৮ আগস্ট। আর মামলাটা হচ্ছে ৫ আগস্ট। বিভিন্ন মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিয়ে ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য, সেটারই একটা পরিকল্পনা এটা। শাহিন হত্যা মামলার বাদী তার স্ত্রী স্বপ্না বেগমের দেয়া দুটি মোবাইল নম্বরই ভুয়া। যাত্রাবাড়ি থানার ওসি (তদন্ত) রমজানুল হক জানান, মামলাটি আদালত থেকে এসেছে। রমজানুল হক বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি কোনো আসামির বিরুদ্ধে তার অপরাধ প্রমাণের জন্য যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ পায়, যেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই অভিযোগপত্র দাখিল হবে। আর যদি কোনো আসামির বিরুদ্ধে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা তাকে অব্যাহতির জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রার্থনা জানাতে পারেন। ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন দুপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বিএনপি কর্মী মহিউদ্দিন। ঘটনায় দুটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। একটি মামলার বাদী ভুয়া। আরেকটি মামলা করেছেন আপন ভাই। থেমে আছে আপন ভাইয়ের মামলার তদন্ত। নিহত মহিউদ্দিনের ভাই মফিজুল ইসলাম বলেন,মামলার বাদীকে আমরা খুঁজে পাই না, মামলাটা ভূয়া, বাতিল করার জন্য। টাঙ্গাইলে এরকম হয়রানিমূলক একটি মামলায় অনেক নিরীহ লোকদের আসামি করা হয়েছে। সাবেক ফুটবলার কাজী এনামুল হক ঠিক মতো চলাফেরা করতে পারেন না। একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি করা হয়েছে। মোহাম্মদ আনোয়ার সাদত উজ্জল একজন ব্যবসায়ী। জুলাইয়ে তিনি ভারতে ছিলেন। তাকেও আসামি করা হয়েছে। দুইজনই বাদীকে চিনেন। কাজী এনামুল হক বলেন, আমি তো এটা বিশ্বাস করি না। আমি আজ তিন বছর হচ্ছে ঘরের বাইরেই যাই না। ঢাকা গেলে ঘরের এখান থেকে গাড়িতে উঠে ডাক্তারের কাছে যাই। আমি স্কয়ারে সাতদিন থেকে ডাক্তার দেখিয়ে আসলাম। আমার স্ত্রীও এরকমই অসুস্থ। যার কারণে আমি বিশ্বাসই করিনি যে, আমি তো কারও সঙ্গে এমন খারাপ কিছু করিনি। যার কারণে আমার নামে মামলা হলো। মোহাম্মদ আনোয়ার সাদত উজ্জল বলেন, মামলা হইলো কেমনে, আমি তো কোনো আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত না। কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। কোনো রাজনৈতিক কমিটির সঙ্গেও জড়িত না। কিন্তু আমার নামে মামলা হবে, এটা আমার বিশ্বাস হয়নি প্রথমে। কুড়িগ্রামের জমি সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের প্রতিশোধ নিতে সন্তানকে হত্যা করেন পাষণ্ড বাবা মা। পুলিশের তদন্তে বের হয়ে আসে সেই লোমহর্ষক ঘটনা। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের মেয়েকেই হত্যা করেন জাহিদুল ও তার স্ত্রী। কুড়িগ্রামের পর ব্রাক্ষণবাড়িয়ায়ও রয়েছে অনেক হয়রানিমূলক মামলা। থাকেন নাসিরনগর মামলার আসামি করা হয়েছে রাজধানীর মিরপুরে। এরকমই নাসিরনগরের বাসিন্দাদের আসামি করা হয়েছে আশুগঞ্জের। দীর্ঘদিন ধরে পাথর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম। বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করেন তিনি। কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও গত তিন মাসে তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে তিনটি। আমিনুল ইসলামকে আওয়ামী লীগের নেতা বানিয়ে জুলাই ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালানোর অভিযোগ আনা হয়। একইভাবে হত্যাচেষ্টা মামলা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্নার বিরুদ্ধে। খিলগাঁও থানার ওই মামলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে তাকেও করা হয় আসামি। ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে এই আইনজীবী মামলা থেকে অব্যাহতি পান। কিন্তু সবাই তো আর আইনজীবী পান্নার মতো প্রভাবশালী নন। তাই এজাহারে নাম উঠে গেলে মামলা-বাণিজ্যের হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের। যেমনটা হচ্ছেন আমিনুল ইসলাম। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত মামলা-বাণিজ্য হচ্ছে চারভাবে। এজাহারে যাদের নাম এসেছে, টাকার বিনিময়ে তাদের নাম বাদ দিতে ব্যস্ত এক পক্ষ। আরেক পক্ষ ভুক্তভোগী পরিবারকে ভুল বুঝিয়ে মামলা-বাণিজ্য করছে। অন্য একটি পক্ষ ভুয়া মামলার কপি তৈরি করে ভুক্তভোগীদের গিয়ে তদন্তের ভয় দেখায়, দ্রুত টাকা দিয়ে নাম বাদ করানোর পরামর্শ দেয় তারা। পুলিশের বিরুদ্ধেও মামলা-বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। আবার পূর্বশত্রুতা কিংবা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বেও মামলায় জড়ানো হচ্ছে কাউকে কাউকে। ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলামের নামে গত নভেম্বরে উত্তরা পশ্চিম ও কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা হয়। তিনি বলেন, প্রথমে শুনে তো আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা। যাত্রাবাড়ী থানায় আরও একটি মামলা হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে খোজ নিয়ে জানতে পারি, আমার সাবেক ব্যবসায়িক পার্টনার মামলাগুলো করান। ১৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে আমিনুলের করা মামলা বিচারাধীন বলে জানান তিনি। ব্যবসায়িক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতেই মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে অভিযোগ করে আমিনুল বলেন, কোনোদিন রাজনীতি করিনি, কিন্তু একের পর এক জুলাই আন্দোলনের হত্যা মামলা হলো আমার বিরুদ্ধে। আমি অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে সুষ্ঠু বিচার চাই। তদন্ত করে নিরপরাধ মানুষকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, ব্যক্তিগত শত্রুতার বসে যেন আসলে কাউকে যেন হয়রানি না করা হয়, এটা যিনি মামলা করছেন তারও একটা দায়িত্ব। আর আমরা আমাদের দিক থেকে পেশাগত যে দায়িত্ব রয়েছে সেটা পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে বের করা যে, প্রকৃত অর্থে ঘটনাটা কী, এবং কারা কারা এটার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটি আমাদের পেশাগত যে দায়িত্ব সেটি যেন সবাই যথাযথভাবে পালন করে সেজন্য আমরা তৎপর রয়েছি। মূল অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে সরকার জানালেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, এখানে যেসব আসামি থাকে যারা নিরপরাধ, যারা ভুলক্রমে আসামি হয়েছে বা অসৎ উদ্দেশে আসামি হয়েছে তাদের কিছু আইনগত জটিলতায় পড়তে হয়। এরকম আমরা দেখেছি, সরকার এরইমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে মিথ্যা মামলা এবং মিথ্যা আসামিদের এই মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য একটা কমিটি গঠন করেছে। সারাদেশে মামলা বাণিজ্য ও ভুয়া মামলার অসংখ্য গল্প রয়েছে। মানুষকে হয়রানি করার চক্রগুলো সক্রিয় রয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলিতে স্বামী আল-আমিন নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে মামলা করেন কুলসুম নামে এক গৃহবধূ। এ ঘটনার তিন মাস পর তার স্বামী থানায় এসে জানান, তার অজান্তে স্ত্রী তাকে ‘মৃত’ দেখিয়ে মিথ্যা মামলা করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার আশুলিয়ায়। গত বছরের ১১ নভেম্বর রাতে সিলেটের মহানগর থানার দক্ষিণ সুরমা থানায় এসে হাজির হয়ে পুলিশকে বিস্তারিত জানান আল-আমিন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে গণপিটুনিতে ৭৪ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জন আহত হয়। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯১ জনে। এর মধ্যে ৬৫% ছিল চোর সন্দেহে, ২০% ধর্মীয় গুজবের শিকার। তবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত ৩৪টি মব লিঞ্চিংয়ের ঘটনা ঘটেছে যার মধ্যে ১৭টি ছিল সম্পূর্ণ গুজবভিত্তিক। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২৮ জন, গুরুতর আহত হয়েছেন ৫৫ জন। ২০২৫ সালের মার্চে গাইবান্ধা জেলায় গুজব রটে যে, এক ব্যক্তি শিশু চুরি করে পালাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ না থাকলেও, স্থানীয় উসকানিদাতারা মুহূর্তে জনতা জড়ো করে মারধর শুরু করে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরে তদন্তে প্রমাণিত হয় ‘ভিকটিম একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ভিক্ষুক ছিল’। ২০২৫ সালের শুরুতে খুলনার দৌলতপুর থানায় এক নারী এনজিওকর্মীর নামে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে ৭টি ভিন্ন ভিন্ন মামলা হয়, যার ৬টিই মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। বরিশালের বাকেরগঞ্জে একটি চায়ের দোকানদারকে অবৈধ গ্যাস সংযোগের অভিযোগে মামলা দিয়ে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ‘মামলা না করার’ চুক্তি করে স্থানীয় দালাল ও একজন এসআই। শুধু তাই নয়, রাজধানীসহ সারাদেশে মামলা তোলার নামে অর্থ আদায়, মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ে ‘অ্যাক্টিং’ সাক্ষী তৈরি করে টাকা নেওয়া, জামিন-অযোগ্য মামলা দিয়ে ব্যক্তির জীবন বা পরিবারের ধ্বংস করার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। গণঅভ্যুত্থানের পর এই পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় ৩ হাজার ৮৮১টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আদালতে দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা অগণিত। ‘থানার দালাল চক্র’ নামে পরিচিত একটি সিন্ডিকেট মিলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, ভূমি বিরোধ ও ব্যক্তিগত শত্রুতার মামলাগুলোকে ‘কমার্শিয়াল’ করে তুলেছে বলে জানা গেছে। এসব মামলা থেকে নাম প্রত্যাহারে কমার্শিয়াল চক্রটি টাকা নেয়। মামলা তুলতে টাকা নেয়। মামলায় নাম থাকলেও পুলিশ গ্রেপ্তার বা আটক করবে না বলেও টাকা নেয়। টিআইবি এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রতিবেদন বলছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মোট ৮ হাজার ৭০০টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৩ হাজার ২০০টি ছিল ভিত্তিহীন ও প্রমাণহীন যেগুলো আদালতে পরবর্তী সময় খারিজ হয়। এ ছাড়া তদন্তে প্রকাশ, থানা বা আদালতের মামলা প্রত্যাহারে গড়ে প্রতি মামলায় আসামি প্রতি ৩০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করা হয়। অনেক সময় কেউ সরাসরি ফেসবুক লাইভে এসে অভিযোগ করে যা প্ররোচনামূলক। পরে সেই ভিত্তিতে ‘সাজানো এজাহার’ তৈরি করেও মামলা হয়। এসব বাণিজ্যভিত্তিক মামলা সমাজে এক ধরনের অশান্তি সৃষ্টি করছে। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, মামলা বাণিজ্য ও ভুয়া মামলা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বিব্রত। সেটা থেকে জনগণকে পরিত্রাণ দিতে এ সংক্রান্ত আইন সংশোধন করা হচ্ছে। এতে করে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকলে বিচার কাজ শুরুর আগে আদালত অভিযুক্তকে মুক্তি দিতে পারবে। তিনি বলেন, আমরা নিজেরাই খুব বিব্রত, আমরা এগুলো সবাইকে জানানোর চেষ্টা করি। তার মধ্যে একটা হচ্ছে ভুয়া এবং মিথ্যা মামলা করা, আরেকটি হচ্ছে মিথ্যা মামলা করে অর্থাৎ হয়তো মামলাটি সঠিক কিন্তু সেখানে অনেক ব্যক্তিকে মামলায় আসামি করে এক ধরনের মামলা বাণিজ্য করা। সেটার থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমরা বহুবার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশে যত বড় বড় আইনজীবী আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে, অনেকের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা একটি সিআরপিসি-তে একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স