বাংলা লোকসংগীতের মঞ্চে আজ যাদের নাম উচ্চারিত হয়, রফিক সরকার তাদের অন্যতম। শৈশব থেকেই গান ছিল তার নেশা, আর সেই নেশাই একদিন তাকে পৌঁছে দেয় আন্তর্জাতিক খ্যাতির দরজায়। ছোটবেলা থেকেই তিনি বিভিন্ন মাহফিল ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান গাইতেন। স্কুলে মঞ্চে গান গেয়ে তিনি বহুবার পুরস্কৃত হন। তার গানে এমন মাধুর্য ছিল যে, শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে দোয়া করতেন তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য।
এক সময় বাউল সম্রাট পাগল মনির সাহেবের গান শুনে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হন রফিক সরকার। তিনি স্বয়ং পাগল মনিরের কাছে গিয়ে কদমবুচি করে বলেন, আমি আপনাকে আমার গানের ওস্তাদ হিসেবে হৃদয়ে স্থান দিতে চাই। পাগল মনির বলেন, তুমি একটা সুর দাও। রফিক গেয়ে ওঠেন “কইরো তোমার ঝলক মারিয়া, ওই রূপ তোমার ঝলক মারিয়া”। তার কণ্ঠের মাধুর্যে আপ্লুত হয়ে পাগল মনির তাকে বুকে টেনে নেন এবং মাথায় হাত রেখে দোয়া করেন : “তুমি একদিন বাংলার প্রখ্যাত বাউল শিল্পী হবে। তোমার নাম দেশে বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে।”
ওস্তাদের সেই আশীর্বাদই যেন সত্যি হয়। ধীরে ধীরে রফিক সরকারের গান ছড়িয়ে পড়ে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও। ইউটিউবে তার শতাধিক অ্যালবামের গান রয়েছে, যার অনেকগুলোই দর্শকের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তার উল্লেখযোগ্য অ্যালবামগুলো হলো : ভালোবাসার প্রতিদান, বড় মায়া লাগে, একবার এসে দেখে যাও, পাগল পাগল সবাই পাগল, আমি তোমার পোষা পাখি। এই অ্যালবামগুলো শুধুমাত্র গানই নয়, যেন শ্রোতার হৃদয়ের স্পর্শ। বাংলা লোকগানে রফিক সরকারের অবস্থান আজ এক সম্মানজনক জায়গায়। তার কেবল গানেই নয়, সংগঠনের ক্ষেত্রেও রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় বাউল সমিতি ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সংগীতের পাশাপাশি তরুণ শিল্পীদের উৎসাহ দিতেও তিনি বরাবরই এগিয়ে আসেন। রফিক সরকার ১৯৮০ সালের ৬ই আগস্ট, কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার ইটাভরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আজগর আলী ও মাতার নাম জামেলা খাতুন।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

বাউল সংগীতে হৃদয় ছোঁয়া কণ্ঠস্বর রফিক সরকারের
- আপলোড সময় : ১৪-০৭-২০২৫ ০৬:৪৮:০০ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৪-০৭-২০২৫ ০৬:৪৮:০০ অপরাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ