
শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিব পদত্যাগ দাবিতে
সচিবালয় এলাকায় রণক্ষেত্র
- আপলোড সময় : ২৩-০৭-২০২৫ ০২:৪২:৪১ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৩-০৭-২০২৫ ০২:৪২:৪১ অপরাহ্ন


* আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে আহত শতাধিক
* শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জোবায়েরকে প্রত্যাহার
এইচএসসি পরীক্ষার সময়সূচি নিয়ে রাত ৩টায় সিদ্ধান্তের ঘটনায় গতকাল বিকেলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষ এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সচিবালয় এলাকায়। এসময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে শতাধিক আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছোড়ে। পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব, জিরোপয়েন্ট ও গুলিস্থান এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এসময় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
জানা গেছে, শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আবরার ও সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘাতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। পুলিশ লাঠিপেটা করে, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের সচিবালয়ের ভেতর থেকে বের করতে পারলেও আশপাশের এলাকায় কয়েক ঘণ্টা ধরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষ চলে। এই সংঘর্ষের মধ্যে আহত ৯০ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছেন। আহতরা হলেন, হাসান (১৮), সেরাতুল (২২), সাকিব (১৯), তানভীর (১৯), রিফাত (১৯), রিজন (২০), সামিয়া (১৮), সামির (১৯), তামিম (১৯), ইমন (২০), সিয়াম (১৮), সাকিল (২০), মেহেদী (২০), সাদমান (১৮), মারুফ (২২), সাকিব (১৮), মাহিন (১৯), রোহান (২০), হাসিব (২০), মুগ্ধ (১৯), মাহিম (২০), হাসিব (১৯), সায়েম (১৮), জিদান (২০), নিহার (২০), রায়হান (২০), রোমান (১৮), প্রান্ত (১৯), নাহিদ (২০), অন্তু (২০), বিশাল (২০), ইমরান (২০), আহনাদ (১৮), মাহি (২০), নাঈম (১৮), সামি (১৮), স্বাধীন (২০), তাসিন (১৮), ইমরান (১৯), ধ্রুব (১৯), শান্ত (২০), তানিম (২০), আজহারুল (২০), তন্ময় (১৯), জিসান (১৯), রাসেকুন (২০), পারভেজ (২০), নাঈম (১৯), বিজয় (১৭), আসাদ (২০), নিহার (২০), নাফিজ (১৮), সাহিন (২০), কিশোর (১৮), তানভীর (১৮), ফারদিন (১৯), শাহরিয়ার (২০), সাঞ্জু (১৯), রাইয়ান (১৯), কলি (১৯), আব্দুল খালেক (৬৫), হাসিব (১৮), সিনান (১৮), তাসফি (২২), মামুন (২০), রিফাত (১৮), আসাদ (২১), মাহিন (২০), আতিক (১৮), তানভীর (১৮), হাবিব হাসান (সাংবাদিক মানবজমিন), কনা (২১), ইমন (১৯), ফাহাদ (১৮), ইয়াসিন আরাফাত শান্ত (২০), শাকিল (২০)। এছাড়াও আরও আহতদের নাম জানা যায়নি।
উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে গত সোমবার যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের দাবি ওঠে। মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতায় পরীক্ষা স্থগিতের সেই ঘোষণা আসে গত সোমবার রাত ৩টার দিকে। অনেক শিক্ষার্থীর কাছে সেই খবর না পৌঁছানোয় কেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসতে হয় তাদের। শিক্ষা উপদেষ্টার বরাতে তথ্য উপদেষ্টা সোমবার গভীর রাতে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি ফেইসবুকে জানান। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে অনেক পরে, যা নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রথমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করতে যায়। সেখান থেকে বেলা দেড়টার দিকে তারা সচিবালয়ের সামনে জড়ো হন।
ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, নূর মোহাম্মদ কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ, কমার্স কলেজ, আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, মিরপুর কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ আরো কিছু শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। শুরুতে তারা সচিবালয়ের তিন নম্বর ফটকের সামনে বিক্ষোভ দেখান। পরে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রের বাকি ফটকগুলোও বন্ধ করে দেন।
সিটি কলেজের শিক্ষার্থীর তানভীর বলেন, গোপালগঞ্জের সামান্য কারণে এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত করেছে। অথচ গত সোমবার এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, বারবার বলার পরও তারা এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত করেনি। রাত ৩টা বাজে যখন স্থগিত করেছে ততক্ষণের সব শিক্ষার্থীরা জানতেও পারেনি। মঙ্গলবার সকালবেলা অনেকের পরীক্ষা দিতে বেরিয়েছে। এগুলো স্পষ্ট দায়িত্ব অবহেলা এবং একঘেয়েমি। আমরা এই শিক্ষা সচিব, শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ চাই। তাদের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে ঘরে ফিরে যাব না।
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান আরেফিন বলেন, প্রশ্নপত্রে ভুল, দায়িত্বে অবহেলাসহ বিভিন্ন কারণে আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ চাইছি। শিক্ষা বোর্ড সংক্রান্ত সব দায়িত্বশীলকে বহিষ্কার করতে হবে। সব শিক্ষা বোর্ডে একই প্রশ্নের পরীক্ষা হতে হবে। মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং সঠিক তথ্য প্রকাশেরও দাবি জানান তিনি। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় সরকার। তাদের অন্যান্য দাবি পর্যালোচনার জন্য কমিটি করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান। কিন্তু শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে তিন নম্বর গেইট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়তে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। তারা সচিবালয়ের ভেতরে রাখা গাড়ি ভাঙচুর শুরু করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর হন। শিক্ষার্থীদের সচিবালয়ের বাইরে সরিয়ে দিতে তারা লঠিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়তে শুরু করেন। কিছু সময় পর সচিবালয়ের সামনের এলাকা অনেকটা ফাঁকা দেখা যায়। তবে পরে জিরো পয়েন্টে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ পাওয়া যায়।
এদিকে গুলিস্তানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দ্বিতীয় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিকেল ৫টার দিকে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেট এলাকায় এই সংঘর্ষ শুরু হয়। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস ছুড়তে দেখা যায়। এসময় পুলিশ ৮-১০টি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং অন্তত দুজনকে আটক করতে দেখা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংঘর্ষে প্রায় ৪০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বর্তমানে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহত শিক্ষার্থীরা জানান, শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা সচিবালযের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে শিক্ষার্থীরা আহত হন।
সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ উপ কমিশনার মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, পরিস্থিতি উত্তপ্ত। নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। আমরা খুবই ব্যস্ত। কথা বলার সময় নাই। বিকেল ৫টার দিকেও শিক্ষার্থীরা গুলিস্তান ও জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছিল। সচিবালয়ের অনেকগুলো ফটক তখন খুলে দেওয়া হয়। আটকা পড়া কর্মকর্তা কর্মচারীরা সেই সুযোগে বেরিয়ে যেতে পারেন।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, সচিবালয়ের সামনে থেকে আহত প্রায় ৯০ জন হাসপাতালে এসেছেন। তাদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানিয়েছি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ