ঢাকা , মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ২৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
ভয়াবহ সহিংসতায় নিহত ২০ খেলাপি ঋণের অর্ধেকই উৎপাদনমুখী শিল্পে তিন বছরে দেশে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৯৫৫৫১ টাকা ডেঙ্গুতে দু’জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৫৭৩ কুমিল্লায় ভাড়া বাসা থেকে মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার প্রযুক্তিনির্ভর বন নজরদারিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ- পরিবেশ উপদেষ্টা জয়পুরহাটে ৫ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ আরও এক হত্যা মামলায় গ্রেফতার সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বরিশালে ৩৩ বছর আগে ডুবে যাওয়া বিদেশি জাহাজ উদ্ধার রাজবাড়ীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ৩ বিআরটিএ অফিসে দালাল চক্রের কাছে গ্রাহকরা জিম্মি রুয়েটে ক্লাস করতে যাওয়া ছাত্রলীগ নেতাকে পুলিশে সোপর্দ এনআইডি সংশোধনের জটিল আবেদন শুনানি ব্যতীত সিদ্ধান্ত নয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বদরুদ্দীন উমরকে শেষ শ্রদ্ধা জলবায়ু মোকাবিলায় সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে- অর্থ উপদেষ্টা প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে পিছিয়ে রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা আজ উৎসব ও শঙ্কার ডাকসু নির্বাচন নির্বাচনে নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের জন্য ঐতিহাসিক পরীক্ষা : আইজিপি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হয়েছে-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এক বছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার নেমেছে অর্ধেকে

  • আপলোড সময় : ২৪-০৭-২০২৫ ০২:৩২:৩৭ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৪-০৭-২০২৫ ০২:৩২:৩৭ অপরাহ্ন
এক বছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার নেমেছে অর্ধেকে
বেনাপোল প্রতিনিধি সড়ক পথে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে বেনাপোল-পেট্রাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন। গত এক বছরে এই পথে পাসপোর্টধারী যাত্রী কমেছে ১০ লাখের অধিক। এতে ভ্রমণ খাতের রাজস্ব কমেছে প্রায় ৯০ কোটি টাকার মতো। বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ পথ দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করেছেন ১১ লাখ ৯০ হাজার ৮২১ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী। এর মধ্যে বেনাপোল ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে গেছেন ৬ লাখ ৬ হাজার ৪১০ জন এবং এসেছেন ৫ লাখ ৮৪ হাজার ৪১১ জন। এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ১১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ রুট দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করেছেন ২২ লাখ ৫ হাজার ৪৭৮ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী। ওই অর্থবছরে রাজস্ব এসেছিল প্রায় ২০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ভিসা জটিলতাসহ নানান কারণে এক বছরে যাত্রী কমেছে ১০ লাখ ১৪ হাজার ৬৫৭ জন, আর রাজস্ব কমেছে প্রায় ৯০ কোটি টাকা। ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ১৪ থেকে ২০ জুলাই এক সপ্তাহে ভারতে যাতায়াত করেছেন ১১ হাজার ৬৫৮ জন। এর মধ্যে ভারতে গেছে, ৬ হাজার ৬৫৫ জন। ভারত থেকে ফিরেছে ৫ হাজার ৩ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্ট যাত্রী ভারতে গেছেন ৪ হাজার ১০৭ জন, ভারতে ফিরে গেছেন দুই হাজার ৫৩৪ জন দেশটির নাগরিক। একই সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছেন দুই হাজার ২৩৪ জন ভারতীয় নাগরিক ও দুই হাজার ৭৫৪ জন বাংলাদেশি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তন পরবর্তী সময়ে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে চিকিৎসা ও স্টুডেন্ট ছাড়া বাংলাদেশিদের সব ভিসা বন্ধ রেখেছে ভারত। এতে কমে গেছে যাত্রী যাতায়াত। বিভিন্ন রুটের পরিবহনগুলো সামান্য কয়েকজন যাত্রী নিয়ে যেতে হচ্ছে গন্তব্যে। এতে তাদের গাড়ির তেল খরচ উঠছে না। ফলে পরিবহন স্টাফদের বেতন ভাতা না দিতে পারায় তারা কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অনেকে। যাত্রীর অভাবে ঈগল পরিবহন ও দেশ ট্রাভেলসসহ কয়েকটি পরিবহন বন্ধ করে দিতে মালিকপক্ষ বাধ্য হয়েছে। ভিসা বন্ধ থাকায় দুই দেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বেনাপোল থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৮ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার কারণে চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষা ও পর্যটনের জন্য বহু বাংলাদেশি এ রুটে যাতায়াত করেন। বন্দর এলাকায় নেই পর্যাপ্ত যাত্রী ছাউনিসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। শৌচাগার, বিশ্রামাগার, নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবকিছু নিয়েই অভিযোগ রয়েছে যাত্রীদের। ভুক্তভোগী পাসপোর্টধারী যাত্রী শামিম হোসেন বলেন, ভ্রমণ কর বাড়লেও সেবা বাড়েনি। রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আরেক পাসপোর্টধারী নির্মল রায় বলেন, ঢাকা থেকে ৫ ঘণ্টায় বেনাপোলে আসা গেলেও ইমিগ্রেশন ও বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয় সকাল সাড়ে ৬টার পর। আগের মতোই দুর্ভোগ রয়ে গেছে। এ ছাড়া সীমান্তের দুই পাড়ের ইমিগ্রেশন, কাস্টমস ও বন্দর ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে যাত্রীদের। দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে ছিনতাই ও প্রতারণার শিকার হওয়ার মতো নেতিবাচক অভিজ্ঞতাও আছে অনেকের। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেও প্রতিকার মেলেনি। তবে ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর ভারত-বাংলাদেশ রাজনৈতিক টানাপোড়েনে ভিসা দেওয়া এক প্রকার বন্ধ করে রেখেছে ভারত সরকার। এখনও স্বাভাবিক হয়নি ভিসা প্রক্রিয়া। এতেই কমে আসে যাত্রী যাতায়াত। বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন বলেন, আমাদের প্রায় ব্যবসার কাজে যেতে হয় ভারতে। ভারতীয় নাগরিকরা সহজে বাংলাদেশের ভিসা পেলেও বাংলাদেশিদের জন্য ভারতীয় ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমাদের ব্যবসায়ীরা। যাত্রীদের বন্দরে কাঙ্ক্ষিত সেবা বাড়েনি। বন্দরে যাত্রী ছাউনি না থাকায় রোদ, বৃষ্টিতে ভিজে যাত্রা করতে হয়। নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় প্রতিনিয়ত পাসপোর্টধারীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন চেকপোস্টে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার মূল কারণ ভারতের ভিসা জটিলতা। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া একরকম বন্ধ করে দেয় ভারত। প্রায় এক বছর হতে চললেও এখন পর্যন্ত এটি স্বাভাবিক হয়নি। ফলে স্বভাবতই ভারতমুখী যাত্রীদের চাপ কমেছে। বেনাপোল চেকপোস্টের মানি চেঞ্জার ব্যবসায়ী আবুল বাশার বলেন, ভারতে চিকিৎসা, ব্যবসায়ী, ছাত্রসহ বিভিন্ন কাজে এ পথ দিয়ে প্রায় ১০ হাজারের ওপরে যাত্রী যাতায়াত করতো। তাতে তাদের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে ডলার কেনাবেচা হতো। এতে করে কর্মচারীসহ নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্যে কেটে যেতো। বর্তমান যে অবস্থা অফিস চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ-ভারত চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক (ল্যান্ডপোর্ট) মতিয়ার রহমান বলেন, ভিসাকেন্দ্রগুলো এখন কেবল জরুরি মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসার জন্য সীমিত পরিসরে ভিসা দিচ্ছে। ব্যবসা ও ভ্রমণ ভিসার যাত্রীদের সংখ্যা নেই বললেই চলে। ভারত ভিসা সেবা বন্ধ রাখায় ব্যবসা, ভ্রমণ, কিংবা অন্য কাজে বাংলাদেশিরা যেমন যেতে পারছেন না। ক্ষতির মুখে পড়ছেন ভারতীয়রাও। আমাদের চেকপোস্টের চেয়ে তাদের চেকপোস্টের অবস্থা আরও করুণ। বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি ইলিয়াস হোসেন মুন্সী বলেন, আগে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ হাজার পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করতেন। তবে ভিসা জটিলতায় বর্তমানে যাত্রীর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩০০-৪০০-এ। এখন যারা পারাপার হচ্ছেন তাদের অধিকাংশ ভারতীয় পাসপোর্টধারী যাত্রী। বেনাপোল স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক কাজী রতন জানান, বিদায়ী (২০২৪-২৫) অর্থবছরে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করেছে ১১ লাখ ৯০ হাজার ৮২১ জন। ভিসা জটিলতা না কাটলে আগামীতে যাত্রী পারাপার শূন্যের কোটায় এসে দাঁড়াবে। এখন যারা যাতায়াত করছেন এদের অধিকাংশই মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসায়। যাত্রী না থাকায় বন্দরের রাজস্ব আয় অনেকটা কমে গেছে। যাত্রী সেবা বাড়াতে বন্দরে যাত্রী ছাউনির জন্য জায়গা অধিগ্রহণের কাজ চলছে। ভারত অংশে ইমিগ্রেশনকেও সেবা বাড়াতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যাত্রী নিরাপত্তার প্রতি সজাগ থাকতে সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য