পাকুটিয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র

বন্ধের পথে লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা

আপলোড সময় : ২৬-০৭-২০২৫ ০২:৫৭:২৬ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৬-০৭-২০২৫ ০২:৫৭:২৬ অপরাহ্ন
ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপর চাপ কমাতে প্রতিটি ইউনিয়নেই প্রায় একটি করে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র (সাব সেন্টার), স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক নামে বেশ কিছু প্রাতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অস্তিত্ব থাকলেও নেই কোন ডাক্তার। রোগী থাকলেও সেবা থেকে বঞ্চিত লাক্ষাধিক মানুষ। অথচ সরকার এখানে লক্ষ লক্ষ টাকার ঔষধ বিনামূল্যে প্রধান সহ কর্মরত স্টাফরা মোটা অংকের বেতন ও সরকারি সকল সুবিধা ভোগ করে আসছেন। সরকারের এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা দুর্নীতি ও সময় মত অফিসে না আসার কারণে সরকারি এসব জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সমাজের হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলো চিকিৎসা সেবা থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষ করে দেউলা বাড়ি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় একমাত্র ভরসা পাকুটিয়া ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ঘাটাইল উপজেলার ১নং দেউলাবাড়ী ইউনিয়নে অবস্থিত হলেও এর পশ্চিমে গোপালপুর পৌরসভার একাংশ পূর্বে সংগ্রামপুর ইউনিয়ন, উত্তরে আলোকদিয়া ইউনিয়ন ও দক্ষিণে ২নং ঘাটাইল ইউনিয়ন এবং মাঝখানে ১নং দেউলাবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা নিতে আসে এখানে। অথচ এক দিকে ডাক্তার সংকট অপরদিকে হাসপাতালের নাজুক পরিবেশের কারণে ভেঙে পড়েছে সম্পূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থা। পূর্বে সাব-সেন্টারটির পিয়ন মো. ফজলুল হক একাই রোগী দেখতেন, কাটা-ছেঁড়া, ড্রেসিং টিউমার অপারেশন সহ রোগীদের ওষুধ দিতেন। বর্তমানে সেও অবসর গ্রহণের পর একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে চিকিৎসা সেবা। ফলে সরকারি এসব প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী একটি সাব-সেন্টারে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার, একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন এমএলএসএস (পিয়ন) থাকার কথা। কিন্তু সাব-সেন্টারটিতে মেডিকেল অফিসার নেই প্রায় দুই যুগ ধরে। যে মেডিকেল অফিসার এখানে নিয়োগ প্রাপ্ত তিনি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সাব- সেন্টারটির মেডিকেল এসিস্ট্যান্ড মো. শামীম আল-মামুন। মো. শামীম আল-মামুন সাব-সেন্টারটির দায়িত্বে থাকলেও নিয়মিত অফিস না করার কারণে স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি মৃতপ্রায় অবস্থা। তিনি নিজেই ওষুধের দোকান খুলে দেদারসে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছেন।
স্থানীয়রা জানান, অফিসের পিয়ন ফজলুকে দিয়েই কোনভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলতেছিল জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটি। গত এক বছর আগে ফজলুর রহমান অবসরে যাওয়ার পর বর্তমানে চিকিৎসাসেবা একেবারেই ভেঙে পড়েছে ওই সাব-সেন্টারটিতে। বর্তমানে সাব-সেন্টারটি ময়লার ভাগাড়, মাছের বাজার, গাড়ির গ্যারেজ আর নেশাখোরদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। হাসপাতালের চারপাশে ঝাড়-জঙ্গল, ময়লা- আর্বজনা থাকার কারণে যে কেউ মল-মূত্র ত্যাগ করায় দুর্গন্ধ সহ নানা কারণে রোগীরা এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যাদের টাকা আছে তারা শহরে গিয়ে ডাক্তার দেখাতে পারলেও নিরুপায় হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষগুলো।এ ছাড়াও নিয়ম বহির্ভূতভাবে হাসপাতালের সামনের জায়গায় নামমাত্র ভাড়ায় দোকান বরাদ্দ দেওয়ার ফলে হাসপাতালটি গিলে ফেলেছে একটি প্রভাবশালী মহল। মাত্র চার হাজার সাতশো টাকায় ২৯ টি দোকান বরাদ্দ দিলেও প্রভাবশালী মহল সেখান থেকে ভাড়া উঠাচ্ছেন প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। এর উপর আবার প্রতিটি দোকানে মোটা অংকের  জামানত রয়েছে। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলেও কর্তৃপক্ষের কোন মাথাব্যথা নেই। অপরদিকে হাসপাতালের প্রবেশদ্বারে মাছের বাজার, গাড়ির গ্যারেজ, সামনে ও পিছনে অপরিতেক্ত পাবলিক টয়লেট থাকার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাসপাতালের সামনে পানির উপর মলমূত্র জমে থাকার কারণে হাঁটাচলা করা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। অথচ হাসপাতালে বাউন্ডারি ঘিরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পাকুটিয়া পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ অবস্থিত। ফলে ছোট ছোট কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অনেক দূর রাস্তা ঘুরে এসে স্কুলে কলেজে যেতে হয়। সরজমিনে গিয়ে  চিকিৎসা নিতে আসা বেশ কয়েকজন রোগী, স্থানীয় লোকজন, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে কথা হলে এমন হতাশার কথা ব্যক্ত করেন তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতালটির সংস্কারসহ একজন ভালো মানের চিকিৎসক দেয়ার জোর দাবি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক রোগীরাই বলেন, ডাক্তার শামীম এখানে আসার পর আমাদের কপাল পুড়েছে। মাসে একবার ওষুধ নিতে এলেও খালি হাতে ফেরত যেতে হয়। ডাক্তার স্থানীয় হওয়ায় মুখ দেখে ওষুধ দেন। আমরা ডাক্তার শামীমের পরিবর্তে একজন ভালো ডাক্তার  চাই।
এ সব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মানুষ নানা কথা বলতেই পারে। আমার এ ব্যপারে কোনো বক্তব্য দেয়ার এখতিয়ার নেই। আমার সুপিরিয়র টিএইচও স্যারের অনুমতি ছাড়া এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারবো না।
দেউলাবাড়ী ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক শহীদুজ্জামান  বলেন, অত্র উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির (সাব সেন্টার) অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এখানে চিকিৎসা দেয়ার মত পরিবেশ ও ভালো মানের কোনো ডাক্তার নেই। আমি এখানে এসে যতটুকুন জেনেছি দীর্ঘদিন যাবত ডাক্তারের অভাবে এলাকার মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু নঈম মোহাম্মদ  সোহেল বলেন, আমি নিজেও জানি ওই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির ভীষণ খারাপ অবস্থা। এখানে একজন মেডিকেল অফিসারের পোস্ট থাকলেও তিনি এখানে অফিস করেন না। আর বর্তমানে যে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আছেন তার পক্ষে বিশাল এই জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা সেবা প্রদান করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করবো। আশা করি অচিরেই এই সমস্যার সমাধান হবে।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net