
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, কর ব্যবস্থায় বড় বাধা দুর্নীতি। জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কর ব্যবস্থায় দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব। গতকাল শনিবার এফডিসিতে কর ব্যবস্থাপনায় সংস্কার নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রতিফলন সঠিকভাবে না হলে কর ব্যবস্থাপনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা কঠিন। বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার কারণেই কর প্রশাসনে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজতর হচ্ছে। যে পরিমাণ কর আদায় হয় তার চেয়ে বেশি কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। আমরা কর আইনগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। এতে সরকার চাইলেই আর কর অব্যাহতি দিতে পারবে না। জাতীয় স্বার্থে শুধুমাত্র সংসদ অর্থ বিলের মাধ্যমে কর অব্যাহতির বিষয় বিবেচনা করতে পারবে। আমদানি- রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাটা আমাদের সমন্বিত ব্যর্থতা। বর্তমান যুগে পণ্যের দাম পৃথিবীর কোন প্রান্তে কত তা বোতাম টিপলেই জানা যায়। ঋণপত্র খোলার সময় ব্যাংকগুলো এবং কাস্টমস এ বিষয়টি পরীক্ষা ও যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে দাম সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারে। যদি প্রকৃত মূল্যে পণ্য আমদানি- রপ্তানি করা না হয়, তাহলে কমপ্লায়েন্ট প্রতিষ্ঠান ও প্রকৃত করদাতারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কর ব্যবস্থায় বড় বাধা দুনীর্তি। জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কর ব্যবস্থায় দুনীর্তি প্রতিরোধ সম্ভব। বাংলাদেশে কোন কর শিক্ষা নেই। কেবল উচ্চ শিক্ষায় দুয়েকটি বিষয়ে কর শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত আছে। কর শিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিটি ক্ষেত্রে কর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, এনবিআর বিলুপ্ত করে করনীতি ও কর ব্যবস্থাপনা এ দুইভাগে বিভক্ত করা নিয়ে যে প্রতিবাদ হচ্ছিল আন্দোলনকারীরা তা বন্ধ করে বুদ্ধিমানের কাজ করেছে। তবে রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবি থাকলে সরকার সেটা বিবেচনায় নেবে বলে আশা করছি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে এনবিআরকে করনীতি ও কর ব্যবস্থাপনা দুভাগে বিভক্ত করলে সুফল পাওয়া যাবে। তবে এ সংস্কারের ফলে প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য বেড়ে রাজস্ব ক্যাডারের সুযোগ কমতে পারে বলে মনে করছেন তারা। এনবিআরের সংস্কারের ফলে রাজস্ব খাতের কর্মকর্তারা যদি তাদের পদন্নতি পদমর্যাদা প্রাপ্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত হন তাহলে এ খাতের সংস্কারে বৈষম্য তৈরি হবে। আয়কর এবং কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে এনবিআরের সদস্য হয়ে থাকে। মেম্বাররা প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা। অর্থাৎ সচিব পদমর্যাদার। রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা ভাবছেন এনবিআর দুই ভাগে বিভক্ত হলে তারা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। একই সঙ্গে প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য বাড়বে। তাই রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের আশঙ্কা দূরীকরণে এনবিআর বিভক্ত হলে প্রস্তাবিত বিভাগদ্বয়ের অর্গানোগ্রাম কেমন হবে তার ধারণা দেওয়া উচিত। ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘কর ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের মাধ্যমেই প্রত্যাশিত রাজস্ব আহরণ সম্ভব’ শীর্ষক ছায়া সংসদে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে গ্রীন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. শাকিলা জেসমিন, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা ও সাংবাদিক আবুল কাশেম। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।