
বাংলাদেশে এখন নির্বাচন ও রাষ্ট্রব্যবস্থাকে ঘিরে জগাখিচুড়ি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কিছু রাজনৈতিক দল এখন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ তো জানেই না- এই পদ্ধতি আসলে কী। এমনকি যারা এ পদ্ধতির পক্ষে মত দিচ্ছেন, তাদের অনেকেও এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখেন না। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জুলাই বিপ্লব: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ জানে, একটি রাজনৈতিক দল একজন প্রার্থী দেবে, সেই প্রার্থীর প্রতীক হবে- ধানের শীষ, কলাপাতা, দাঁড়িপাল্লা কিংবা অন্য কিছু। মানুষ তাকে ভোট দেবে, এবং সে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। এখন কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচন আনুপাতিক হারে হওয়া উচিত। কিন্তু “আনুপাতিক” বলতে কী বোঝায়- সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞেস করলে বেশিরভাগই বলতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা যারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, যারা বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করি, তারা জানি- ভোট হবে, জনগণ ভোট দেবে, যে দল বেশি ভোট পাবে, তারা পার্লামেন্টে যাবে। কিন্তু আমাদের সমাজে মানুষ একজন প্রতিনিধি খোঁজে, একটি নেতৃত্ব খোঁজে, যার কাছে তার প্রয়োজনীয়তা বা দাবি তুলে ধরতে পারে। সেই কাঠামো আনুপাতিক পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এ কারণেই আমরা বলেছি- নিম্নকক্ষের নির্বাচনে আমরা আনুপাতিক পদ্ধতির চিন্তা করি না। বিএনপির নেতাদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, দল পরিচালনায় যারা আসবেন, তাদের সৎ ও আদর্শবান হতে হবে। জিয়া পরিষদ যখন গঠিত হয়, তখন এর মূল উদ্দেশ্য ছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জীবন ও আদর্শ তুলে ধরা। আমি পরিষদের সঙ্গে যখন কথা বলি, বারবার বলি- আপনাদের দায়িত্ব শুধু স্লোগান দেওয়া নয়। আপনাদের কাজ জিয়াউর রহমানের দর্শন ও চিন্তা গবেষণার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে জনগণের সামনে তুলে ধরা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তা জানানো। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজ গোটা জাতি এক গভীর সংকটে। এখন আমরা গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ খুঁজছি। আওয়ামী লীগ যেভাবে দেশের ক্ষতি করেছে, তা সহজে পূরণযোগ্য নয়। তারা বিচারব্যবস্থা, প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য- সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। শুধু তা-ই নয়, রাজনৈতিক দলগুলোকেও দুর্বল করে দিয়েছে। ফখরুল বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে দমন-পীড়নের মাধ্যমে গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর কাঠামোকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। অর্থনীতিকেও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। এখন যে অন্তবর্তীকালীন সরকার ড. ইউনূসের নেতৃত্বে কাজ করছে, তারা একটি সংস্কারমুখী কাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, যা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে- আমরা আগে থেকেই এ প্রয়োজনটা উপলব্ধি করেছি। আমাদের এমন একটি রাষ্ট্রকাঠামো তৈরি করতে হবে, যেখানে ঘুষ-দুর্নীতির সুযোগ না থাকে। বিএনপির এ শীর্ষ নেতা আরও বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রকাঠামোর ভেতর দিয়ে দেশকে এগিয়ে নেওয়া কঠিন। ২০১৬ সালেই আমরা বলেছিলাম- কীভাবে একটি কার্যকর সংস্কারের মাধ্যমে দেশে পরিবর্তন আনা সম্ভব। এখন সংস্কার নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, আমরা অনেক আগেই তা বলেছিলাম। উচ্চকক্ষসহ সংসদ কাঠামো, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, প্রশাসনিক সংস্কার- সবই আমাদের প্রস্তাবে ছিল। তিনি বলেন, ২০২২ সালে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছিলেন, যেখানে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছিল। সংস্কার রাতারাতি সম্ভব নয়। কেউ কেউ ভাবেন- দুই-চারটি বৈঠক করে জনগণকে বার্তা দিলেই সংস্কার হয়ে যাবে। বাস্তবতা তা নয়। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, এটি ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করতে হয়। কাল সকালে আপনি চাইলে পুলিশ ঘুষ খাওয়া বন্ধ করে দেবে- এমনটা আশা করা অবাস্তব। আমলাতন্ত্রকে উন্নয়নের পথে অন্যতম বড় বাধা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমলাতন্ত্র এখন উন্নয়নের পথে অন্যতম প্রধান প্রতিবন্ধক। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে শিক্ষা ও সচেতনতাকে কেন্দ্র করে দেশ পরিচালনায় অংশ নেওয়া। আমাদের যখন নির্বাচনের কথা বলি, অনেকে বলেন- বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়। কিন্তু কেন চাই? কারণ, জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচিত না হলে পার্লামেন্টে যাবে কীভাবে? আর পার্লামেন্টে না গেলে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে কোথা থেকে? বিদেশ থেকে ভাড়া করে আনা কিছু মানুষ দিয়ে দেশ চালানো যায় না।