
জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতি শুরুতে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল সীমাহীন। দিন যত গড়াচ্ছে মানুষের সেই প্রত্যাশায় ভাটা পড়েছে। এরইমধ্যে দলটির বেশ কয়েকজন নেতাদের চাঁদাবাজি প্রকাশে এসেছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছেন। বিশেষ করে দল গঠনের পর থেকেই এনসিপির অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা, নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। এসব নানা কারণে দলটি যেমন ইমেজ সংকটে পড়েছে, তাদের প্রতি সাধারণের আবেদনও দিন দিন কমছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যতটা প্রত্যাশা নিয়ে গঠন করা হয়েছে তরুণদের এ দল, ততটাই হতাশা উপহার দিয়েছে তারা। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। পরে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন দলটির নেতাকর্মীরা।
সর্বশেষ ২৬ জুলাই রাত আটটার দিকে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজি করার অভিযোগে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন, মো. রিয়াদ, মো. সিয়াম, মো. সাদাফ, মো. ইব্রাহীম ও মো. আমিনুল। পুলিশ জানায়, তারা সমন্বয়ক পরিচয় ব্যবহার করে চাঁদাবাজির চেষ্টা করছিলেন।
এ বিষয়ে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান বলেন, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির সময় সমন্বয়ক রিয়াদসহ পাঁচজনকে আমরা আটক করি। তারা শাম্মী আহমেদের বাসায় গিয়ে আগে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন। এর আগে ১০ লাখ টাকাও নিয়েছিলেন। শনিবার তারা বাকি টাকা চাইতে ওই বাসায় গিয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে পুলিশকে খবর দিলে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। বিষয়ে ডিএমপির গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আলী আহমেদ মাসুদ বলেন, আটকদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছে, চার থেকে পাঁচদিন আগে আওয়ামী লীগ নেত্রী সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের গুলশানের বাসায় যান তাকে ধরতে। তখন শাম্মী আহমেদের স্বামী তাদের অফার করে তোমরা আমার ছেলের মতো। আমি তোমাদের কিছু এন্টারটেইনমেন্ট করি, আমার বউকে নিয়ে যেও না। ওই সময় রিয়াদকে পাঁচ লাখ টাকা দেন শাম্মী আহমেদের স্বামী। তিনি বলেন, রিয়াদের বক্তব্য অনুযায়ী ওই পাঁচ লাখ টাকা নেয় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু। এ টাকা দিয়ে তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ মেটায় এবং একটা মোটরসাইকেল কেনে। বাকি টাকা নিতে শনিবার ওই বাসায় যায় তারা। ঘটনার জেরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতা এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) দুই নেতাকে তাদের নিজ নিজ সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। শনিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দফতর সম্পাদক শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বহিষ্কারের কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বহিষ্কৃতদের সাথে কোনো প্রকার সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির ঢাকায় সোহাগ নামে এক যুবককে হত্যার পর থেকে চাঁদাবাজির ইস্যুটি দেশজুড়ে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে একটি ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট করে এনসিপির এক কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনেছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান। গত ১৩ জুলাই বিকেলে নিজের ফেসবুক ওয়ালে ওই ভিডিও পোস্ট করেন তিনি। ভিডিওটি পোস্ট করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। চলতি বছরের ১৪ মে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ধারণ করা ওই ভিডিওতে দেখা যায়, এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য ইমামুর রশিদ ইমন একজন নারীর কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা গ্রহণ করছেন। তখন ওই নারীকে বলতে শোনা যায়, এখানে সাত লাখ টাকা, ১০ লাখ থাকার কথা ছিল ভাইয়া। একটু ক্রাইসিস বুঝেন না! এ সময় সাত লাখ দেওয়ার বিষয়ে এনসিপি নেতা বলেন, ভাইকে বলছেন? জবাবে নারী বলেন, ‘হ্যাঁ বলেছি। ৫ জুলাই চট্টগ্রামে এক আওয়ামী লীগ নেতার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে বিক্ষোভের নামে মব সৃষ্টির অপচেষ্টায় চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, চট্টগ্রামের সদস্যসচিব মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন মবের নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বয়ং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আরেকটি পক্ষ অভিযোগ করেছে, কোটি টাকা চাঁদা চেয়ে না পেয়েই অভিযানের নামে বিয়ে বাড়িতে মব সৃষ্টি করার অপচেষ্টায় বিয়ের উৎসব ম্লান হয়ে যায়। অতিথিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। চট্টগ্রাম ক্লাবের সামনে রাত ১১টায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ চলে রাত ১টা পর্যন্ত। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। উপস্থিত হয় সেনাসদস্যরাও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই বিক্ষোভের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। তবে শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। রাত ১০টার মধ্যে দাবি করা টাকা না দেওয়ায় রাত ১১টা থেকে বিয়ে বাড়িতে বিক্ষোভ করা হয়। এর আগে চট্টগ্রামের নেভি কনভেনশন হলে ফটিকছড়ির আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদুল আনোয়ারের মেয়ের বিয়েতেও অভিযানের নামে রাতভর তাণ্ডব চালানো হয়েছে। ওই বিয়ের অনুষ্ঠান থেকেই মবকারীরা ফরিদুল আনোয়ারকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ ঘটনাও চট্টগ্রামে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। গত ২০ জুন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এক কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে কমিশন বাণিজ্য, তদবির বাণিজ্য, দুর্নীতি, চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠে। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষারের সঙ্গে এক নারীর ফোনালাপ ও তাকে মেসেঞ্জারে পাঠানো বার্তা সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। শুরু থেকেই বলা হয়, ওই নারী এনসিপিরই একজন। তুষারের সঙ্গে ওই অডিওকল ফাঁসের পর সমালোচনার ঝড় ওঠে ফেসবুকে। নেটিজেনরা তুষারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন এবং নারী কণ্ঠটি এনসিপির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাজনূভা জাবীনের বলে সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ছড়ানো হয়। কিন্তু ফাঁস হওয়া অডিওকলে তুষারের সঙ্গে কথা বলা নারী যে তাজনূভা জাবীন নন, এরই মধ্যে সেটা স্পষ্ট হয়েছে। তারপরও তাকে নিয়ে ফেসবুকে বা গণমাধ্যমে নারীবিদ্বেষী প্রচারণা থামেনি।
রাজধানীর গুলশানে চাঁদা দাবির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পাঁচ নেতার গ্রেফতারের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সংগঠন দুটির একসময়ের নেত্রী উমামা ফাতেমা। শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, অভিযুক্তদের নিয়ে যে বিস্ময়ের প্রকাশ দেখা যাচ্ছে, তা হাস্যকর। উমামা লিখেছেন, চাঁদাবাজির ঘটনায় আমার পরিচিত অনেকে এতটাই বিস্মিত হয়েছেন যে মনে হচ্ছে, আমিই বরং সবচেয়ে কম অবাক হয়েছি। এই ছেলেগুলোকে বহুদিন ধরে বিভিন্ন নেতাকে প্রটোকল দিতে দেখেছি সচিবালয় থেকে শুরু করে রাজনৈতিক কর্মসূচি, এমনকি সংঘর্ষের ক্ষেত্রেও তারা সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল। তিনি দাবি করেন, আটককৃতরা দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনের ভেতরে প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং গুলশান-বনানী এলাকায় সক্রিয় একটি গ্যাং কালচারের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন বলে আগে থেকেই অভিযোগ ছিল। পোস্টে তিনি গ্রেফতারকৃত একজনের সঙ্গে নিজের অতীত অভিজ্ঞতার কথাও উল্লেখ করেন। উমামা লিখেছেন, গত ডিসেম্বরে রূপায়ন টাওয়ারে রিয়াদ নামের এই ছেলেটি আমার সামনেই চরম উশৃঙ্খল আচরণ করেছিল। আমরা কয়েকজন নারী তাকে থামানোর চেষ্টা করলে সে উল্টো আমাদের ওপর চড়াও হয়। পরে জেনেছি, তার বিরুদ্ধে আগেও হুমকি, মারধর ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। তার দাবি, এ ধরনের লোকজনের সংগঠনে অবাধ যাতায়াত ছিল এবং কোনো ধরনের প্রশ্ন করলে সংগঠনের ভেতরে চুপচাপ থেকে যাওয়া হতো। চাঁদাবাজির ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে যেসব প্রতিক্রিয়া এসেছে, তারও সমালোচনা করেন তিনি। ‘ইশ! মানুষ কতটাই না নিষ্পাপ!’ লিখে তিনি যোগ করেন, এটা যেন আজ হঠাৎ করেই আবিষ্কৃত হলো যে এই ছেলেরা চাঁদাবাজি করছিল। অথচ সত্য হলো, এটি প্রথম ঘটনা নয় শুধু প্রথমবার তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া পাঁচজনকে সংগঠন দুটির পক্ষ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়েছে। গুলশান থানা পুলিশ বলছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
রাজধানীর গুলশান এলাকায় শনিবার রাতে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজি করার অভিযোগে আটক হওয়া আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান (রিয়াদ) পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য। বিষয়টি জানিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার। রিয়াদের মতো ব্যক্তি কিভাবে স্বরাষ্ট্র বিভাগের পুলিশ সংস্কার কমিশনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সুপারিশ করল এটা সামনে আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। রোববার ফেসবুক পোস্টে মাহিন সরকার বলেন, আব্দুর রাজ্জাক নামের যে ছেলেটা গ্রেফতার হয়েছে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে সে পুলিশ সংস্কার কমিশনের মেম্বার। অর্থাৎ গুরুত্বের বিচারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের সে লিস্টেড ছাত্র প্রতিনিধি। বাংলাদেশে যে কালচার চলে তাতে সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত, এই পরিচয়েই কেউ অর্থ উপার্জন করতে পারে বলে মনে করি। এখানে তার মতো ব্যক্তিকে কিভাবে স্বরাষ্ট্র বিভাগের পুলিশ সংস্কার কমিশনের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সুপারিশ করল এটা সামনে আনা প্রয়োজন। এটা খুব করে চাওয়া আমার। তিনি আরো বলেন, জানে আলম অপু নামক ছেলেটা আগে থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনেক উচ্চবাচ্য করতো, অনেকটা ঔদ্ধত্যের পর্যায়ে। তার বিরুদ্ধে নিজ জেলা জয়পুরহাটে অসংখ্য অভিযোগ ইতিপূর্বে কানে এসেছে, যেহেতু রাজশাহী বিভাগীয় দায়িত্বে আমি ছিলাম। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সেসহ আরো কয়েকজন সেই হত্যাকাণ্ডের কারণ তাদের দাবির সঙ্গে না মেলা সত্ত্বেও তারা আন্দোলন করে এবং স্বরাষ্ট্র দফতরে যাতায়াত বৃদ্ধি করে। এখানে জানে আলম অপু শুধু নয়, ওর আশেপাশে থাকা আরো দুই একজনের নামে এমন অভিযোগ আসলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এনসিপির এই নেতা বলেন, সর্বশেষে ইব্রাহিম হোসেন মুন্না নামক ছেলেটা এই চাঁদাবাজিতে অন্যতম অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এই নাম আসায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারটির যৌক্তিকতা শতভাগ ফুরিয়ে এসেছে। ইতিপূর্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সে ঢাকা মহানগর কমিটি গুছানোতে ভূমিকা রেখেছে। সবচেয়ে বড় কথা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গত কয়েকদিন আগে হওয়া নির্বাচনে সে টপ অর্গানোগ্রামের একটি পদে ইলেকশন করে এবং পরবর্তীতে তার জায়গায় সে না-কি অন্য কাউকে সিলেক্ট করেছে এই অজুহাত দিয়ে সে আর দায়িত্ব নেয়নি। এরকম অদ্ভুতুড়ে ঘটনা ইতিপূর্বে জীবনেও প্রত্যক্ষ করিনি আমি। ইব্রাহিম হোসেন মুন্নার নামটি একেবারে সেন্ট্রালি কানেক্টেড এবং গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলেম অপুও সেন্ট্রাল নেতা। তাদের সঙ্গে অনেকেরই ভালো খাতির থাকা অস্বাভাবিক নয়। রিমান্ডে নিয়ে প্রকৃত কুশীলবদের বের করে আনাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কেননা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার একটি ঐতিহাসিক ব্যানার। আমি ইতিপূর্বেও জানিয়েছি এই ব্যানার আর থাকার প্রয়োজন নেই, যদিও এই ব্যানার প্রতিষ্ঠা করতে আমারও ভূমিকা ছিল। চাঁদাবাজির আভিযোগে গ্রেফতারের পর দুই ছাত্র সংগঠন থেকে ৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাতেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাংগঠনিক নীতিমালা ও শৃঙ্খলাপরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য সাকাদাউন সিয়াম ও সাদাবকে সাংগঠনিক পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। আর পৃথক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের দুই নেতাকে স্থায়ী বহিষ্কারের কথা জানায় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। তারা হলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপু ও সদস্য আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান। আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমানের ফেসবুক প্রোফাইলে তার নামের পাশে ব্র্যাকেটে রিয়াদ লেখা দেখা গেছে। পুলিশ আটক যে পাঁচজনের নাম প্রাথমিকভাবে উল্লেখ করেছিল, তাদের মধ্যে রিয়াদ নামটি ছিল।
রাজধানীর গুলশানে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাম্মী আহমেদের বাড়িতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পাঁচ নেতা পুলিশের হাতে হাতেনাতে আটক হয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে বিভিন্ন মহলে শুরু হয় নানা সমালোচনা। এবার এ নিয়ে মুখ খুললেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন। রোববার নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি চাঁদাবাজির কথা তুলে ধরেছেন। তার পোস্টটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-একজন ডিসির সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি আমাকে জানালেন, জেলা পর্যায়ের সব দফতরে ছাত্র প্রতিনিধির মাধ্যমে সব কাজ করার বিষয়ে আমাদের ওপর উপদেষ্টাদের নির্দেশনা আছে। এ কারণে সব জায়গায় তদারকির জন্য ছাত্রপ্রতিনিধি ঠিক করে দিয়েছি। প্রতিটা মন্ত্রণালয় ও সরকারি দফতরেও একই অবস্থা। তদারকির নামে এসব ছাত্রপ্রতিনিধিরা বদলি বাণিজ্য, প্রমোশন, নিয়োগ ইত্যাদি কাজ করে থাকে। আমি নিজেও এর কয়েকটা প্রমাণ পেয়েছি। একজন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে তিনি আমাকে বলছিলেন, ওমক সমন্বয়করা আমাকে এখানে এনেছে। আমাকে বাদবে, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেবে, এগুলো করে কিচ্ছু করতে পারবে না! শনিবার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতার সঙ্গে কথা হচ্ছিল। সে আমাকে বলল, ভাই, ওমক মিনিমাম কোটি টাকার বেশি কামিয়েছে! আমি বললাম, কী বলো! সে বলে ভাই, গণ-অভ্যুত্থান পরপর এক একটা সমন্বয়ক মানে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা ছিল। আমি নিজেও যখন বিভিন্ন জায়গায় সহ-সমন্বয়ক পরিচয়ে গিয়েছি, একই অনুভূতি হয়েছে! সকালবেলা ইউটিউবে একটা বক্তব্য সামনে আসল। একটু শুনলাম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই গোলাম রাব্বানী স্যারের বক্তব্য, যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী এই হত্যার প্রকাশ্য প্রতিশোধ চায় না, আমি তাকে ঘৃণা করি..... যার বক্তব্য এই দেশের জনগণকে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছিলো... তিনি বলেছেন, ২৪ এর হিরোরা ভিলেনও হয়ে যেতে পারে (কমেন্টে লিংক দিয়ে দেব)! আজকে কেন এই প্রসঙ্গ আসছে? যে তরুণরা মাথার মুকুট ছিল। এখন তাদের নিয়ে এত প্রশ্ন ও অভিযোগ কেন? এগুলোর জন্য দায় কার? দেখেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরে তরুণদের বিভিন্ন দফতরে ছাত্রপ্রতিনিধি বানানো হয়েছে, ডিসি এসপিকে বলা হয়েছে সমন্বকদের নিয়ে কাজ করুন... গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ছাত্রপ্রতিনিধি ১ কোটি টাকা চাঁদাবাজির জন্য গ্রেফতার হয়েছে। অপরিসীম ক্ষমতা এই তরুণদের পথভ্রম করেছে। যার জন্য দায়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপদেষ্টা পরিষদ। পুরো বিপ্লবকে বিপথে পরিচালিত করেছে এই এনজিও ব্যক্তিত্ব, বৃদ্ধ আমলা ও কতিপয় সুশীল, মানবাধিকার কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আসছে ৮ আগস্ট বিপ্লব বেহাত দিবস পালন করে তাদেরকে সম্মানিত করা হোক!
নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে পদত্যাগ করেছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক এবং কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র খাদিজা আক্তার কেয়া। শনিবার বিকেলে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে এক পোস্টের মাধ্যমে তিনি এই ঘোষণা দেন। রোববার পোস্টের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন খাদিজা আক্তার কেয়া। খাদিজা আক্তার কেয়া কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার উত্তর ত্রিশ গ্রামের বাসিন্দা মৃত কবির হোসেনের মেয়ে। তিনি কোম্পানিগঞ্জ বদিউল আলম ডিগ্রি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কুমিল্লার জেলা সমন্বয়ক সাকিব হোসাইন বলেন, কেয়ার পদত্যাগের বিষয়টি জেনেছি। তবে আমরা এখনও আনুষ্ঠানিক চিঠি (পদত্যাগ পত্র) পাইনি।