
নোমান হাসান
৩৭০ ধারা বিলোপের পর ব্যাপক অবকাঠামোর উন্নয়নের হাত ধরে বদলে গিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের চেহারা। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপ করে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের নজরদারিতে শুরু করে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। সেই কর্মযজ্ঞের সুফল এখন ভোগ করছেন কাশ্মীরের মানুষ। পূর্ণাঙ্গ রাজ্যকে ভেঙে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ার পরই সেখানে নিত্যদিনের কার্ফিউ বা জঙ্গিবাদীদের সন্ত্রাস এখন নেই বললেই চলে। সেখানকার স্থানীয় মানুষই প্রতিহত করছেন প্রতিবেশী পাকিস্তানের যাবতীয় নাশকতার ছক। নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁরা এখন রাজ্যে চাইছেন শান্তি। সেই শান্তির হাত ধরেই গড়ে উঠছে নতুন নতুন অবকাঠামো।
কাশ্মীরের অবকাঠামো উন্নয়নের সবচেয়ে বড় উদাহরন চেনাব সেতু। চেনাব নদীর ওপর গড়ে উঠেছে বিশ্বের সর্বোচ্চ এই আর্চ রেলসেতু। ইতিমধ্যেই চেনাব সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই সেতু কাশ্মীরের আর্থসামাজিক অবস্থাকেই বদলে দিচ্ছে। চন্দ্রভাগা নদীর ৩৫৯ মিটার উঁচুতে তৈরি চেনাব আর্চ রেলসেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩১৫ মিটার। চেনাব সেতু এখন কাশ্মীরিদের গর্ব। ভূমিকম্পেও অটল থাকবে এই সেতু। সেখানে শান্তি থাকায় দ্রুত গতিতে চলছে অবকাঠামোর উন্নতি। কাশ্মীরে মোট ৪৬ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত উন্নয়নমূলক প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
রেল ছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিরাট বিরাট সড়ক। হাটবাজার, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ প্রভৃতি গড়ে উঠছে অতি দ্রুত। ভারত স্বাধীনতার বহু যুগ কেটে গেলেও কাশ্মীরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ২০১৯ সালের আগে খুবই খারাপ ছিল। কিন্তু গত ৬ বছরে আমূল বদলে গিয়েছে উপত্যকার সমস্ত অবকাঠামো। উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেল প্রকল্প ছাড়াও গড়ে উঠেছে আরও বহু প্রকল্প। ভারত নেট প্রকল্পে মার্চেই ৭ হাজার ৭৮৯ ফাইবার-টু-দ্য-হোম সংযোগ পৌঁছে দেওয়া বয়েছে। ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বিমানবন্দরেরও। ২০১৯ সালে যেখানে ৩৫টি বিমান প্রতিদিন যাতায়াত করতো এখন সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ১২৫।
কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছেন নারীরা এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষজন। কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়়ে উঠছে উপত্যকায়। বর্তমানে ৮৩৭টি নতুন শিল্প উদ্যোগ চালু আছে। এরমধ্যে ৩০২টি প্রতিষ্ঠানই নারীদের দ্বারা পরিচালিত। শ্রীনগর শহর এখন স্মার্ট সিটি প্রকল্পের আওতায় আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষ এ ফলে উপকৃত হচ্ছেন। গত পাঁচ বছরে জম্মু ও কাশ্মীরে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার কোটি টাকার লগ্নি এসেছে। কাশ্মীর এখন উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে।
উন্নয়ন ও শান্তির পথ ধরে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এখন বিনিয়োগ, অবকাঠামো, পর্যটন, সমাজকল্যাণ এবং কৃষি উন্নয়নে গোটা ভারতের কাছে আদর্শ উদাহরণ। জম্মু ও কাশ্মীরের সরকারি তথ্য অনুযায়ী গত ছয় বছরে প্রায় দেড় লাখ নতুন প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প নির্মাণ এবং সংগ্রহ কার্যক্রমে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক, প্রকৌশলী, পরিবহনকারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েই চলেছে কাশ্মীরে। ১ হাজার ১৬৯ লক্ষ কর্মদিবস তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানি ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে উন্নয়নের মাধ্যমে ভারত সরকার কাশ্মীরের উন্নয়ন চায় বলেই বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। ভারত সরকার ২৮ হাজার ৪০০ কোটি রুপির নতুন প্রকল্পে ৪ লাখ ৫০ হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে। রিয়েল এস্টেট, অবকাঠামো, পর্যটন, স্বাস্থ্যসেবা, জনশক্তি কর্মসংস্থান খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্যে একাধিক আন্তর্জাতিক চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে।
অবকাঠামোর ক্ষেত্রে রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পর্যটন, কৃষি, দক্ষতা উন্নয়নে ৫৮ হাজার ৪৭৭ কোটি রুপির ৫৩টি প্রকল্প গড়ে উঠেছে। এখন সমাপ্তির বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে থমকে থাকা ১ হাজার ৯৮৩ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকার ১ হাজার ১৯২টি প্রকল্পের কাজে ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রকল্পগুলি রূপায়ণ ১০ থেকে ২০ বছর আটকে ছিল। ১ হাজার ৮৫৮টি সড়ক এবং ৮৪টি সেতু-সহ মোট ১১ হাজার ৫১৭ কিমি সড়ক নির্মাণ ৩৭০ ধারা বিলোপের প্রথম তিন বছরেই শেষ হয়েছে।
কাশ্মীরকে উত্তর ভারতের প্রধান শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে হাতে নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ প্রকল্প। বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির আধুনিকীকরণের পাশাপাশি গড়ে তোলা হচ্ছে প্রচুর স্কুল-কলেজ। আইআইটি, আইআইএম-এর মতো প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যেই পড়াশুনো শুরু হয়ে গিয়েছে। গত ছয় বছরে স্থাপিত হয়েছে ২২টি মহাবিদ্যালয় এবং দুটি নতুন সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়। তৃণমূলস্তরে বৃত্তি প্রকল্পের মাধ্যমে গরীব ও সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের উতসাহিত করছে সরকার।
দ্রুত ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রকল্প (পিএমডিপি) হাতে নেয় ভারত সরকার। ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৬৫৩ কোটি রুপি খরচ করে ২১টি বড় প্রকল্প গড়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা বাস্তবায়ণে গোটা দেশের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীর ২০১৬-১৭ সালে ৯ নম্বরে থাকলেও ২০২০-২১ সালে ৩ নম্বরে উন্নিত হয়।
সৌভাগ্য প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৪০৫টি বাড়িতে বিদ্যুতায়ণের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীর ১০০ শতাংশ বাসায় বিদ্যুতায়ণের কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ণে সক্ষম হয়েছে। কাশ্মীরের বিদ্যুত চাহিদা মেটাতে ৩৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুত প্রকল্পের কাজ চলছে।
স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে কাশ্মীরে। গ্রামীণ এলাকার স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। পরিবার পিছু ৫ লাখ রুপির স্বাস্থ্য বিমা চালু হয়েছে উপত্যকায়। এছাড়াও জাতীয় স্বাস্থ্যবিমার সুবিধাও পাচ্ছেন তারা। এইমস বা অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ মেডিকাল সায়েন্স গড়ে উঠেছে সেখানে। আরও দুটি মেডিকাল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। ক্যান্সার গবেষণা কেন্দ্রও রয়েছে কাশ্মীরে।
তথ্য প্রযুক্তি, অবকাঠামো, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, উত্পাদন, আতিথেয়তা, প্রতিরক্ষা, দক্ষতা শিক্ষা এবং পর্যটন খাতে বিনিয়োগের জন্য ১৫ বছরের কর ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। ৩১টি কোম্পানি বিনিয়োগ করতে চাইছে একসময়ে জঙ্গিবাদী কার্যকলাপের জন্য কূখ্যাত কাশ্মীরে। এরমধ্যে রয়েছে রিলায়েন্স অ্যামুনিশন লিমিটেড, শ্রী সিমেন্টস লিমিটেড, ডালমিয়া সিমেন্ট (ভারত) লিমিটেড, কৃষ্ণ হাইড্রো প্রজেক্টস প্রাইভেট লিমিটেড, ইউনিভার্সাল সাকসেস এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর, চিমা বয়লার, ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস, প্রকাশ অ্যামিউজমেন্ট রাইডস অ্যান্ড ফান ওয়ার্ল্ড প্রাইভেট লিমিটেড, বেসটেক ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, এলএমএন এবং সফটওয়্যার প্রাইভেট লিমিটেড, কিউর ফিট হেলথ কেয়ার প্রাইভেট লিমিটেড, প্রিসিশন ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিস্টেম, এস ইন্টারন্যাশনাল প্রভৃতি নামী সংস্থাও।
কাশ্মীরিরা এখন গ্রেনেড, বোমা, গুলি ছেড়ে এখন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প রূপায়ণে ব্যস্ত। তাঁরা বুঝে গিয়েছেন, শান্তি না থাকলে উন্নতি হবে না। তাই নিজেদের সুন্দর ভবিষ্যতের স্বার্থে হিংসার বদলে এখন উন্নয়নেই ব্যস্ত সেখানকার মানুষ। আর তাই পর্যটকদের মতো বিনিয়োগকারীদের অনেকেরই এখন ডেস্টিনেশন ভূ-স্বর্গ।
নোমান হাসান, সিনিয়র সাংবাদিক
৩৭০ ধারা বিলোপের পর ব্যাপক অবকাঠামোর উন্নয়নের হাত ধরে বদলে গিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের চেহারা। ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বিলোপ করে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের নজরদারিতে শুরু করে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। সেই কর্মযজ্ঞের সুফল এখন ভোগ করছেন কাশ্মীরের মানুষ। পূর্ণাঙ্গ রাজ্যকে ভেঙে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ার পরই সেখানে নিত্যদিনের কার্ফিউ বা জঙ্গিবাদীদের সন্ত্রাস এখন নেই বললেই চলে। সেখানকার স্থানীয় মানুষই প্রতিহত করছেন প্রতিবেশী পাকিস্তানের যাবতীয় নাশকতার ছক। নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁরা এখন রাজ্যে চাইছেন শান্তি। সেই শান্তির হাত ধরেই গড়ে উঠছে নতুন নতুন অবকাঠামো।
কাশ্মীরের অবকাঠামো উন্নয়নের সবচেয়ে বড় উদাহরন চেনাব সেতু। চেনাব নদীর ওপর গড়ে উঠেছে বিশ্বের সর্বোচ্চ এই আর্চ রেলসেতু। ইতিমধ্যেই চেনাব সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই সেতু কাশ্মীরের আর্থসামাজিক অবস্থাকেই বদলে দিচ্ছে। চন্দ্রভাগা নদীর ৩৫৯ মিটার উঁচুতে তৈরি চেনাব আর্চ রেলসেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩১৫ মিটার। চেনাব সেতু এখন কাশ্মীরিদের গর্ব। ভূমিকম্পেও অটল থাকবে এই সেতু। সেখানে শান্তি থাকায় দ্রুত গতিতে চলছে অবকাঠামোর উন্নতি। কাশ্মীরে মোট ৪৬ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত উন্নয়নমূলক প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
রেল ছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিরাট বিরাট সড়ক। হাটবাজার, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ প্রভৃতি গড়ে উঠছে অতি দ্রুত। ভারত স্বাধীনতার বহু যুগ কেটে গেলেও কাশ্মীরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ২০১৯ সালের আগে খুবই খারাপ ছিল। কিন্তু গত ৬ বছরে আমূল বদলে গিয়েছে উপত্যকার সমস্ত অবকাঠামো। উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেল প্রকল্প ছাড়াও গড়ে উঠেছে আরও বহু প্রকল্প। ভারত নেট প্রকল্পে মার্চেই ৭ হাজার ৭৮৯ ফাইবার-টু-দ্য-হোম সংযোগ পৌঁছে দেওয়া বয়েছে। ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বিমানবন্দরেরও। ২০১৯ সালে যেখানে ৩৫টি বিমান প্রতিদিন যাতায়াত করতো এখন সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ১২৫।
কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছেন নারীরা এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষজন। কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়়ে উঠছে উপত্যকায়। বর্তমানে ৮৩৭টি নতুন শিল্প উদ্যোগ চালু আছে। এরমধ্যে ৩০২টি প্রতিষ্ঠানই নারীদের দ্বারা পরিচালিত। শ্রীনগর শহর এখন স্মার্ট সিটি প্রকল্পের আওতায় আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষ এ ফলে উপকৃত হচ্ছেন। গত পাঁচ বছরে জম্মু ও কাশ্মীরে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার কোটি টাকার লগ্নি এসেছে। কাশ্মীর এখন উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে।
উন্নয়ন ও শান্তির পথ ধরে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এখন বিনিয়োগ, অবকাঠামো, পর্যটন, সমাজকল্যাণ এবং কৃষি উন্নয়নে গোটা ভারতের কাছে আদর্শ উদাহরণ। জম্মু ও কাশ্মীরের সরকারি তথ্য অনুযায়ী গত ছয় বছরে প্রায় দেড় লাখ নতুন প্রকল্পের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প নির্মাণ এবং সংগ্রহ কার্যক্রমে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক, প্রকৌশলী, পরিবহনকারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েই চলেছে কাশ্মীরে। ১ হাজার ১৬৯ লক্ষ কর্মদিবস তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানি ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে উন্নয়নের মাধ্যমে ভারত সরকার কাশ্মীরের উন্নয়ন চায় বলেই বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। ভারত সরকার ২৮ হাজার ৪০০ কোটি রুপির নতুন প্রকল্পে ৪ লাখ ৫০ হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে। রিয়েল এস্টেট, অবকাঠামো, পর্যটন, স্বাস্থ্যসেবা, জনশক্তি কর্মসংস্থান খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্যে একাধিক আন্তর্জাতিক চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে।
অবকাঠামোর ক্ষেত্রে রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পর্যটন, কৃষি, দক্ষতা উন্নয়নে ৫৮ হাজার ৪৭৭ কোটি রুপির ৫৩টি প্রকল্প গড়ে উঠেছে। এখন সমাপ্তির বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে থমকে থাকা ১ হাজার ৯৮৩ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকার ১ হাজার ১৯২টি প্রকল্পের কাজে ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রকল্পগুলি রূপায়ণ ১০ থেকে ২০ বছর আটকে ছিল। ১ হাজার ৮৫৮টি সড়ক এবং ৮৪টি সেতু-সহ মোট ১১ হাজার ৫১৭ কিমি সড়ক নির্মাণ ৩৭০ ধারা বিলোপের প্রথম তিন বছরেই শেষ হয়েছে।
কাশ্মীরকে উত্তর ভারতের প্রধান শিক্ষাকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে হাতে নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ প্রকল্প। বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির আধুনিকীকরণের পাশাপাশি গড়ে তোলা হচ্ছে প্রচুর স্কুল-কলেজ। আইআইটি, আইআইএম-এর মতো প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যেই পড়াশুনো শুরু হয়ে গিয়েছে। গত ছয় বছরে স্থাপিত হয়েছে ২২টি মহাবিদ্যালয় এবং দুটি নতুন সাংস্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয়। তৃণমূলস্তরে বৃত্তি প্রকল্পের মাধ্যমে গরীব ও সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের উতসাহিত করছে সরকার।
দ্রুত ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রকল্প (পিএমডিপি) হাতে নেয় ভারত সরকার। ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৬৫৩ কোটি রুপি খরচ করে ২১টি বড় প্রকল্প গড়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা বাস্তবায়ণে গোটা দেশের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীর ২০১৬-১৭ সালে ৯ নম্বরে থাকলেও ২০২০-২১ সালে ৩ নম্বরে উন্নিত হয়।
সৌভাগ্য প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৪০৫টি বাড়িতে বিদ্যুতায়ণের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীর ১০০ শতাংশ বাসায় বিদ্যুতায়ণের কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ণে সক্ষম হয়েছে। কাশ্মীরের বিদ্যুত চাহিদা মেটাতে ৩৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুত প্রকল্পের কাজ চলছে।
স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে কাশ্মীরে। গ্রামীণ এলাকার স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। পরিবার পিছু ৫ লাখ রুপির স্বাস্থ্য বিমা চালু হয়েছে উপত্যকায়। এছাড়াও জাতীয় স্বাস্থ্যবিমার সুবিধাও পাচ্ছেন তারা। এইমস বা অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ মেডিকাল সায়েন্স গড়ে উঠেছে সেখানে। আরও দুটি মেডিকাল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। ক্যান্সার গবেষণা কেন্দ্রও রয়েছে কাশ্মীরে।
তথ্য প্রযুক্তি, অবকাঠামো, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, উত্পাদন, আতিথেয়তা, প্রতিরক্ষা, দক্ষতা শিক্ষা এবং পর্যটন খাতে বিনিয়োগের জন্য ১৫ বছরের কর ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। ৩১টি কোম্পানি বিনিয়োগ করতে চাইছে একসময়ে জঙ্গিবাদী কার্যকলাপের জন্য কূখ্যাত কাশ্মীরে। এরমধ্যে রয়েছে রিলায়েন্স অ্যামুনিশন লিমিটেড, শ্রী সিমেন্টস লিমিটেড, ডালমিয়া সিমেন্ট (ভারত) লিমিটেড, কৃষ্ণ হাইড্রো প্রজেক্টস প্রাইভেট লিমিটেড, ইউনিভার্সাল সাকসেস এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর, চিমা বয়লার, ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস, প্রকাশ অ্যামিউজমেন্ট রাইডস অ্যান্ড ফান ওয়ার্ল্ড প্রাইভেট লিমিটেড, বেসটেক ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, এলএমএন এবং সফটওয়্যার প্রাইভেট লিমিটেড, কিউর ফিট হেলথ কেয়ার প্রাইভেট লিমিটেড, প্রিসিশন ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিস্টেম, এস ইন্টারন্যাশনাল প্রভৃতি নামী সংস্থাও।
কাশ্মীরিরা এখন গ্রেনেড, বোমা, গুলি ছেড়ে এখন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প রূপায়ণে ব্যস্ত। তাঁরা বুঝে গিয়েছেন, শান্তি না থাকলে উন্নতি হবে না। তাই নিজেদের সুন্দর ভবিষ্যতের স্বার্থে হিংসার বদলে এখন উন্নয়নেই ব্যস্ত সেখানকার মানুষ। আর তাই পর্যটকদের মতো বিনিয়োগকারীদের অনেকেরই এখন ডেস্টিনেশন ভূ-স্বর্গ।
নোমান হাসান, সিনিয়র সাংবাদিক