উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু, প্রধান কাজ নির্বাচন আয়োজন

আপলোড সময় : ০৮-০৮-২০২৫ ১২:১৫:০৪ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৮-০৮-২০২৫ ১২:১৫:০৪ অপরাহ্ন
* ১১টি সংস্কার কমিশনের ১৬টি প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয়েছে
* উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৭৮.৪১ শতাংশ
* বিশ্ব পর্যটন দিবস ‘গ’ শ্রেণির পরিবর্তে ‘খ’ শ্রেণিতে উদ্যাপনের প্রস্তাব


আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করাই অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথম ও প্রধান কাজ বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্বৃত্ত করে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
প্রেস সচিব বলেন, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, গত ৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে। এর পর দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, তা নিশ্চিত করাই এখন সরকারের প্রধান দায়িত্ব। তিনি জানান, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় জীবনবাজি রেখে শিক্ষক মেহেরিন চৌধুরী শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তার নামে একটি অ্যাওয়ার্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে।
শফিকুল আলম বলেন, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এছাড়া প্রাইমারি কাজগুলোর মধ্যে আমাদের আরও দুটো কাজ আছে। সংস্কার-সংস্কারের বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ একটা সংবাদ সম্মেলন করবেন। তিনি আরও হাইলাইট করবেন জুলাই চার্টারে, বিশেষ করে সংবিধানের সংস্কারের যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো নিয়ে তাদের কি কি অগ্রগতি আছে সে বিষয়ে জানাবেন। আর হচ্ছে বিচার। বিচার নিয়ে প্রায়ই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আপনাদের জানান। সামনে তিনিও আপনাদের নিয়মিত আপডেট দেবেন, বলেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, বিচারের ক্ষেত্রে বলতে পারি চারটি মামলার বিচার শুরু হয়েছে। ২৭টি অনুসন্ধান পর্যায়ে আছে। ১৬টির চার্জশিট হয়েছে। পুরো বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদ প্রতিনিয়তই আপডেট নিচ্ছেন সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে দুটি শুভেচ্ছা প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। কারণ তিনি সফলভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে যে আলোচনা সেটি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, এখন যারা আমাদের প্রতিযোগী তাদের থেকে আমরা মোটামুটি একই বা ভালো অবস্থানে আছি। তিনি বলেন, একই সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদ সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তাফা সরয়ার ফারুকীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। জুলাইয়ের ৩৬ দিনের যে অনুষ্ঠানমালা, তিনি নিজে থেকে দাঁড়িয়ে থেকে সেটির নেতৃত্ব দিয়েছেন। এটা সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
১১টি সংস্কার কমিশনের ১৬টি প্রস্তাব বাস্তবায়ন হয়েছে: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ক্ষমতা গ্রহণের পর দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনসহ মোট ১১টি কমিশন গঠন করে দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সবগুলো সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এসব প্রতিবেদনে থাকা আশু বাস্তবায়নযোগ্য ১২১টি সুপারিশের মধ্যে ১৬টি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া, ৮৫টি সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ১১টি সংস্কার কমিশনের আশু বাস্তবায়ন করার যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সে বিষয়ে আজকে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। আইন উপদেষ্টা ১২১টি সুপারিশ আশু বাস্তবায়নযোগ্য বলে চিহ্নিত করেন। তার মধ্যে ১৬টি বাস্তবায়ন করা হয়েছে, ৮৫টি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, ১০টি আংশিক বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং আরও ১০টি বাস্তবায়নযোগ্য কিনা তা বিবেচনা করা হচ্ছে।
উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৭৮.৪১ শতাংশ: অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর গত এক বছরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৭৮ দশমিক ৪১ শতাংশ, যা এ যাবতকালে সর্বোচ্চ। এদিন সচিবালয়ে বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার (গত বছরের ৮ আগস্ট) পর থেকে গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৪১টি উপদেষ্টা পরিষদ-বৈঠকে ১৯৪টি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব বৈঠকে নেওয়া ৩১৫টি সিদ্ধান্তের মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে ২৪৭টি (বাস্তবায়ন হার ৭৮ দশমিক ৪১ শতাংশ)।? মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর এটি যে কোনো সরকারের জন্য একটি রেকর্ড। প্রেস সচিব বলেন, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন আছে ৬৮টি। এ সময়ে অধ্যাদেশ প্রণয়ন হয়েছে ৫৬টি। অধ্যাদেশ প্রক্রিয়াধীন আছে ১০টি। নীতি, নীতিমালা, কর্মকৌশল, কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন হয়েছে ছয়টি। দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক চুক্তি প্রটোকল অনুমোদন বা অনুসমর্থন হয়েছে ২৩টি। উপদেষ্টা পরিষদের জন্য সারসংক্ষেপ উপস্থাপন হয়েছে ১৯৪টি।
বিশ্ব পর্যটন দিবস ‘গ’ শ্রেণির পরিবর্তে ‘খ’ শ্রেণিতে উদ্যাপনের প্রস্তাব: প্রতি বছর ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস ‘গ’ শ্রেণির পরিবর্তে ‘খ’ শ্রেণির দিবস হিসেবে উদ্?যাপনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এতে বলা হয়, প্রতি বছর ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস ‘গ’ শ্রেণির পরিবর্তে ‘খ’ শ্রেণির দিবস হিসেবে উদ্?যাপনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এটির উদ্যোক্তা ছিল বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উপদেষ্টাদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত কয়েকটি নির্ধারিত বিষয়ের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এদিন গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির নাম বদলে ‘ইউনিভার্সিটি অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি বাংলাদেশ’ হচ্ছে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম পরিবর্তন করতে আজকের বৈঠকে ‘গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে প্রতিষ্ঠিত বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নাম ছিল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ’। তবে অন্তর্বর্তী সরকার গত ফেব্রুয়ারি মাসে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি করে। গাজীপুর ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি নামকরণের পর থেকেই ক্ষুব্ধ হন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা প্রথমে বাংলাদেশ ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি নামের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। দাবি আদায়ে স্মারকলিপি, মানববন্ধন, শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা, ‘রেল ব্লকেড’ ‘শাটডাউন’সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। এর মধ্যে আশ্বাসের ভিত্তিতে কখনো কখনো কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। দাবি আদায় না হওয়ায় এরপর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা। অনশনের মধ্যে গত ২১ মে ইউজিসির পাবলিক ইউনিভার্সিটি ডিভিশনের সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরারের সঙ্গে সভা করে নাম পরিবর্তনের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নেন।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net