* আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় স্থানে রূপ নিয়েছে মঞ্চটি * সার্বক্ষণিক রয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা

নতুনরূপে সেজেছে উত্তরার মুগ্ধ মঞ্চ

আপলোড সময় : ১৫-০৮-২০২৫ ০১:১৯:৫০ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৫-০৮-২০২৫ ০১:১৯:৫০ অপরাহ্ন
তুরাগ  থেকে মনির হোসেন জীবন
রাজধানীর উত্তরায় গেল জুলাই-২০২৪ ছাত্র আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিল মীর মুগ্ধ। আর তার নামের সঙ্গে মিল রেখেই  উত্তরা পশ্চিম থানার ৭নং সেক্টর লা-বাম্বার মোড়ে তৈরি করা হয়েছে একটি মঞ্চ। ইতোমধ্যে সেটি শহীদ মীর মুগ্ধ মঞ্চ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। বর্তমানে নতুন করে লাল-সবুজসহ নানান রঙ্গের রং দিয়ে রঙিন করে অনেকটাই ঢেলে সাজানো হয়েছে মুগ্ধ মঞ্চটি। প্রতিদিন বিকেল ও রাতের বেলায় মঞ্চটিকে ঘিরে বিভিন্ন পেশার মানুষের আগমন ঘটে। যার ফলে উত্তরার সকল পেশার মানুষের কাছে  মীর মুগ্ধ মঞ্চটি আকর্ষণীয় জায়গা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এছাড়া সর্বসাধারণ ও উত্তরার সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে বহুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মুগ্ধ মঞ্চটি । জনসাধারণ তথা আগমনরত মানুষের নিরাপত্তা দিতে মুগ্ধ মঞ্চ এলাকায় সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা বলয় ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। 
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র  জানিয়েছে, কিছু দিন আগে  দুর্বৃত্তরা উত্তরায় শহীদ মীর মুগ্ধের প্রতিকৃতিতে কালো কালি দিয়ে ঢেকে দেয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে ওই সময় পুরো উত্তরার ছাত্র সমাজ দিবা রাত্রী মশাল মিছিল ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছিল। সেই সময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার জন্য  উত্তরায় ছুটে আসেন সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা। সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য নানান কর্মসূচি ও পালন করেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। রাতের আঁধারে পরিকল্পিতভাবে মীর মুগ্ধের ছবির উপর কালো কালি মাখানোর কয়েকদিন পর এটিকে সুন্দর করে নতুন রূপ দিতে উদ্যোগ নেন স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। এর মধ্যে শিল্পী শিবলী হাওলাদার, মনীষা মাফরুহা, শাহ মঈন সালেহ, মোহাম্মদ নাবিল, ফয়সাল মাহমুদ, ইমনসহ আরো অনেকে। এরপর শিল্পীরা এটিকে নতুন করে রং তুলির ছোঁয়ায় রাঙিয়ে তুলেছেন মঞ্চটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে তথ্য অনুসন্ধান ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরায়  মুগ্ধ মঞ্চ কমিটির উদ্যোগে শিল্পী শিবলী হাওলাদারের নেতৃত্বে শহীদ মীর মুগ্ধ মঞ্চের নতুন ডিজাইন করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)’র নিজ অর্থায়নে শহীদ মীর মুগ্ধ মঞ্চের স্থায়ী ডিজাইনের কাজ অচিরেই শুরু করা হবে। একই সাথে ডিএনসিসি’র পক্ষ থেকে উত্তরার আজমপুরে স্থাপিত হতে যাচ্ছে জুলাই শহীদ স্মৃতি চত্বর।
একটি সূত্র বলছে, কোটা সংস্কার দাবিতে উত্তরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে  উত্তরা-বিমানবন্দর মহাসড়কে কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে ডেকে ডেকে পানি খাওয়ানো মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছিল। গত ১৮ জুলাই ২০২৪  উত্তরার আজমপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন কুমিল্লা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছেলে মীর মুগ্ধ। পানি লাগবে পানি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুগ্ধের এই মুখের কথাটি কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে দাগ কেটেছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের হরেক রকম গ্রাফিতি স্লোগান, দেয়াল লেখনি ও আল্পনার ছোঁয়ায় এখনো রঙিন হয়ে আছে পুরো উত্তরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা বলছে,  গণিতে স্নাতক মুগ্ধ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ পড়ছিলেন।  আর তার ছোট ভাই স্নিগ্ধ আইন বিভাগে স্নাতক। খাওয়া ঘুমানো একসঙ্গে, পড়াশোনা থেকে শুরু করে পোশাক ভাগাভাগি, যমজ দুই ভাই মুগ্ধ এবং স্নিগ্ধ যেন জন্ম থেকেই ছিলেন অবিচ্ছেদ্য। তারা অনলাইন ফ্রিল্যান্সার হাব ফাইভারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কেটিং করছিলেন। মুগ্ধের মৃত্যুর সময় তার গলায় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড, হাতে ছিলো পানির বোতল।
মুগ্ধ মঞ্চের উদ্যোক্তারা বলছে, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ নিহত হওয়ার ঠিক দুই দিন আগে গেল ১৬ জুলাই, ২০২৪ ইং তারিখে  রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিল আবু সাঈদ। উত্তরায় শহীদ মীর মুগ্ধ মঞ্চটি সারা জীবন টিকে থাকবে। শহীদের রক্তের দাগ কখনও মুছে ফেলা যাবে না দাবি তাদের।
ডিএনসিসি ও ইতিহাস থেকে জানা যায়, নগরবাসীর সাংস্কৃতিক কাঠামো ও অনুষ্ঠান করার জন্য উন্মুক্ত মুগ্ধ মঞ্চটি নির্মাণ করা হয়েছে। এটি  রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র উত্তরার ৭ নং সেক্টরের রবীন্দ্র সরণির পশ্চিম প্রান্তে ২০নং সড়কের সংযোগস্থলে বটমূলের পাশে অবস্থিত। ২০১৬ সালে পথনাটক আয়োজন করার সময় বাংলা ভাষা আন্দোলনের কর্মী মাহবুব উল আলম চৌধুরী স্মরণে মঞ্চের স্থানটির নাম ভাষাসৈনিক কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরী মঞ্চ রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমির দাবি’র কারণে  ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি’র) ওই স্হানে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ নির্মাণ করে। ২০২২ সালে মঞ্চটি বঙ্গবন্ধু মুক্তমঞ্চ নামে উদ্বোধন করা হয়েছিল। ২০২৪ সালে জুলাই গণহত্যায় শহীদ শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ স্মরণে এটির নাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম রাখা হয় “মুগ্ধ মঞ্চ”।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপি’র উত্তরা বিভাগের পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা দৈনিক জনতাকে বলেন, উত্তরা ৭ নং সেক্টরের রবীন্দ্র সরণির পশ্চিম প্রান্তে ২০ নং সড়কের সংযোগস্থলে বটমূলে অবস্থিত মুগ্ধ মঞ্চকে ঘিরে এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা দিতে সার্বক্ষণিক পুলিশি নিরাপত্তা বলয় ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া ওই এলাকায় উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের একটি  টহল গাড়ি সারাক্ষণ তদারকি করে থাকে।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net