
* নিবন্ধনের প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ২২ দল
রাজধানীর পল্টন মোড় থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে যাওয়ার আগে হাতের বাঁ পাশে দ্বিতীয় গলির মাথায় নুরজাহান শরীফ প্লাজা। এ ভবনেই বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদের কার্যালয়। একই অবস্থা বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি) নামে আরেকটি রাজনৈতিক দলের। তবে ইসির খাতায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টির কার্যালয়ের ঠিকানা ঢাকার উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৪৭ নম্বর বাসা।
জানা গেছে, আসন্ন ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ইসির কাছে নতুন দল নিবন্ধনের হিড়িক পড়েছিল। সবশেষ গত ১১ আগস্ট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, নতুন দল নিবন্ধনের জন্য মোট ১৪৩টি আবেদন জমা পড়েছিল। এর মধ্যে ২২টি দলকে প্রাথমিকভাবে যোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এই ২২ দলকে নিয়ে মাঠপর্যায়ে যাচাই-বাছাই করা হবে। বাকি ১২১টি দলকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি এই দলের মতো নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদসহ ২২টি দল। তবে দলগুলোর মধ্যে এই চারটি দলের ঠিকঠাক কিছুই পাওয়া যায়নি। সাইনবোর্ড থাকলেও নেই অফিস, চোখে পড়েনি নেতা-কর্মী ও সমর্থকের আনাগোনা। দুটি দলের অফিসে গিয়ে কোনো কর্মীর দেখা মেলেনি। চারটি দলের প্রধানই আবার ব্যবসায়ী। কোনোটার জন্ম হয়েছে গত বছরের সরকারবিরোধী গণআন্দোলনের আগে। দলের নেতাকর্মীর সংখ্যা কত, কী উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা হয়েছে তাও বলতে পারেননি কেউ কেউ।
সরেজমিনে ভবনটিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোথাও বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদের সাইনবোর্ড নেই। এমনকি ভবনের ভেতরে থাকা অফিসগুলোর সাইনবোর্ডের কোনোটিতে এই দলটির সাইনবোর্ড নেই।
কার্যালয়টি খুঁজতে ভবনের নিচে আব্দুস সালাম নামের এক দোকানিকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, ভবনের দ্বিতীয় তলায় এই দলটির কার্যালয় রয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয় তলা, তৃতীয় তলা ও চতুর্থ তলায় গিয়েও কার্যালয়টির সন্ধান পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় তলায় একটি ট্রাভেল এজেন্সির কর্মীকে দলটির কার্যালয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানেন না বলে উত্তর দেন। এরপর ভবনটির নিরাপত্তাকর্মী শামসুল হকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এই নাম কখনো শুনিনি। এখানে অনেক সাবলেটও রয়েছে। অর্থাৎ একজন একটা অফিস ভাড়া নেন। সেই অফিসের সব রুম তো তাঁর প্রয়োজন হয় না। তখন সেখান থেকে একটি বা দুটি রুম সাবলেট দেন। সেই সাবলেট আমরা চিনি না। যারা অফিস ভাড়া নিয়েছেন তাদের নাম বোর্ডে রয়েছে। সাবলেটের নাম বোর্ডে থাকে না। তবে মোবাইল ফোনে দলটির সভাপতি মো. আতিকুর রহমান রাজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, শরীফ প্লাজার নিচতলায় আমাদের অফিস। তবে নিচেও এই নামে কোনো অফিস পাওয়া যায়নি। শুধু বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদের অফিস নয়, সরেজমিনে নতুন বাংলাদেশ পার্টির অফিসের দেওয়া ঠিকানায় গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে। নির্বাচন কমিশনে রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার একটি বাসার তৃতীয় তলায় নতুন বাংলাদেশ পার্টির অফিসের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। তবে গত মঙ্গলবার তাদের দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে দলটির কোনো অফিস পাওয়া যায়নি। ভবনটির তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, ডান পাশে মাস্টারমাইন্ড অ্যাবাকাস নামের শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ও চর্চার একটি প্রতিষ্ঠান। বাঁ পাশের ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ। মাস্টারমাইন্ড অ্যাবাকাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন জানান, আগে এখানে একটি রাজনৈতিক দলের অফিস ছিল, তবে এখন আর নেই। একই চিত্র দেখা গেছে বাংলাদেশ সলুশন পার্টি ও মৌলিক বাংলার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানায়। নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া ঠিকানায় তাদের অফিস খুঁজে পাওয়া যায়নি। নির্বাচন কমিশনকে মৌলিক বাংলার দেওয়া ঠিকানা হলো সাভার উপজেলার নিক্কন হাউজিং লিমিটেড, হাউজ নম্বর ৭, রোড নম্বর ৪, ওয়ার্ড ১, ব্লক এ, আমতলা কাঠগড়া রোড। সরেজমিনে ওই ঠিকানায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে মৌলিক বাংলার কোনো সাইনবোর্ড নেই। আশপাশে ঘুরেও দলটির কোনো সাইনবোর্ড চোখে পড়েনি। এমনকি স্থানীয় লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলেও মৌলিক বাংলা নামের কোনো দলের অফিসের ঠিকানা কেউ দিতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ সাকীর নম্বরে কল করা হলে ফোন রিসিভ করে তিনি নিজেকে দলের সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে আরেকটি ঠিকানা দেন। সেই ঠিকানায় গিয়েও দলীয় কোনো কার্যালয় পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদের দেওয়া ঠিকানার অফিস থেকে ডান দিকে ভেতরে ৬০/এ পুরানা পল্টন ভবন। ভবনটির চতুর্থ তলায় বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির অফিস। নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া ওই ঠিকানায় দলটির অফিস পাওয়া গেলেও পাওয়া যায়নি কোনো নেতাকর্মী। গতকাল শনিবার অফিসটিতে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের দোতলার বারান্দায় সাইনবোর্ড রয়েছে। চতুর্থ তলায় প্রবেশ করে শুধু কয়েকটি রুম আর পাহারাদার সাব্বির আহমেদ ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি। অফিসে প্রবেশ করে দেখা যায়, দুই রুমের একটি অফিস। প্রথমে ঢুকতেই বড় একটি রুম। সেখানে অনেক প্লাস্টিকের চেয়ার এবং প্লাস্টিকের দুটি বড় টেবিল রয়েছে। সাব্বির জানান, এখানে বিভিন্ন সময় দলের মিটিং হয়। ভেতরে আরেকটি ছোট রুম রয়েছে। রুমে তিনটি টেবিল, কয়েকটি চেয়ার এবং একটি বুকশেলফ রয়েছে। সেখানে সাব্বির ছাড়া আর কাউকে না পাওয়ায় দলটির মহাসচিব মুহাম্মদ মুসা বিন ইযহারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। সাব্বির জানান, ব্যক্তিগত কাজে মুসা বিন ইযহার চলতি মাসের শুরুতে দুবাই গেছেন। আর দলটির আমির সরওয়ার কামাল আজিজ চট্টগ্রামে থাকেন। মাঝেমধ্যে তিনি অফিসে আসেন। একই চিত্র দেখা যায় বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামী ইসলামি পার্টি ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (মার্ক্সবাদী) কার্যালয়ে। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ঠিকানায় এই দলগুলোর কার্যালয় থাকলেও সেখানে পাওয়া যায়নি কোনো নেতাকর্মী। বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টির কার্যালয় ৪২/১ সেগুনবাগিচায় গিয়ে দেখা গেছে, ভবনটির তৃতীয় তলা বরাবর একটি সাইনবোর্ড রয়েছে। সাইনবোর্ডের পাশের দেয়ালে একটি ব্যানার টাঙানো রয়েছে। অফিসে প্রবেশ করতেই দেখা হয় দফতরের দায়িত্বে থাকা রাকিব হাসান এবং কম্পিউটার অপারেটর কাউসার আহমেদের সঙ্গে। রাকিব হাসান জানান, তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নুরুল হক ডিসি অফিসে রয়েছেন। অফিসের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে তিনটি কক্ষ রয়েছে। প্রথম কক্ষটিতে লোকজনের বসার জন্য সোফা এবং একটি টেবিল রয়েছে। ভেতরের কক্ষে দুটি টেবিল ও কয়েকটি চেয়ার রয়েছে। তার মধ্যে একটি টেবিলে কম্পিউটার রয়েছে। এই টেবিল দুটিতেই রাকিব ও কাউসার বসেন। সর্বশেষ কক্ষে একটি বড় চেয়ার, একটি টেবিল, দুটি ছোট চেয়ার এবং একটি সিসিটিভির মনিটর রয়েছে। আর দেয়ালে দলটির চেয়ারম্যান মো. সোহেল রানা এবং মহাসচিব মো. তহিদুল ইসলামের ছবি রয়েছে। রাকিব জানান, চেয়ারম্যান ও মহাসচিব দুজনই লন্ডনে রয়েছেন। সেখানেই তারা থাকেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামী ইসলামি পার্টির কেন্দ্রীয় অফিস ৫০/৩ নর্থব্রুক হল রোডে আরএম প্লাজার দশম তলায় গিয়ে দেখা যায়, ছাদের চিলেকোঠায় এক পাশে রয়েছে একটি রুম। রুমের সামনেই লোহার দরজায় তালা মারা। তবে কাঠের দরজার তালায় মরিচা ধরে গেছে। পাশেই দেয়ালে থাকা ব্যানারে লেখা আছে ‘কেন্দ্রীয় কার্যালয়, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামী ইসলামি পার্টি’। দরজা বন্ধ থাকলেও কাচের জানালা দিয়ে ভেতরে তাকালে দেখা যায়, ১০ থেকে ১২টি চেয়ারসহ একটি টেবিল। পাশেই রয়েছে বিছানা। একটি ড্রেসিংটেবিল আর আরামকেদারা। ভবনের একজন ভাড়াটিয়া দলটির মহাসচিবের নাম বললে চিনতে পারেন না। আলাপকালে তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে দেখি কয়েকজন হুজুর আসেন। মাঝেমধ্যে তারা বসেন। মিটিং করেন। রাজধানীর তোপখানা রোডের শিশুকল্যাণ পরিষদ ভবনের পঞ্চম তলায় বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী)-সিপিবি (এম) কার্যালয়। নিচে সিঁড়ি ও লিফটের সামনে ছোট সাইনবোর্ডে দলটির মার্কিং রয়েছে। শনিবার দুপুর ১২টার পর ওই অফিসের সামনে গিয়ে দরজা বন্ধ পাওয়া যায়। দরজার গায়ে সিপিবি (এম) সদস্য ফরমসহ বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তি সাঁটানো আছে। তবে দরজায় কোনো তালা ছিল না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, সামনে ছোট একটি স্পেস, আর চারপাশে চারটি রুম। ডান পাশের রুমটিতে সিপিবির (এম) ছোট সাইনবোর্ড, কিন্তু রুমটি তালাবদ্ধ। ওই তলায় যাঁরা চলাচল করছেন, তারা কেউ সিপিবি (এম) সম্পর্কে তথ্য দিতে পারেননি। ফরোয়ার্ড পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ধানমণ্ডি সিটি কলেজের পাশে, ২ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায়। দ্বিতীয় তলার ফ্লোরটিতে পাঁচটি কক্ষ রয়েছে, যা একাধিক অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর একটি অংশে ফরোয়ার্ড পার্টির ব্যানার টাঙানো রয়েছে। রয়েছে বসার জন্য সোফা। তবে ভাসানী জনশক্তি পার্টি, এনসিপি ও জনতার দলের অফিস সঠিক পাওয়া গেছে। পুরানা পল্টনের ইব্রাহীম ম্যানশনে রয়েছে ভাসানী জনশক্তি পার্টির অফিস। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির বাইরে তৃতীয় তলা বরাবর দলের একটি সাইনবোর্ড রয়েছে। ভবনটির তৃতীয় তলায় উঠে দেখা যায়, বাঁ পাশে প্রথম কক্ষে দরজার ওপর একটি ছোট ব্যানার রয়েছে। সেখানে লেখা ‘ভাসানী অনুসারী পরিষদ’। তবে তার পাশে দেয়ালে আরেকটি বড় ব্যানার রয়েছে। সেই ব্যানারে সাইনবোর্ডের লেখাগুলোই লেখা রয়েছে। এ ছাড়া দরজার সঙ্গে আরেকটি ছোট সাইনবোর্ড রয়েছে। কক্ষে প্রবেশ করলে দেখা যায়, দলটির চেয়ারম্যান শেখ মো. রফিকুল ইসলাম দলের অন্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারের ১৫ তলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অফিস রয়েছে। তবে এটি দলটির অস্থায়ী কার্যালয়। মূলত এটি জাতীয় নাগরিক পার্টির কার্যালয়। আত্মপ্রকাশের পর থেকে দলটি এই কার্যালয় ব্যবহার করে আসছে। কার্যালয়টির ভেতরে সাতটি রুম, দুটি ওয়াশরুম, একটি রান্নাঘর এবং একটি ওপেন স্পেস রয়েছে। এই সাতটি রুমের মধ্যে দুটি রুম মিটিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। বাকি পাঁচটি রুম দলের শীর্ষ নেতারা দলীয় কাজে ব্যবহার করতে পারেন। চলতি বছরের ২০ মার্চ রাজধানীর বনানীতে প্রধান কার্যালয় উদ্বোধন করে জনতার দল। বনানীর ৮ নম্বর রোডে প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, দলের চেয়ারম্যান, সদস্যসচিব, মুখপাত্র ও প্রধান সমন্বয়কের জন্য আলাদা অফিসরুম রয়েছে। একটি কনফারেন্স রুম ও একটি ওপেন স্পেস রুম রয়েছে। গোছালো কার্যালয়ে দুজন কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য যাচাই-বাছাইয়ে ২২টি দল সঠিক কাগজপত্র জমা দিয়েছে। সেগুলো হলো ফরোয়ার্ড পার্টি, আম জনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, জনতার দল, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আমজনগণ পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী), সিপিবি (এম), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাহজাহান সিরাজ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ সলুশন পার্টি ও নতুন বাংলাদেশ পার্টি। ঢাকার ৪২/১, সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টির অফিস। নিচতলায় ফার্নিচারের একাধিক দোকান। তিন তলায় দলটির কার্যালয়। তবে তিন তলায় যাওয়ার সিঁড়ি খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় প্রতিবেদককে। পরে একজন দোকানির সাহায্য নিয়ে একটা দোকানের ভেতর দিয়ে হেঁটে সিঁড়ি খুঁজে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টির অফিসে প্রবেশ করতেই দেখা হয় দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদি হাসানের সঙ্গে। তিনি তখন একাই ছিলেন। মেহেদি হাসান বলেন, ২০২৪ সালে এই দল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় কমিটি দেওয়া হয়েছে। ৫৭০ জনের কেন্দ্রীয় কমিটি দেওয়া হয়েছে। দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জানতে চাইলে তিনি দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. নুরুল হকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তিনি বলেন, ওই (চেয়ারম্যানের) নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপে ফোন দেবেন, ডিটেইলস জানতে পারবেন। মেহেদি হাসান ও দলটির চেয়ারম্যান ব্যবসায়িক অংশীদার। তবে কী ব্যবসা করছেন তা জানাননি মেহেদি হাসান। তিনি বলেন, আমি ১০ বছর ধরে ব্যবসা করছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সূত্রে পরিচয়। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই এই দলের প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
এদিকে, নুরুল হক বলেন, আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। আমাদের গঠনতন্ত্রটা একটু দেখবেন। গতকাল শনিবার সকালে বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টির ওয়েবসাইট বিআরপিবিডি ডট ওআরজি ঘুরে দলটির গঠনতন্ত্রের দুটি লিংক খুঁজে পাওয়া যায়। সংবিধান প্রথম অংশ ও দ্বিতীয় অংশে ক্লিক করে কিছুই পাওয়া যায়নি। ওয়েবসাইটটিতে দলটির বিভিন্ন কার্যক্রমের সংবাদ ও ৫৭০ জনের কেন্দ্রীয় কমিটির তালিকা দেওয়া আছে। ঢাকার ১১ পুরানা পল্টনের ইব্রাহীম ম্যানসনে গিয়ে কথা হয় ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। ভবনের বাইরে দলের কোনো ব্যানার চোখে পড়েনি। রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যবসায়ী। তবে সদস্যদের চাঁদায় দল পরিচালিত হয়। প্রেসিডিয়াম সদস্যরা পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দেয়। ভাসানীর নামে ১৮টি দল থাকলেও তার দল ছাড়া আর কেউ ক্রিয়াশীল নয় বলে দাবি তার। তিনি বলেন, ২৭ জেলা ও ১০১টি উপজেলায় কমিটি দেওয়া হয়েছে। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি ১২১ জনের। ৩৩ শতাংশ নারী কোটা পূরণ না হলেও ইসির দেওয়া সময়সীমা ২০৩০ সালের মধ্যে তা পূরণ হবে বলে আশা তার।
আইন অনুযায়ী, ইসির নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক-তৃতীয়াংশ জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এছাড়া কোনো দলের কেউ আগে সংসদ সদস্য থাকলে বা আগের নির্বাচনের পাঁচ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। এই প্রধান শর্তগুলো ছাড়াও বেশকিছু নিয়মকানুন মেনে আবেদন করতে হয়। নিবন্ধন পেতে গত ২২ জুন পর্যন্ত ইসিতে আবেদন করে রাজনৈতিক দলগুলো। তখন প্রাথমিক বাছাইয়ে কোনো দলই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। এরপর সবগুলো দলকে প্রয়োজনীয় ঘাটতি পূরণে ১৫ দিন সময় দেয় ইসি। ৩ আগস্ট শেষ সময় পর্যন্ত জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ৮৪টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত পূরণের তথ্য ইসিতে জমা দেয়। এরপর যাচাইয়ে ২২টি দল প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হয়।