
শ্রমিক সংকটে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা
* ফসল উৎপাদন মৌসুমে প্রকট হয়ে উঠেছে শ্রমিকসংকট
* ২০২০ সালে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয় ৩ হাজার কোটি টাকার একটি ভর্তুকি প্রকল্প
* দুর্নীতির অভিযোগে গত বছরের জুন থেকে প্রকল্পটিতে ভর্তুকি প্রদান স্থগিত করা হয়
স্টাফ রিপোর্টার
দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়লেও আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে কৃষি যন্ত্র বিক্রি। অথচ দেশে কৃষিশ্রমিক বাড়ছে না। ফলে ফসল উৎপাদন মৌসুমে প্রকট হয়ে ওঠে শ্রমিকসংকট। আর কৃষিখাতে শ্রম ঘাটতি মেটাতেই কৃষি যান্ত্রিকীকরণে জোর দিয়েছিল সরকার। ওই লক্ষ্যে ২০২০ সালে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয় ৩ হাজার কোটি টাকার একটি ভর্তুকি প্রকল্প। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে গত বছরের জুন থেকে প্রকল্পটিতে ভর্তুকি প্রদান স্থগিত করা হয়। আর তাতে স্থবির হয়ে পড়ে দেশে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের গতি। বর্তমানে দেশে কৃষি যন্ত্রপাতি বিক্রি ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। কৃষিখাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাণিজ্যিক কৃষির দিকে এখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সেজন্যই কৃষি যান্ত্রিকীকরণ জরুরি। কারণ কৃষিতে এখন শ্রমিকের মজুরি বেশি। আবার সময়মতো পাওয়া যায় না শ্রমিকও। সেজন্যই কৃষিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে যান্ত্রিকীকরণ। তবে যন্ত্রের দাম বেশি হওয়ায় কৃষিযন্ত্রে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু দুর্নীতির অজুহাতে এখন সরকারের ওই ভর্তুকি বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকার কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পটির আওতায় সমতল এলাকায় ৫০ শতাংশ এবং হাওরাঞ্চলে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিতো। কৃষিতে যান্ত্রিকরণ বাড়াতে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কম্বাইন হারভেস্টার, রিপার, সিডার, পাওয়ার টিলারসহ কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানি করে। তার মধ্যে একেকটি কম্বাইন হারভেস্টারের দাম ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার মতো পড়ে। প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে ১২ ধরনের মোট ৫১ হাজার ৩০০টি কৃষিযন্ত্র দেয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশে ইতিমধ্যে ৪০ হাজার যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরো ১১ হাজারের বেশি যন্ত্র বিতরণ করা হবে। কিন্তু এখন দেশে ব্যাপকভাবে কমেছে আমদানি করা কৃষিযন্ত্রের বিক্রি। দেশে কৃষি যন্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, সরকারের ভর্তুকি বন্ধ হওয়ার কারণেই কমেছে কৃষিযন্ত্র বিক্রি। এ অবস্থায় বর্তমানে কৃষিযন্ত্র সবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন যন্ত্র আমদানি বন্ধ রয়েছে। অথচ দেশে এখন ধানের জমি প্রস্তুত করতে প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় ট্রাক্টর। আর ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করা হয়। বাকিটা হাতে করা হয়। গত বছরের জুন থেকে বন্ধ রয়েছে কৃষিযন্ত্রে ভর্তুকি। আর ভর্তুকি ছাড়া ৩২ লাখ টাকায় একটি মেশিন কেনা কৃষকের পক্ষে সম্ভব নয়।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে দেশে চার থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা কৃষি যান্ত্রিকীকরণের বাজারের আকার। প্রতিবছরদেশে প্রবেশ করছে প্রায় ৮-৯ হাজার ট্রাক্টর। একসময় ট্রাক্টর আমদানিতে সরকার ভর্তুকি দিতো। তাই এর বাজার প্রসারিত হয়েছে। একইভাবে আরো পাঁচ বছর যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি দিলে হারভেস্টারসহ অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারেও নতুন বাজার তৈরি হবে। কিন্তু গত জানুয়ারিতে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের ‘কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের’ যন্ত্র বিতরণে অনিয়মের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানায়। বিগত ২০২০ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল এ বছরের জুনে।
এদিকে এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মঞ্জুর-উল-আলম জানান, নতুন কিছু যন্ত্রে ভর্তুকি বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৪০ হাজার যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরো ১১ হাজারের বেশি যন্ত্র বিতরণ করা হবে। সেজন্য আরো ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। যে কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে এক বছর।
অন্যদিকে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ভবিষ্যৎ নিয়ে কৃষিসচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান জানান, কৃষি যান্ত্রিকরণ প্রকল্পটিতে বেশ কিছু অনিয়ম হয়েছে। সেগুলোর তদন্ত চলমান। ওসব দূর করে আবার ভর্তুকি প্রদান শুরু করা হবে। তাতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।