জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

মাছ রক্ষায় পরিবেশের প্রতি সদয় হোন

আপলোড সময় : ১৯-০৮-২০২৫ ০৩:১৮:০৫ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৯-০৮-২০২৫ ০৩:১৮:০৫ অপরাহ্ন
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মৎস্যসম্পদ রক্ষায় দেশবাসীকে পরিবেশের প্রতি সদয় হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, পরিবেশের প্রতি সদয় না হলে বাংলাদেশের সমৃদ্ধ মৎস্য সম্পদ টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, প্রকৃতির প্রতি নির্দয় আচরণ অব্যাহত থাকলে একদিন মাছও আমাদের কপাল থেকে হারিয়ে যেতে পারে। গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৫-এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা একথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবর্গ, সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাগণ, মৎস্যচাষী, উদ্যোক্তা ও গবেষকগণ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী ভাষণে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, মাছ আমাদের জন্য প্রকৃতির উপহার। এটি কোনো কারখানায় উৎপাদিত নয়, বরং আল্লাহর দান। অথচ আমরা এত নির্দয় হয়ে পড়েছি যে, একদিন মাছও হয়তো আমাদের কপাল থেকে হারিয়ে যাবে। তিনি উল্লেখ করেন, প্রকৃতিকে আঘাত করলে আগামী প্রজন্মও খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবিকার দিক থেকে বঞ্চিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আমরা নদী শাসনের কথা বলি, কিন্তু নদী পালনের কথা বলি না। আমরা তাকে শাসন করতে চাই এবং শাসনের নামে তার প্রতি যত নির্দয় হওয়া যায়, তা করছি। বর্জ্য তো নদীতে দিচ্ছি। নদী-নালা ও জলাশয়ে বর্জ্য ফেলছি, বিষাক্ত রাসায়নিক ঢুকিয়ে দিচ্ছি। পানিই যদি না থাকে, মাছ কোথা থেকে আসবে? বাংলাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও জলসম্পদ মৎস্য উৎপাদনের বিপুল সুযোগ তৈরি করেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ১২ লাখ নারীসহ লাখ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু প্রকৃত মৎস্যজীবীরা অনেক সময় প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন। তিনি বলেন, আমরা শুধু মাছের দাম বা মাছটা টাটকা কি-না সেটা দেখি, কিন্তু যারা প্রতিদিন শ্রম দিয়ে মাছ আমাদের কাছে পৌঁছে দেন, তাদের কথা ভুলে যাই। আজকের দিনটা অন্তত তাদের কথা মনে করার দিন। অধ্যাপক ইউনূস গভীর সমুদ্রের বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, বৈচিত্র্যময় অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে পরিপূর্ণ এ দেশে মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের যেমন ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে অন্যদিকে বিশাল বঙ্গোপসাগরের অফুরন্ত মৎস্য সম্পদও পানিভত্তিক অর্থনৈতিক বিকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। এ দেশের পানি প্রবাহ ও বিশাল সমুদ্র আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের একটি সম্পদ যা আমরা পেয়ে গেছি, আমাদের কষ্ট করতে হয়নি এটা আল্লাহ আমাদের দিয়েছে। তিনি বলেন, এ খাতে বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশ এখনো তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি। আমরা এখনো সমুদ্রের জগতে প্রবেশ করতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, সমুদ্র আমাদের জন্য উপহার নিয়ে অপেক্ষা করছে। আমরা এখনো সেই উপহারটা তার কাছ থেকে আনতে যেতে পারিনি। আমাদের জানতে হবে কি কি ধরনের মৎস্য সম্পদ এ সমুদ্রের পানির তলায় আছে। আমাদের বুঝতে হবে কেন আমরা এটা পারছি না। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ খাত আমাদের অর্থনীতির জন্য একটা নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে পারে। এটি আমাদের দেশেরই অংশ। আমরা শুধু জমির অংশটা জানি, পানির অংশটার প্রতি আমাদের কোনো দৃষ্টি নেই। এটি জমির যে বাংলাদেশ তার চাইতে বড় পরিমাণ দেশ আমাদের। কিন্তু আমরা অবহেলা করি। সেটা যে আছে সেটাও বলি না। আমাদের বঙ্গোপসাগারে সুষ্ঠু জমি পরিচালনা করে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার অঞ্চল চিহ্নিত করতে হবে। এটি শুধু বেশি মাছ ধরার বিষয় নয়, এটি একটি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার বিষয়। এজন্য আমাদের গবেষণায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত হতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যক্রমে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাহলে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ পূর্ণাঙ্গভাবে রচনা করতে পারবো। অবৈধ জাল ব্যবহার ও নির্বিচার মৎস্য আহরণকে তিনি ‘প্রকৃতির প্রতি নির্মমতা’ আখ্যা দেন। অধ্যাপক ইউনূস এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি ঠেকানো শুধু সরকারের কাজ নয়, বরং নাগরিক দায়িত্বও বটে। আগামী প্রজন্ম যেন এই সম্পদ থেকে বঞ্চিত না হয়, সেজন্য আমাদের সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে, তিনি যোগ করেন। মৎস্য খাতে সম্ভাবনার পাশাপাশি দুর্ভাবনাও আছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমাদের প্রতিদিন সকালে প্রতিজ্ঞা করতে হবে—আমি আজ প্রকৃতির প্রতি সদয় হব। প্রকৃতির প্রতি সদয় না হলে আমাদের ভবিষ্যৎ টেকসই হবে না। তিনি আরও যোগ করেন, পরিবেশ বান্ধব চাষাবাদ ও তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণে এই শিল্পকে সমৃদ্ধ করা সম্ভব। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গবেষণার মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় মাছকে ফিরিয়ে আনতে আরও বহু গবেষণা প্রতিষ্ঠান করতে হবে। তরুণদেরকে এর সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি মাছের রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য বাজার সম্প্রসারণ, পণ্যে বহুমুখীকরণের জন্য গবেষণাসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি দপ্তর, বেসরকারি সংগঠন, রপ্তানি ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বানও জানান তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে শত শত প্রজাতির ঐতিহ্যবাহী দেশীয় মাছ ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে লাইফ জিন ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের জনগণের প্রাণিজ আমিষের চাহিদার অধিকাংশই মাছ থেকে পূরণ হয়। একই সঙ্গে ১২ লাখ নারীসহ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ কাজের সঙ্গে জড়িত। এ খাতের ব্যাপক সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আরও বিপুলসংখ্যক তরুণ সফল উদ্যোক্তা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, প্রকৃত মৎস্যজীবী ও জেলেরা যাতে অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার না হয় সেজন্য তাদেরকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনতে বিশেষভাবে যত্নশীল হতে হবে। অনুষ্ঠানে মৎস্য খাতে বিশেষ অবদানের জন্য নয়টি ক্ষেত্রে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় মৎস্য পদক ২০২৫ প্রদান করা হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। এবারের মৎস্য সপ্তাহের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে - “অভয়াশ্রম গড়ে তুলি, দেশি মাছে দেশ ভরি”। মৎস্য সপ্তাহ চলবে এক সপ্তাহব্যাপী। প্রদর্শনী, কর্মশালা ও আলোচনা সভার মাধ্যমে চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তি, মাছের রক্ষণাবেক্ষণ এবং বাজারজাতকরণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে।

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net