
তুরাগ থেকে মনির হোসেন জীবন
দেশের জনসাধারণের হয়রানি দূর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) উত্তরা দিয়াবাড়িতে অবস্থিত ঢাকা মেট্রো সার্কেল-৩ কার্যালয়কে দালাল ও প্রতারক মুক্ত করতে বিগত দিন গুলোতে একাধিক বার পৃথক সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর ভ্রাম্যমাণ আদালত ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর পৃথক অভিযান বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বিআরটিএকে দালালমুক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বিআরটিএ এর যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এপর্যন্ত বিআরটিএ উত্তরা অফিসের দালালদের গডফাদার ও প্রতারক চক্রের মূল হোতা মো. আতাউর রহমান ওরফে (আতা)সহ ইতিপূর্বে কমপক্ষে প্রায় ১৪/১৫ জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা এবং জেল খানায় পাঠিয়েছে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সোমবার সকালে বিআরটিএ উত্তরা অফিস সরেজমিন পরিদর্শন, ভুক্তভোগী, সেবা প্রত্যাশী, এলাকাবাসী ও বিভিন্ন পেশার লোকজনের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান জানান, অদক্ষ চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ফলে দিনকে দিন সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। বিআরটিএ গুলোতে যেভাবে পরীক্ষা নেওয়া হয়, তাতে দক্ষ চালক পাওয়া যাবে না। এখাতে সংস্কার প্রয়োজন। আমাদেরকে এ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সংস্কার লাগবে বিআরটিএর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা মেট্রো সার্কেল-৩ বিআরটিএ উত্তরা অফিসের পূর্ব, পশ্চিম পাশে ও সামনে অসংখ্য ফটোকপির দোকান, চায়ের দোকান ও খাবার হোটেল গুলো দালাল গড়ে উঠেছে। আর এসব দোকান গুলোতে দালাল ও প্রতারক চক্রের আখড়া। তারা শিকারের আশায় দোকানে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। দিন দিন দোকান গুলো দালালদের আড্ডা খানায় পরিণত হয়েছে। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের কাছে জিম্মি। বলতে গেলে এ অফিসে দালাল ও প্রতারক চক্রের পোয়া বারো। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর কিছু দিন জেল খেটে কিংবা আদালত থেকে জামিন নিয়ে আবার পূর্বের পেশায় ফিরে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে ।
তথ্য অনুসন্ধান ও একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানান, স্থানীয় ফটোকপির দোকান, চায়ের দোকান ও খাবার হোটেল গুলো অপরাধীদের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। সেই সাথে বিআরটিএ অফিস কর্তৃক অদক্ষ চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। সে কারণে সড়ক ও মহাসড়কে দিনকে দিন দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যাও। ফলে জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার প্রয়োজন বিআরটিএ। এমনটাই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে বিআরটিএ উত্তরা অফিটি দেখার যেন কেউ নেই! এব্যাপারে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট মহলের কঠোর নজরদারী কিংবা তড়িৎগতিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। বিআরটিএ উত্তরা অফিসে টাকা ছাড়া ফাইল নড়েনা। ভবনের ইট কিংবা অফিসের চেয়ারও বলে টাকা চাই, টাকা দে। এছাড়া নড়ে না দালালের সাংকেতিক ইশারা। সংকেত ছাড়া সাক্ষর হয় না ফাইলের পাতাও। লিখিত পরীক্ষা থেকে ড্রাইভিং টেস্টসহ সব জায়গাতেই যেন দালাল চক্রের সীমাহীন অপ্রতিরোধ্যতা। এখনকার দালাল চক্র গুলো এতটাই তৎপর, তাদের রয়েছে ভিন্ন ও অভিন্ন নানান কার্য কৌশলী গ্রুপ। যে গ্রুপগুলোর নেতৃত্ব দেন স্থানীয় কয়েকটি প্রভাবশালী মহল ও অফিসটির বিআরটিএ এ কতিপয় কিছু অসাধু কর্মকর্তা। মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করে চক্রটি। অকেজো ভঙ্গুর গাড়ির ফিটনেসের জন্য রয়েছে একটি চক্র। ড্রাইভিং টেস্ট ও লিখিত পরীক্ষায় পাস করানোর জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা আরো দু’টি চক্র।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালের ২৭ মে বিআরটিএ উত্তরা কার্যালয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এসময় ৬ জন দালালকে আটকের পর তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট। সূত্র বলছে, ইতিপূর্বে বিআরটিএ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনিসুজ্জামান এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। ইতিপূর্বে আটককৃতরা হলেন, মো. ফরহাদ আলী (৩২), পিতা. আবু তালেব, মো. হাসানুজ্জামান খান (৩৫) পিতা মো. মান্নান খান, মো. লিটন (৩৫) পিতা হাজী আ. মালেক, মো. তুহিন (৩২) পিতা.-কোরবান আলী, মো. জুয়েল (৩৬), পিতা-আনোয়ার হোসেন ও সোহেল রানা (৩১), পিতা-আলী আহম্মেদ। আটককৃত ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই আদালতের নিকট তাদের দোষ স্বীকার করেন বিধায় : তাদের প্রত্যেককে তিন মাসের দণ্ডাদেশ প্রদান করে জেল হাজতে প্রেরণ করার আদেশ দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট।
বিআরটিএ উত্তরা অফিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র গুলো জানান, ২০২৫ সালের ৫ মার্চ বেলা ১১টার দিকে একই অফিসে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ২ জন দালালকে আটকের পর তাদের প্রত্যেককে এক মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত-৩ ও ৪ এর পৃথক অভিযান চালায়। এসময় মো. মুরাদ মোল্লা (২২) এবং মুহাম্মদ তরিকুল ইসলাম (৩৫) নামে দুইজনকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত-৬ এর তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজিদ আনোয়ার তৎকালীন তাৎক্ষণিক তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে গণমাধ্যমকে বলেন, দালাল বিরোধী অভিযান আগের চেয়ে আরও জোরদার করা হয়েছে।
অপর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, ২০২৪ সালের ১০ জুলাই বিআরটিএ উত্তরা অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত ঝটিকা অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ দালাল চক্রের ৪ জন সক্রিয় সদস্যকে আটক করে। এ সময় অবৈধ দালালিতে জড়িত থাকার দায়ে দালাল চক্রের ৪ জনকে আটক করে বিভিন্ন দণ্ডাদেশ প্রদান জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। ঘটনা দিন বুধবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩-এর এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনিসুজ্জামান এ সাঁড়াশি অভিযানে নেতৃত্ব দেন। আটককৃত ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই আদালতে তাদের দোষ স্বীকার করেন এবং তাদেরকে এক মাসের বিনাশ্রম কারা দণ্ডাদেশ প্রদান করে বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই সময় আটক হওয়া ৪ দালাল হলেন, জনি চৌধুরী (৩০), পিতা আব্দুল মানান, মো. সালেহ আকরাম (৪২), পিতা মৃত সোবহান, আবু বক্র (১৯), পিতা আব্দুর রশিদ, মো. রিয়াজ হোসেন (২৪)। পিতা নজির উল্ল্যাহ। এ সময় দায়িত্বরত এক্সিকিউটি ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, দালাল ও প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে-বিআরটিএ উত্তরা অফিসে আগত গ্রাহকদের কাছ থেকে দ্রুত কাজ করিয়ে দেওয়ার নাম করে কাগজপত্র ও নগদ টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে এবং সেটি ভবিষ্যতেও থাকবে। গ্রাহক ও সেবা প্রত্যাশিদের উদ্দেশে তিনি তখন জানান, বিআরটিএ আগত গ্রাহকগণ সরাসরি বিআরটিএ’র কর্মকর্তা কর্মচারীর কাছে আসলে দ্রুত সেবা পাবেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল বিআরটিএ উত্তরা অফিসের দালালদের গডফাদার ও প্রতারক চক্রের মূল হোতা মো. আতাউর রহমান ওরফে (আতা)কে আটক করে। ওই সময় (তৎকালীন) তাকে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ার দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন।
এবিষয়ে বিআরটিএ উত্তরা ঢাকা মেট্রো-৩ সার্কেলের উপ-পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) কাজী মো. মোরছালীন ইতিপূর্বে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নিয়মিত দালাল চক্রগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। কারও বিরুদ্ধে তথ্য প্রমানসহ লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আমরা ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। বিআরটিএর পরিচালক (প্রশাসন) আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকলে আমরা ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিব। দালালদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সবসময় ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতে ও চলমান থাকবে।
এবিষয়ে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার চেয়ে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, পুলিশ প্রধান (আইজিপি), ডিএমপির পুলিশ কমিশনার, এলিট ফোর্স র্যাব ডিজি, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান, উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি)সহ সরকারের সংশ্লিষ্ঠ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তুরাগ বাসি।
দেশের জনসাধারণের হয়রানি দূর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) উত্তরা দিয়াবাড়িতে অবস্থিত ঢাকা মেট্রো সার্কেল-৩ কার্যালয়কে দালাল ও প্রতারক মুক্ত করতে বিগত দিন গুলোতে একাধিক বার পৃথক সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর ভ্রাম্যমাণ আদালত ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর পৃথক অভিযান বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বিআরটিএকে দালালমুক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বিআরটিএ এর যৌথ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এপর্যন্ত বিআরটিএ উত্তরা অফিসের দালালদের গডফাদার ও প্রতারক চক্রের মূল হোতা মো. আতাউর রহমান ওরফে (আতা)সহ ইতিপূর্বে কমপক্ষে প্রায় ১৪/১৫ জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা এবং জেল খানায় পাঠিয়েছে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল সোমবার সকালে বিআরটিএ উত্তরা অফিস সরেজমিন পরিদর্শন, ভুক্তভোগী, সেবা প্রত্যাশী, এলাকাবাসী ও বিভিন্ন পেশার লোকজনের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান জানান, অদক্ষ চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার ফলে দিনকে দিন সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। বিআরটিএ গুলোতে যেভাবে পরীক্ষা নেওয়া হয়, তাতে দক্ষ চালক পাওয়া যাবে না। এখাতে সংস্কার প্রয়োজন। আমাদেরকে এ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সংস্কার লাগবে বিআরটিএর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা মেট্রো সার্কেল-৩ বিআরটিএ উত্তরা অফিসের পূর্ব, পশ্চিম পাশে ও সামনে অসংখ্য ফটোকপির দোকান, চায়ের দোকান ও খাবার হোটেল গুলো দালাল গড়ে উঠেছে। আর এসব দোকান গুলোতে দালাল ও প্রতারক চক্রের আখড়া। তারা শিকারের আশায় দোকানে ঘাপটি মেরে বসে থাকে। দিন দিন দোকান গুলো দালালদের আড্ডা খানায় পরিণত হয়েছে। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের কাছে জিম্মি। বলতে গেলে এ অফিসে দালাল ও প্রতারক চক্রের পোয়া বারো। এ সিন্ডিকেটের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর কিছু দিন জেল খেটে কিংবা আদালত থেকে জামিন নিয়ে আবার পূর্বের পেশায় ফিরে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে ।
তথ্য অনুসন্ধান ও একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানান, স্থানীয় ফটোকপির দোকান, চায়ের দোকান ও খাবার হোটেল গুলো অপরাধীদের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। সেই সাথে বিআরটিএ অফিস কর্তৃক অদক্ষ চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। সে কারণে সড়ক ও মহাসড়কে দিনকে দিন দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যাও। ফলে জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার প্রয়োজন বিআরটিএ। এমনটাই মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। বর্তমানে বিআরটিএ উত্তরা অফিটি দেখার যেন কেউ নেই! এব্যাপারে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট মহলের কঠোর নজরদারী কিংবা তড়িৎগতিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। বিআরটিএ উত্তরা অফিসে টাকা ছাড়া ফাইল নড়েনা। ভবনের ইট কিংবা অফিসের চেয়ারও বলে টাকা চাই, টাকা দে। এছাড়া নড়ে না দালালের সাংকেতিক ইশারা। সংকেত ছাড়া সাক্ষর হয় না ফাইলের পাতাও। লিখিত পরীক্ষা থেকে ড্রাইভিং টেস্টসহ সব জায়গাতেই যেন দালাল চক্রের সীমাহীন অপ্রতিরোধ্যতা। এখনকার দালাল চক্র গুলো এতটাই তৎপর, তাদের রয়েছে ভিন্ন ও অভিন্ন নানান কার্য কৌশলী গ্রুপ। যে গ্রুপগুলোর নেতৃত্ব দেন স্থানীয় কয়েকটি প্রভাবশালী মহল ও অফিসটির বিআরটিএ এ কতিপয় কিছু অসাধু কর্মকর্তা। মূলত তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে কাজ করে চক্রটি। অকেজো ভঙ্গুর গাড়ির ফিটনেসের জন্য রয়েছে একটি চক্র। ড্রাইভিং টেস্ট ও লিখিত পরীক্ষায় পাস করানোর জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা আরো দু’টি চক্র।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালের ২৭ মে বিআরটিএ উত্তরা কার্যালয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগীতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এসময় ৬ জন দালালকে আটকের পর তাদেরকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট। সূত্র বলছে, ইতিপূর্বে বিআরটিএ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনিসুজ্জামান এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। ইতিপূর্বে আটককৃতরা হলেন, মো. ফরহাদ আলী (৩২), পিতা. আবু তালেব, মো. হাসানুজ্জামান খান (৩৫) পিতা মো. মান্নান খান, মো. লিটন (৩৫) পিতা হাজী আ. মালেক, মো. তুহিন (৩২) পিতা.-কোরবান আলী, মো. জুয়েল (৩৬), পিতা-আনোয়ার হোসেন ও সোহেল রানা (৩১), পিতা-আলী আহম্মেদ। আটককৃত ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই আদালতের নিকট তাদের দোষ স্বীকার করেন বিধায় : তাদের প্রত্যেককে তিন মাসের দণ্ডাদেশ প্রদান করে জেল হাজতে প্রেরণ করার আদেশ দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট।
বিআরটিএ উত্তরা অফিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র গুলো জানান, ২০২৫ সালের ৫ মার্চ বেলা ১১টার দিকে একই অফিসে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ২ জন দালালকে আটকের পর তাদের প্রত্যেককে এক মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত-৩ ও ৪ এর পৃথক অভিযান চালায়। এসময় মো. মুরাদ মোল্লা (২২) এবং মুহাম্মদ তরিকুল ইসলাম (৩৫) নামে দুইজনকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত-৬ এর তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজিদ আনোয়ার তৎকালীন তাৎক্ষণিক তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে গণমাধ্যমকে বলেন, দালাল বিরোধী অভিযান আগের চেয়ে আরও জোরদার করা হয়েছে।
অপর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, ২০২৪ সালের ১০ জুলাই বিআরটিএ উত্তরা অফিসে ভ্রাম্যমাণ আদালত ঝটিকা অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ দালাল চক্রের ৪ জন সক্রিয় সদস্যকে আটক করে। এ সময় অবৈধ দালালিতে জড়িত থাকার দায়ে দালাল চক্রের ৪ জনকে আটক করে বিভিন্ন দণ্ডাদেশ প্রদান জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। ঘটনা দিন বুধবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩-এর এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনিসুজ্জামান এ সাঁড়াশি অভিযানে নেতৃত্ব দেন। আটককৃত ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই আদালতে তাদের দোষ স্বীকার করেন এবং তাদেরকে এক মাসের বিনাশ্রম কারা দণ্ডাদেশ প্রদান করে বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই সময় আটক হওয়া ৪ দালাল হলেন, জনি চৌধুরী (৩০), পিতা আব্দুল মানান, মো. সালেহ আকরাম (৪২), পিতা মৃত সোবহান, আবু বক্র (১৯), পিতা আব্দুর রশিদ, মো. রিয়াজ হোসেন (২৪)। পিতা নজির উল্ল্যাহ। এ সময় দায়িত্বরত এক্সিকিউটি ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, দালাল ও প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে-বিআরটিএ উত্তরা অফিসে আগত গ্রাহকদের কাছ থেকে দ্রুত কাজ করিয়ে দেওয়ার নাম করে কাগজপত্র ও নগদ টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে এবং সেটি ভবিষ্যতেও থাকবে। গ্রাহক ও সেবা প্রত্যাশিদের উদ্দেশে তিনি তখন জানান, বিআরটিএ আগত গ্রাহকগণ সরাসরি বিআরটিএ’র কর্মকর্তা কর্মচারীর কাছে আসলে দ্রুত সেবা পাবেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র বলছে, ২০২৪ সালের ২২ এপ্রিল বিআরটিএ উত্তরা অফিসের দালালদের গডফাদার ও প্রতারক চক্রের মূল হোতা মো. আতাউর রহমান ওরফে (আতা)কে আটক করে। ওই সময় (তৎকালীন) তাকে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সাজিদ আনোয়ার দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন।
এবিষয়ে বিআরটিএ উত্তরা ঢাকা মেট্রো-৩ সার্কেলের উপ-পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) কাজী মো. মোরছালীন ইতিপূর্বে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নিয়মিত দালাল চক্রগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। কারও বিরুদ্ধে তথ্য প্রমানসহ লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আমরা ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো। বিআরটিএর পরিচালক (প্রশাসন) আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকলে আমরা ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিব। দালালদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সবসময় ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতে ও চলমান থাকবে।
এবিষয়ে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার চেয়ে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, পুলিশ প্রধান (আইজিপি), ডিএমপির পুলিশ কমিশনার, এলিট ফোর্স র্যাব ডিজি, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান, উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি)সহ সরকারের সংশ্লিষ্ঠ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তুরাগ বাসি।