ট্রাইব্যুনালে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য

ইয়াকুবের পেটে গুলি লেগে বেরিয়ে যায় ভুঁড়ি প্রাণ হারান ইসমামুলও

আপলোড সময় : ১২-০৯-২০২৫ ০৭:০৮:০২ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১২-০৯-২০২৫ ০৭:০৮:০২ অপরাহ্ন
কাপড়ের দোকানে চাকরি করেন টিপু সুলতান। থাকেন পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোড এলাকায়। চব্বিশের ৫ আগস্ট চানখারপুলে চালানো পুলিশের নৃশংসতা বা হত্যাযজ্ঞের চাক্ষুষ সাক্ষী এই দোকানি। তার সামনেই গুলি করা হয় ইয়াকুব-ইসমামুলকে। আর দুজনেরই পেটে লেগে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায় গুলি। এমনকি ভুঁড়ি বেরিয়ে যায় ইয়াকুবের। রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার সময় এমন তথ্য তুলে ধরেন টিপু। ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে ১২ নম্বর সাক্ষী হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার জবানবন্দি দেন তিনি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। টিপু সুলতান বলেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমার নৈতিক সমর্থন ছিল। আমার বাসা নাজিম উদ্দিন রোডে। ৫ আগস্ট বেলা ১১টা বা সাড়ে ১১টার দিকে ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাসা থেকে বের হই। এরপর চানখারপুল বোরহানউদ্দিন কলেজের সামনে অবস্থান নেই। ওই সময় আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে বর্তমান উপদেষ্টা আসিফ মোহাম্মদ সজীব ভূঁইয়াও অংশ নেন। একপর্যায়ে আমরা সামনের দিকে যেতে থাকি। বোরহানউদ্দিন কলেজের গেটের সামনে পৌঁছালে চানখারপুল মোড় থেকে আমাদের লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও গুলি ছুড়তে থাকে পুলিশ। আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাই। পরবর্তী সময়ে শুনি নাজিম উদ্দিন রোডে সোহাগ হোটেলের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আমার এলাকার বড় ভাই ইয়াকুব। তিনি বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শুনে আমি সোহাগ হোটেলের সামনে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি ইয়াকুব ভাইয়ের পেটে গুলি লেগে পিঠ দিয়ে বের হয়ে গেছে। তার ভুঁড়ি বের হয়ে যায়। ওই সময় নিজের টিশার্ট খুলে ইয়াকুবের গুলিবিদ্ধ ক্ষতস্থানে বেঁধে দেন জাহিদ নামের একজন। এরপর ইয়াকুবকে একটি অটোরিকশায় তুলে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেন একজন আন্দোলনকারী। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তবে আমরা বোরহানউদ্দিন কলেজের কাছাকাছি অবস্থান করতে থাকি। পুলিশ গুলি করতে করতে বোরহানউদ্দিন কলেজের গেট পর্যন্ত চলে আসে। একপর্যায়ে আমাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় একজন পুলিশ। কিন্তু গুলিটি আমার পাশে থাকা আন্দোলনকারী ইসমামুলের পেটে লেগে পিঠ ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তাকে আমি অটোরিকশায় উঠিয়ে দিলে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেন আরেকজন আন্দোলনকারী। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনদিন পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনিও মারা যান। এ ছাড়া, ওই দিন চানখারপুলে পুলিশের গুলিতে ছয়জন আন্দোলনকারী নিহত হন। আমি এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। সাক্ষ্যগ্রহণে কোনো আসামির নাম না আসায় টিপুকে জেরা করেননি স্টেট ডিফেন্স ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। টিপু সুলতান ছাড়াও প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আজ আরেকজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তার নাম মো. মনিরুজ্জামান। ছেলেসহ তিনিও গত বছরের ৫ আগস্ট চানখারপুলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। ট্রাইব্যুনালে মনিরুজ্জামানও সেদিনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভয়াবহ চিত্রের বর্ণনা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে জড়িতদের বিচার চেয়েছেন। এদিন ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ান, তারেক আবদুল্লাহসহ প্রসিকিউশন টিমের অন্যরা। এ ছাড়া, আজও কারাগার থেকে এ মামলার চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। তারা হলেন- শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশেদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম। পলাতক আসামিরা হলেন- সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল। এ মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ হবে আগামী রোববার। প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net