টিআইবির গবেষণা

গণপরিবহনে সংরক্ষিত হচ্ছে না যাত্রীদের অধিকার

আপলোড সময় : ১৩-০৯-২০২৫ ০১:১০:১৬ পূর্বাহ্ন , আপডেট সময় : ১৩-০৯-২০২৫ ০১:১০:১৬ পূর্বাহ্ন
* যাত্রীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হন
* পরিবহণে কর্মরত ২২ শতাংশ শ্রমিক নেশা করে গাড়ি চালান। ফলে দুর্ঘটনার হারও বেশি
* গাড়িতে নকশা পরিবর্তন করে অতিরিক্ত আসনও সংযোজন করা হয়
* কোম্পানির বাসে নিয়ম অনুযায়ী টায়ার, ইঞ্জিন অয়েল, ব্রেক-সংক্রান্ত সরঞ্জাম ইত্যাদি পরিবর্তন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না

দেশের সড়ক পরিবহণ খাতে দীর্ঘদিন ধরেই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বারবার বিষয়টির প্রতি দৃষ্টিপাত করা সত্ত্বেও পরিস্থিতির উন্নতির কোনো লক্ষণ দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। বরাবরের মতোই সাধারণ যাত্রীরা থাকছেন অধিকার থেকে বঞ্চিত। প্রতিনিয়ত নারী যাত্রীরা যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছেন।  অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এ নৈরাজ্য এখন আর কমার অবস্থায় নেই। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এ খাতে দেশব্যাপী দুর্নীতির মহোৎসবে বছরে প্রায় ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা চাঁদা বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে বাধ্য হন বাস মালিক-শ্রমিকরা। বাস কোম্পানিগুলোর প্রায় ৯২ শতাংশ মালিক ও পরিচালনা পর্ষদের সংশ্লিষ্টরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই ক্ষমতাসীন দল এবং বাকি ১২ শতাংশ অন্যান্য দলের।
টিআইবির ওই গবেষণায় আরো বলা হয়, যাত্রীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হন। এসব পরিবহণে কর্মরত ২২ শতাংশ শ্রমিক নেশা করে গাড়ি চালান। ফলে দুর্ঘটনার হারও বেশি। গাড়িতে নকশা পরিবর্তন করে অতিরিক্ত আসনও সংযোজন করা হয়। কোম্পানির বাসে নিয়ম অনুযায়ী টায়ার, ইঞ্জিন অয়েল, ব্রেক-সংক্রান্ত সরঞ্জাম ইত্যাদি পরিবর্তন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা জনান, বাসের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়মিত না করায় তাদের গাড়ি রাস্তায় কালো ধোঁয়া নিঃসরণ করে। বাস কোম্পানিগুলোর এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা ঘটছে না। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে মালিক-শ্রমিক সংগঠন ও সিন্ডিকেট এ খাতকে জিম্মি করে রেখেছে। এ জিম্মিদশার সুযোগ নিয়ে অনৈতিক সুবিধা ভোগ করছে সিন্ডিকেট। ক্ষেত্রবিশেষে এই আঁতাতের সামনে সরকারও যেন ক্ষমতাহীন। অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে তাই আইন ও নিয়মনীতি বাস্তবায়ন করতে পারছে না সরকার। এতে একদিকে যাত্রীদের প্রত্যাশিত সেবা মিলছে না, অন্যদিকে সাধারণ শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে হচ্ছেন বঞ্চিত। দেশের, বিশেষ করে রাজধানীর গণপরিবহণ খাতে যে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাকে এক কথায় ভয়াবহ বললেও কম বলা হবে। পরিবহণ চালকদের অধিকাংশই অদক্ষ, প্রশিক্ষণহীন ও লাইসেন্সবিহীন। বাস, মিনিবাসের বড় অংশেরই নেই ফিটনেস। যাত্রী পরিবহণে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত তারা। এ কারণে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। শুধু দুর্ঘটনাই নয়, গণপরিবহণে যাত্রী হয়রানি ও প্রতারণা নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। রীতিমতো জোচ্চুরি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। বছরের পর বছর এ ধারা চলে এলেও তা বন্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ খাতে বিভিন্ন পর্যায়ে চলা চাঁদাবাজি ও অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে সিটি করপোরেশন, হাইওয়ে পুলিশ, মালিক-শ্রমিক সংগঠনের যোগসাজশ রয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। বিআরটিএ তার নির্ধারিত ভূমিকা রাখতে স্পষ্টতই ব্যর্থ হয়েছে।
দেশে গণপরিবহন চলার ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে গত ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে। লক্কড়-ঝক্কড় বাস চলছে দাপটের সঙ্গে। যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগে। ভাড়া নিয়েও রয়েছে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বাড়াবাড়ি। দূরপাল্লার বাসগুলোর মান কিছুটা ভালো থাকলেও রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে যাত্রীসেবা বা যাত্রী অধিকার এখনো উপেক্ষিত। অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা যেন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। মেনে নেওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো উপায়ও নেই সাধারণ যাত্রীদের কাছে। এ ছাড়া ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশ নিয়মিত বা মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও তাতে পরিস্থিতির উন্নয়নে খুব বেশি কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ২০২৪ সালের হিসেবে, সারা দেশে গণপরিবহনের প্রধান বাহন বাসের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৪৪ হাজার ৫০৯টি। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৫টি বড় বাস এবং মিনিবাস ২৮ হাজার ৪৫৪টি। তবে দেশে নিবন্ধিত (রেজিস্ট্রেশন) বাসের সংখ্যা ৫৫ হাজার ৮৪২টি বলেও জানা গেছে। এর মধ্যে কেবল রাজধানী ঢাকায় সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার বাস চলাচল করে বলে জানিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, গণপরিবহন খাতে যাত্রীসেবা, শৃঙ্খলা-নিরাপত্তাসহ সবকিছুই আগের মতো চলছে। কোথাও সেভাবে পরিবর্তন হয়নি। বরং কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা আরও বেড়েছে। এর মধ্যে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় এখনো বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া পরিবহনকেন্দ্রিক যে চাঁদাবাজি হতো সেগুলোর কেবল হাতবদল হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সরকারের দুটি প্রতিষ্ঠান ঢাকার সড়কে যানবাহন চলাচলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। একটি বিআরটিএ, অন্যটি পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এর মধ্যে বিআরটিএ ফিটনেস সনদ ও রুট পারমিট দেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। বত্রিশটি বিষয় পর্যবেক্ষণের পর তাদের ফিটনেস সনদ দেওয়ার কথা থাকলেও জীর্ণদশার ভাঙাচোরা বাসগুলো নিয়মিত সনদ পেয়ে যাচ্ছে ! আবার রাস্তায় নামার পর লক্কড়-ঝক্কড় বা ফিটনেসহীন বাস জব্দ করার কথা থাকলেও ট্রাফিক বিভাগ থেকেও সেটি খুব একটা দেখা যায় না। বরং ট্রাফিক পুলিশের সামনে দিয়েই বীরদর্পে চলছে এসব বাস। তবে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিত বাস ও মোটরবাইকসহ নানা ধরনের যানবাহনে মামলা ও জরিমানার কাজগুলো করে যাচ্ছে।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net