
ছাগলকাণ্ডে আলোচনায় আসা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান এবং তার স্ত্রী সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকিকে দুর্নীতির মামলায় এক দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) অনুমতি দিয়েছে আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মহানগর হাকিম মনিরুল ইসলাম গতকাল রোববার তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের কৌঁসুলি মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম এ তথ্য দিয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক সাবিকুন নাহার গেল ১৩ অগাস্ট মতিউর ও লায়লা কানিজের তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে শুনানির দিন গত ৩১ অগাস্ট ধার্য করেছিলেন। তবে ওইদিন তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় শুনানি পিছিয়ে গতকাল রোববার ধার্য করেন। এদিন শুনানিকালে দুজনকে আদালতে হাজির করা হয়। হাজির হন তদন্ত কর্মকর্তাও। রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন দুদকের আইনীজীব মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম। তিনি আদালতকে বলেন, ‘ভুয়া কোম্পানি ও কাগজপত্র দেখিয়ে তারা টাকা হাতিয়ে নেন। ওই কোম্পানি আর আলোর মুখ দেখেনি। তারা টাকা আত্মাসাৎ ও মানিলন্ডারিং করেন। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।” আসামিদের পক্ষে আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান লিটন ঢালী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি আদালতকে বলেন, “দুদক প্রসিকিউটর যে বক্তব্য দিলেন মামলার এজাহারের সাথে তার কোনো সামঞ্জস্য নেই। “মতিউর রহমান অসুস্থ। তার রক্তচাপ ১৫০/১০০। তার বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। যেকোনো সময় একটা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাদের রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করছি।” প্রয়োজনে তাদের কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করেন এ আইনজীবী। শুনানির পর আদালত থেকে তাদের একদিনের রিমান্ডের আদেশ আসে। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, মতিউর রহমান এবং লায়লা কানিজের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬১১ টাকা মূল্যের সম্পত্তির ‘তথ্য গোপন’ এবং জ্ঞাত আয়ের সাথে ‘অসঙ্গতিপূর্ণ’ ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৩ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলা তদন্তাধীন। দুদক বলেছে, এ দুইজনের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ প্লেসমেন্ট শেয়ার কেনাবেচার তথ্য রয়েছে। প্লেসমেন্ট শেয়ার কেনাবেচায় ‘জাল-জালিয়াতির’ বিষয়টি উদঘাটন এবং এর সাথে অন্য কারো সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না তা জানা দরকার। এছাড়া মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের মেয়ে ফারজানা রহমানের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৩ টাকার সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার বিষয়ে মতিউর রহমান ও লায়লা কানিজকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন মনে করছে দুদক। গত বছর কোরবানির জন্য ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদিক অ্যাগ্রো থেকে ইফাত নামের এক তরুণের ১৫ লাখ টাকা দামে ছাগল কেনার ফেইসবুক পোস্ট ঘিরে মতিউর রহমানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। ছাগলকাণ্ডের আলোচনার মধ্যে মতিউর রহমানকে এনবিআর থেকে সরানো হয়। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি মতিউর রহমান এবং তার স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লায়লা কানিজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।