দেড় শতাধিক সাবেক আমলাকে খুঁজছেন গোয়েন্দারা

আপলোড সময় : ১৫-০৯-২০২৫ ০৭:৩২:১৯ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৫-০৯-২০২৫ ০৭:৩২:১৯ অপরাহ্ন
১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ সময়ে আওয়ামী লীগের সমর্থনে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘জনতার মঞ্চ’ ব্যানারে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। সচিবালয়সহ সারা দেশে কর্মরত আওয়ামীপন্থি কয়েকশ সরকারি আমলা আন্দোলনে সমর্থন জোগায়। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে ক্ষমতা ছেড়ে দেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ‘জনতার মঞ্চের’ সেই ফর্মুলা ফের কাজে লাগিয়ে এবার মাঠে ফিরতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য দলটির প্রেসক্রিপশনে নতুন করে ‘মঞ্চ ৭১’ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠিত হয়েছে বলে দাবি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার।
গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ প্ল্যাটফর্মে দেড় শতাধিক সাবেক ও বর্তমান আমলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যুক্ত হয়েছেন। সংগঠনটি গত ২৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করলে তা ভন্ডুল করে আলোচকদের কয়েকজনকে কিছু লোক মব সৃষ্টি করে পুলিশে দেন।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, জনতার মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত থাকা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে যে ফৌজদারি মামলা হয়েছিল, তা আবারও চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে মামলা চালু করতে সলিসিটর উইংয়ে চিঠি পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। জনতার মঞ্চে অংশ নেওয়া ২০৯ জনের একটি তালিকাও প্রস্তুত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান ও ভূঁইয়া মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ছাড়াও সাবেক সচিব ও আওয়ামী লীগের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এবং সাবেক সচিব সিরাজ উদ্দিন আহমেদসহ দেড় শতাধিক আমলা ওই মঞ্চে অংশে নিয়েছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, জনতার মঞ্চের সেই কুশীলবরা ফের সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। তারা ভিন্ন নামে মাঠে নামতে চান। এরই অংশ ‘মঞ্চ ৭১’। এ প্ল্যাটফর্মের আড়ালে জনতার মঞ্চ অনুসরণ করেই আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফেরাতে চান তারা। এ সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজনকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, মঞ্চ ৭১-এর আড়ালে জনতার মঞ্চের সেই কর্মচারীরা ফের মাঠে নামছেন কি না, আমার জানা নেই। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের জনতার মঞ্চে যাওয়া একেবারেই উচিত হয়নি। নতুন করে কোনো মঞ্চেও তাদের যাওয়া উচিত নয়। তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। এ ধরনের মঞ্চে যোগদান করলে তা নিঃসন্দেহে সরকারদ্রোহী হয়। তিনি আরও বলেন, সরকারি কর্মচারীরা এ ধরনের রাজনৈতিক মঞ্চে যোগ দিয়ে চাকরির ঐতিহ্য নষ্ট করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কিংবা না নেওয়ার বিষয়টি একান্তই সরকারের। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে ‘জনতার মঞ্চ’ মামলাটি প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগ। এখন সেটি আবারও চালু করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে সাবেক দুজন সচিবকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। দুজনই ১৯৯৬ সালে জনতার মঞ্চে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। তারা হলেন সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, সাবেক সচিব ভূঁইয়া মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম। লতিফ সিদ্দিকী গত ২৮ আগস্ট ডিআরইউতে ‘মঞ্চ ৭১’ প্ল্যাটফর্মের গোলটেবিলে বক্তব্য দিতে গিয়ে মবের হাতে আটক হন। পরে তাকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের আরও বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, জনতার মঞ্চে অংশ নেওয়া ও আওয়ামী সুবিধাভোগী সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান এক বছর ধরে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নানা সমালোচনা করে যাচ্ছিলেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর তাকে শাহবাগ থানার একটি মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন বিশ্লেষক ও সাবেক আমলা মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া বলেন, জনতার মঞ্চ বাংলাদেশের প্রশাসনের জন্য সবচেয়ে বড় ক্ষত। কর্মচারীরা চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে ক্ষমতার লড়াইয়ের আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো প্রশাসনকে কলঙ্কিত করেছিলেন। আন্দোলনে অংশ নেওয়ারা পরে বড় বড় দপ্তরে পদায়ন পাওয়ায় অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজনীতির সংস্পর্শে চলে যান। এই সংস্কৃতি থেকে বের হওয়া কঠিন। প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া বড় ধরনের অপরাধ।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net