ডাকসুর পর জাকসু নির্বাচনেও ছাত্রদলের ধারাবাহিক বিপর্যয়ে সর্তক বিএনপি হাইকমান্ড

শিবিরের জয় বদলে দিচ্ছে রাজনীতির গতিপথ

আপলোড সময় : ১৬-০৯-২০২৫ ০৫:৫৬:৪৩ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৬-০৯-২০২৫ ০৫:৫৬:৪৩ অপরাহ্ন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু-জাকসু) নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় পেয়েছে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল। অন্যদিকে জয় তো দূরের কথা, প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল ও বামপন্থী প্যানেলগুলো। তবে ডাকসুর পর জাকসু নির্বাচনেও ছাত্রদলের ধারাবাহিক বিপর্যয়ে সর্তক বিএনপি হাইকমান্ড। এক সময়ের অপ্রতিরোধ্য ছাত্র সংগঠনটির এমন দুর্বল হয়ে পড়া এবং শিক্ষার্থীদের সমর্থন হারানোর কারণগুলো অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করতে দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন দলের শীর্য পর্যায়ের নেতারা। এই অপ্রত্যাশিত হারে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন তারা। এ দুই ছাত্রসংসদের ফলাফল শুধু ক্যাম্পাস রাজনীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং তা জাতীয় রাজনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোয় শিবিরের বিস্তৃত প্রভাব কেবল বিএনপি নয়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বদলে যেতে পারে সব সমীকরণ। অনেকে মনে করেন, ডাকসুতে শিবিরের জয় ঠেকাতে শিবিরবিরোধী সংগঠনগুলোর জোট গড়ে মাঠে নামা উচিত ছিল। জাতীয় নির্বাচনে জোট গড়ার ক্ষেত্রে ডাকসুর এই অভিজ্ঞতা প্রভাব ফেলতে পারে। জাতীয় রাজনীতিতে তৈরি হতে পারে নতুন মেরুকরণ। আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ঘিরে যে রাজনৈতিক মেরুকরণ ছিল সেটি এখন বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীকে ঘিরে হতে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডাকসু ও জাকসুতে শিবিরের বিজয়ের পর এখন জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে আরও বেশি চিন্তা করতে হবে বিএনপির। শিবির সমর্থিত প্যানেলের এই বিজয় জামায়াতকে বিরোধী শক্তিগুলোর কাছাকাছি নিয়ে যাবে। যেটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের সমীকরণ বদলে দিতে পারে। রাজনৈতিকভাবে যারা জামায়াত ও শিবিরের ঘোরতর বিরোধী, তথা বামপন্থীসহ ছোট ছোট দলগুলো বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে পারে। এক্ষেত্রে ছোটখাট দলগুলোর কদর বাড়বে বলেও মনে করা হচ্ছে। একইভাবে ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিপুল সফলতা ইসলামপন্থী, ডান ও মধ্যপন্থীদের জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট গঠনে উৎসাহিত করবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ইসলাপন্থী এ দলটির যে জোট গঠনের প্রচেষ্টা, সেটিকে আরও সহজ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিএনপির মতো বড় দল এখন আর জামায়াতের শক্তিকে খাটো করে দেখবে বলে মনে হয় না। তারা এখন নিশ্চয়ই হিসাব-নিকাশ করেই জামায়াতকে মোকাবিলার কৌশল নেবে। এক্ষেত্রে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জোটের রাজনীতিতে ছোট ছোট দলগুলোর কদর বাড়বে। তবে ডাকসু এবং জাকসু নির্বাচনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের নিয়ে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ছাত্র সংগঠনের খারাপ ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে তাদের দর-কষাকষির ক্ষমতা কমাতে পারে। ডাকসু ও জাকসুর এই ফলাফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে তরুণ ভোটারদের মানসিকতায়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিবিরের শক্ত উপস্থিতি প্রমাণিত হওয়ায় নতুন ভোটারদের একটি বড় অংশ জামায়াতের দিকে ঝুঁকতে পারে। দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের একটা ধারণা ছিল, বিএনপি একটি বড় দল এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারাই ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। কিন্তু ডাকসু ও জাকসুতে ছাত্রদলের পরাজয় সেই ধারনায় বড় ধরনের ধাক্কা দিল। জামায়াত ইসলামী মধ্যপন্থী এবং ইসলামপন্থীদের যে জোটগঠনের চেষ্টা করছে সেই জোট আগামীতে অকল্পনীয় সফলতা দেখাতেও পারে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের বিজয় সংস্কারসহ নানা ইস্যুতে বিএনপির ওপর চাপ তৈরি করবে। কেন্দ্রীয় রাজনীতি থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাস ও কর্মসূচিসহ সবকিছুতে বিএনপিকে নতুন করে ভাবতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত-শিবিরের উত্থান আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। ফলে কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও নতুন বাস্তবতা তৈরি হবে, আরও বেশি গুরুত্ব পাবে জামায়াতে ইসলাম। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। বিশেষ করে বিএনপি-এনসিপি-কমিউনিস্ট পার্টিসহ বামপন্থী সংগঠনগুলোর অফিসিয়ার পেজ থেকে তাদের সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইতেও দেখা গেছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ভোট চাওয়ার অভিযোগও এসেছে। এ ধরনের অভিযোগে ছাত্রদলের একটি উপজেলার সদস্য সচিবকে বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, গত বছর ৫ আগস্টের পর গত এক বছরে সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের ছায়া এবং দলীয় লেজুরবৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির প্রভাবের কারণে এই নির্বাচনে ছাত্রদলের পতন হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ বিভাজন, গ্রুপিং এবং সমন্বয়ের অভাবকেও তারা এই পরাজয়ের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা আরও বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্রদলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সামনে এসেছে। অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী মনে করেছেন, ছাত্রদলের আচরণ আগের ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের মতোই হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া ছাত্রদল জিতলে পুরনো কায়দার রাজনীতি ফিরে আসার আশঙ্কা থাকায় অনেকে ভোট দিতে দ্বিধা করেছেন বলে মনে করছেন তারা। যদিও এসব অভিযোগ সরাসরি খারিজ বা গ্রহণ কোনোটাই করতে পারছেন না ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, আমাদের কাছে নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপি সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে। তবুও এমন ফলাফল কেন হলো তা আমরা যাচাই ও বিশ্লেষণের চেষ্টা করছি। এর পেছনের কারণগুলোও আমরা খতিয়ে দেখছি। আশা করছি, শিগগিরই এই মূল্যায়ন সম্পন্ন করে আমরা দুর্বলতাগুলো দূর করতে সক্ষম হবো। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন বলেন, নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কিছু কর্মকর্তা সরাসরি যুক্ত ছিলেন, যাদের কেউ কেউ জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, আবার কেউ কেউ আওয়ামীপন্থী। শিক্ষক ও প্রশাসকরা সবাই মিলে কাজ করার কারণে ছাত্রদলের বিপর্যয় হয়েছে। হয়তো সাংগঠনিক ছাত্রদলের দূরদৃষ্টি কিছুটা কম ছিল, পরিস্থিতি কী হবে, তা তারা গভীরভাবে ভাবেনি। আমরা সব সময়ই বলে আসছি, জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটেও ষড়যন্ত্র হচ্ছে, ডাকসুতেও এর প্রতিফলন দেখা গেছে। তবে মূল দায় প্রশাসনের পক্ষপাতেরই বলে আমি মনে করি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের ইতিহাস এবং রাজনৈতিক ইতিহাসে দেখা গেছে সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্র আলাদা। সেখানে ভোটারদের মানসিকতা আলাদা। সেক্ষেত্রে যারা মনে করছে এই নির্বাচনের ফলাফলটা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করবে আগামী নির্বাচনে, সেই ক্যালকুলেশনটা সঠিক নয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে হারজিতের ব্যাপারটা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এখন ইজ্জতের লড়াই হয়ে গেছে। যে কারণে এই নির্বাচন ও এর ফলাফল নিয়ে বিএনপি, জামায়াত কিংবা এনসিপির মতো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উচ্ছ্বাস ও আশঙ্কা দুইটাই আছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান বলেন, ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল অনেক বেশি প্রভাব রাখবে জাতীয় রাজনীতিতে। কারণ, ধরে নেওয়া হচ্ছে এখানে যারা জয়ী হবে তাদের একটা মনস্তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক প্রভাব তৈরি হবে সারা বাংলাদেশে।

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net