* বালতির হাতল দিয়ে এক মাস ধরে ছাদ ফুটো করেন চার আসামি * অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

বগুড়া কারাগার থেকে পালিয়ে ফের গ্রেফতার ৪ ফাঁসির আসামি

আপলোড সময় : ২৬-০৬-২০২৪ ১০:৩৯:২৫ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ২৭-০৬-২০২৪ ১০:০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ও বগুড়া প্রতিনিধি
বগুড়া জেলা কারাগারের ছাদ ফুটো করে পালিয়ে যান মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি। এর কিছুক্ষণের মধ্যে শহরে চেলোপাড়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে কারাগারের কনডেম সেল থেকে পালান আসামিরা। আর পালানোর পূর্বে তারা বালতির হাতল দিয়ে এক মাস ধরে ছাদ ফুটো করেন। সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পিএম ইমরুল কায়েসকে প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে জেলা পুলিশ সুপারের একজন, র‌্যাব, ডিআইজি প্রিজন, ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ও গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী বা তার প্রতিনিধি থাকবেন। বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃতরা হলেন কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী থানার দিয়াডাঙ্গা গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে নজরুল ইসলাম ওরফে মজনু ওরফে মঞ্জু (৬০), নরসিংদী জেলার মাধবদী থানার ফজরকান্দি গ্রামের মৃত ইসরাফিলের ছেলে আমির হামজা ওরফে আমির হোসেন (৪১), বগুড়ার কাহালু উপজেলার উলট্ট গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে জাকারিয়া (৩৪) এবং বগুড়া সদরের কুটিরবাড়ী গ্রামের ইসরাইল শেখের ছেলে ফরিদ শেখ (৩০)। তারা প্রত্যেকেই হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। গতকাল বুধবার ভোররাত ৩টা ৫৫ মিনিটে কারাগারের জাফলং ভবনের কনডেম সেলের চার আসামি কারাগার থেকে পালিয়ে গেলেও মাত্র ১৫ মিনিটের মাথায় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, আসামিরা পালিয়ে যাওয়ার পর আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ছিল তাদের গ্রেফতার করা। আমরা মাত্র ১৪ মিনিটের মাথায় তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। এটা একটা প্রাথমিক স্বস্তির বিষয়। কারাগার থেকে আসামিদের পলায়নের ঘটনা বর্ণনা করে জেলা পুলিশের প্রধান বলেন, আসামিরা অভিনব পন্থা অবলম্বন করেছে। ভবনটি বেশ পুরানো। তারা প্রায় এক মাস ধরে এই পরিকল্পনা করেছে। তারা বালতির হাতল লোহা বা স্টিল নির্মিত সেটি সোজা করে ছাদের অংশ ফুটো করেছে। ধারাবাহিকভাবে তারা এটি করেছে। ভবনটিতে কোনো রড ছিল না। ইট-সুরকির অনেক পুরনো ভবন। ফুটোটি তারা ধীরে ধীরে বড় করেছে। এ ছাড়া পুরনো চাদর, গামছা ও কাপড় পর্যায়ক্রমে বেঁধে ছাদ পর্যন্ত একটি রশির মতো তৈরি করে। একটি পাটাতন তৈরি করে। মূলত পাটাতনে পাড়া দিয়ে রশি বেয়ে ছাদের ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যায়। এরপর ছাদ থেকে নেমে প্রিজন সেলের সামনে একটি উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ আছে। সেটি লোহার খাঁচা দিয়ে বদ্ধ। সেই লোহার খাঁচার উপর দিয়ে ক্রলিং করে কারাগারের প্রাচীরের কাছে যায়। এবং একইভাবে কাপড় জোড়া দিয়ে রশি তৈরি করে প্রাচীর টপকে যায়। তারপর পাশের করতোয়া নদীর উপর যে ব্রিজ ছিল, সেটি দিয়ে পাশের চাষিবাজারে পৌঁছে যায় বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, তারা চারজনই সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে কাজটি করেছে। এই ভবনে পাশাপাশি চারটি ফাঁসির আসামিদের প্রকোস্ট রয়েছে। এর একটিতে এই চারজন ছিলেন। প্রতিটি প্রকোস্ট আলাদা। জেলা পুলিশ সুপার বলেন, আসামিরা ছাদের যে জায়গাটি ফুটো করার জন্য বেছে নিয়েছে সেটি বাইরে থেকে দেখা যায় না। কারারক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিতে তারা ওই কর্নারের অংশটি বেছে নিয়েছিল। ঘটনার পর পরই জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বগুড়া কারাগার ব্রিটিশ আমলে তৈরি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখা গেছে ভবনের অনেক স্থান খারাপ। ওই চার আসামিকে এ বছরের ১ জুন বিভিন্ন কারাগার থেকে বগুড়ায় নিয়ে আসা হয় জানিয়ে জেলা প্রশাসক জানান, এরপর তিনি ওই কারাগার পরিদর্শনও করেছিলেন। তিনি বলেন, গতকাল বুধবারও পরিদর্শনের সময় দেখেছি, ওরা পুরাতন এবং নাজুক ছাদের যে অংশে ফুটো করেছে সেখানে ছাদে কোনো রড ছিল না। চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি ছিল ওটা। আমরা এসব স্থান সংস্কারের কথা বলেছি। এছাড়া যেদিক দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে আসামিরা সেখানে নিরাপত্তা চৌকি স্থাপনের কথা বলা হয়েছে।
সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি এম ইমরুল কায়েসকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে জেলা পুলিশ সুপারের একজন, র‌্যাব, ডিআইজি প্রিজন, ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ও গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী বা তার প্রতিনিধি থাকবেন। তদন্তের জন্য কোনো সময় বেঁধে দেয়া হয়নি তবে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, প্রতিবেদনটি ডিআইজি প্রিজনকে দেয়া হবে। তার ওপর ভিত্তি করে কারাগার কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেবেন।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net