দুই’শ বছরের ঐতিহ্য

বরিশালে জলের ওপর ধান-চালের হাট ঢেউয়ের তালে বেচাকেনা

আপলোড সময় : ১৩-০৭-২০২৪ ১১:২৯:৫৯ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ১৩-০৭-২০২৪ ১১:২৯:৫৯ অপরাহ্ন
বরিশাল প্রতিনিধি
এক পশলা বৃষ্টি থামতেই আবার ঘনিয়ে এলো মেঘ। নতুন রূপে সন্ধ্যা নদীর তীর। বর্ষার আকাশে সূর্যের দেখা নেই। মৃদু ঢেউ এসে ভেঙে যাচ্ছে তীরে। এর মাঝেই একে একে নৌযান ভিড়ছে পল্টুনে। কোনোটি ইঞ্জিনচালিত, কোনোটি বৈঠা। কেউ এসেছেন গলুইভর্তি চাল নিয়ে; কেউ ফিরছেন গলুই ভরে। মধ্যেই সরগরম হয়ে উঠেছে নদীর বুক। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাক, পণ্য দেখে বুঝে নেয়ার ব্যস্ততা আর দরকষাকষিতে প্রাণবন্ত পুরো অঞ্চল। ভাসতে ভাসতে ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেই আসেন এখানে। যে কারণে নাম হয়েছে ভাসমান চালের হাট। চালের হাটের ঠিক ওপারটায় বসে ধানের হাট।
চালের হাট ভোর থেকে চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত। এরপর জমে ধানের হাট, যা চলে দুপুর দুইটা পর্যন্ত। স্থানীয়রা বলেন, এ হাটে ক্রেতা ও বিক্রেতা পর্যায়ের সকল লেনদেন তৎনগদ হয় বলে ‘নগদের হাট’ নামেও ডাকেন ব্যবসায়ীরা। ঠিক কত সালে প্রথম জমেছিল এ হাট, তার সঠিক তথ্য জানা নেই কারও। বংশপরম্পরায় ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন কারবারিরা। বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার বিখ্যাত ধান ও চালের ভাসমান হাটের চিত্র এমনই। স্থানীয়দের ধারণা, কমপক্ষে দুইশ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে জমে আসছে ভাসমান হাট। যেখানে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার মণ ধান ও চাল বিকিকিনি হয়। হাটের চিত্র দেখতে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ছুটে আসেন বানারীপাড়ায়। বরিশাল জেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার পশ্চিমের উপজেলা বানারীপাড়া। এ উপজেলা সদরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া সন্ধ্যা নদীর তীরে সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার জমে ভাসমান হাট। এ দুইদিন প্রধানত হাটবার হলেও ক্রেতা-বিক্রেতা বাড়লে রবি ও বুধবার তা বর্ধিত করা হয়। স্থানীয়রা বর্ধিত সময়কে বলেন ‘গালা’।
দক্ষিণের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধান কিনে এনে এ হাটে বিক্রি করা হয়। এখান থেকে তা কিনে কুটিয়ালরা নিজস্ব পদ্ধতিতে চাল তৈরি করে আবার এ হাটেই বিক্রি করেন। প্রায় দুইশ’ বছরের বেশি বয়স হলেও এ হাটে কোনো আড়তদার কিংবা খাজনা আদায়ের ব্যবস্থা নেই। এমনকি বাকিতেও বিক্রি হয় না পণ্য। যে কারণে মধ্যস্বত্বভোগীদের কোনো দৌরাত্ম্য নেই এ ভাসমান হাটে। বিক্রেতারা নৌযানে করে পণ্য নিয়ে এসে হাটের সীমানায় নোঙর করেন। ক্রেতা এসে পছন্দ মতো পরখ করে প্রয়োজনীয় ধান ও চাল নগদ টাকায় কিনে নিয়ে যায়।
কারবারি মিজানুর রহমান বলেন, আমার দাদা ও বাবা ধান-চালের ব্যবসা করতেন। বংশপরম্পরায় আমি ১৮ বছর ধরে এ ব্যবসায় আছি। বানারীপাড়ায় মূলত কুটিয়ালদের ওপর নির্ভর করে ব্যবসা টিকে আছে। তবে বিভিন্নস্থানে অটোরাইস মিল হওয়ায় কুটিয়ালের সংখ্যা কমেছে। তারপরেও এ অঞ্চলের ব্যবসার কেন্দ্র এখনও বানারীপাড়ার ভাসমান হাট। বিগত বছরের তুলায় এবার ব্যবসা ভালো হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ী আবদুল হাই বলেন, প্রতি হাটে এক থেকে দেড় হাজার মণ চাল বেচাকেনা হয় ভাসমান হাটে। গোপালগঞ্জ থেকে ধান নিয়ে আসা ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, বিগত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে ব্যবসা করছি। বানারীপাড়ার ধান ও চালের ভাসমান হাট দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যের একটি অংশ। তিনি আরও বলেন, নৌকায় বসেই পরিমাপ করে ক্রেতার নৌকায় পণ্য তুলে দেওয়া হয়। এজন্য অনেকেই এ হাটকে ডাকেন নগদের হাট বলে।
বরিশালের গবেষক আনিসুর রহমান খান স্বপন বলেন, বানারীপাড়ার ধান ও চালের ভাসমান হাট দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যের একটি অংশ। এ অঞ্চলে বিশেষ করে নদী এলাকার ব্যবসা ও বিনিয়োগের কেন্দ্রবিন্দু বানারীপাড়ার ভাসমান হাট। আমাদের নদী ও অর্থনীতি এবং নদীকেন্দ্রীক ব্যবসার প্রসারে বানারীপাড়ার হাটটি উদাহরণ হতে পারে। কারণ এ হাটের সাথে সম্পৃক্ত কৃষক, ভোক্তা, পাইকার ও কুটিয়াল।
ঐতিহ্যবাহী এ ব্যবসায়ীক কেন্দ্রকে প্রসারিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের এগিয়ে আসা উচিত। বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার অন্তরা হালদার বলেন, ধান ও চালের ভাসমান হাট শুধু স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেনি, যুগ যুগ ধরে এর সুখ্যাতি ছড়িয়েছে দেশ ও দেশের বাহিরে। হাটটি যেহেতু নদীতে মেলে, এ জন্য খাজনা মওকুফ করা হয়েছে।
ফলে এ হাটে ব্যবসা করতে ক্রেতা ও বিক্রেতা সকলেই বেশ আগ্রহী। তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি নদী যতোদিন থাকবে নদীকেন্দ্রীক এমন বাজার এবং বাজারকেন্দ্রীক অর্থনীতিও টিকে থাকবে।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net