কোটা আন্দোলন

স্বামী হারিয়ে ৩ সন্তান নিয়ে অকূল পাথারে আকলিমা আক্তার

আপলোড সময় : ০৩-০৮-২০২৪ ০১:৪১:২৮ অপরাহ্ন , আপডেট সময় : ০৩-০৮-২০২৪ ০১:৪১:২৮ অপরাহ্ন
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
জানি না সন্তানদের নিয়ে বাকি জীবনটা কাটাবো? সবার কাছে আমার একটাই চাওয়া আমাকে একটা চাকরির সুযোগ করে দিন। আমি আমার তিন সন্তানকে নিয়ে কোনোরকম বেঁচে থাকতে চাই।
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া সৈয়দ মোস্তফা কামাল রাজুর (৩৬) স্ত্রী আকলিমা আক্তার। গত ২০ জুলাই দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়ের ডাচ বাংলা ব্যাংকের পেছনে অবরোধকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ চলাকালে একটি গুলি রাজুর মাথায় আঘাত হানে। ২২ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত রাজু লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের মৃত সৈয়দ আব্দুল করিমের ছেলে। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট ছিলেন। সিদ্ধিরগঞ্জের গোধূলি হলের সঙ্গে একটি গাড়ির গ্যারেজ ছিল। স্ত্রী আর তিন সন্তান নিয়ে সেখানে থাকতেন রাজু।
রাজু ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। গ্যারেজ ব্যবসায়ী হিসেবে তার বেশ পরিচিতি ছিল এলাকায়। অনেকে ‘গাড়ির ইঞ্জিনিয়ার’ বলেও ডাকতেন তাকে।
নিহত রাজুর তিন সন্তান। বড় মেয়ে আয়েশা (১৩) কওমি মাদরাসায় পড়ে। ছেলে সৈয়দ রাইয়ান আব্দুল্লাহ (১১) ও ছোট সৈয়দ আবু বকরও (৫) মাদরাসার ছাত্র। ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নিহত রাজুর স্ত্রী আকলিমা আক্তার বলেন, আমার স্বামী কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন। যখন গ্যারেজ থেকে বাসায় ফিরতেন সবসময় তার হাতে কালি লেগে থাকতো। সংঘর্ষের দিন দুপুরে উনি বাসায় খেতে আসেন। খাওয়া শেষে বাইরে গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে বাড়ির ছাদে যান কী হয়েছে তা দেখতে। ছাদ থেকে দেখতে পান সড়কে অনেক মানুষ। তখন তিনিও ছাদ থেকে নেমে বাইরে চলে যান। এসময় হঠাৎ তার পাশে একজন গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তিনি তাকে ধরতে গেলে তার মাথায় একটি গুলি লাগে।
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরই তিনি হামাগুড়ি দিয়ে বাসার নিচ আসেন। তখন তার পুরো শরীর ছিল রক্তাক্ত। স্বামীর এ অবস্থা দেখে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তারপর তার বন্ধুরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে রাত ১১টায় ডাক্তার অপারেশন করে সাধারণ ওয়ার্ডে দেয়। কিছুক্ষণ ওয়ার্ডে থাকার পর অবস্থা খারাপ হলে তাকে লাইফ সাপোর্ট দিতে আইসিউতে নিয়ে যান ডাক্তাররা। সেখানে নেয়ার একদিন পর রাত দেড়টায় দিকে তিনি মারা যান। পরে বাড়িতে নিয়ে এসে দাফন করা হয়।
বিলাপ করতে করতে আকলিমা আক্তার বলেন, স্বামীর টাকা দিয়ে আমাদের পরিবার ও গ্রামে থাকা তার মা চলতেন। এভাবে চলতে কষ্ট হচ্ছিল বিধায় ২৪ জুলাই সিঙ্গাপুর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আল্লাহ এর আগেই তাকে দুনিয়া থেকে নিয়ে গেলো। আমার সুখের সংসার শেষ হয়ে গেলো। জানি না সন্তানদের নিয়ে বাকি জীবনটা কাটাবো? সবার কাছে আমার একটাই চাওয়াÑআমাকে একটা চাকরির সুযোগ করে দিন। আমি আমার তিন সন্তানকে নিয়ে কোনোরকম বেঁচে থাকতে চাই। এ বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ারুল ইসলামকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, রাজু কীভাবে মারা গেছেন তা আমার জানা নেই। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা দরকার।
 

সম্পাদকীয় :

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি : সৈয়দ এম. আলতাফ হোসাইন।

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক : সৈয়দ মোঃ আতিকুল হাসান।

নির্বাহী সম্পাদক আশীষ কুমার সেন।

ফোন : ৪৯৩৫৭৭৩০ (বার্তা), ৮৩১৫৬৪৯ (বাণিজ্যিক), ফ্যাক্স; ৮৮-০২-৮৩১৪১৭৪

অফিস :

প্রকাশক কর্তৃক রোমাক্স লিমিটেড, তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে মুদ্রিত।

সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : খলিল ম্যানশন (৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলা), ১৪৯/এ, ডিআইটি এক্সটেনশন এভিনিউ, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত।

ই-মেইল : [email protected], ওয়েবসাইট : www.dainikjanata.net