
সরকারের পদত্যাগ দাবির এক দফা দাবি আদায়ে ঢাকার রাজপথ দখলে নেন ছাত্র-জনতা। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জনস্রোত এসে মিশে শাহবাগে। ছাত্র-জনতার স্বতস্ফূর্ত আন্দোলনে সেøাগানে সেøাগানে উত্তাল ঢাকা। ঢাকার রাজপথে উল্লাসে ফেটে পড়েন তারা।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টা থেকে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে জড়ো হতে শুরু করেন ছাত্র-জনতা। বেলা গড়িয়ে দুপুর হলে মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয় ওঠে রাজধানী। শাহবাগ, যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, উত্তরা, আজমপুর, বাড্ডা, রামপুরা, মহাখালী, শহীদ মিনার, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকা দখলে নেন ছাত্র-জনতা।
শিক্ষার্থী ও জনতা শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ, গুলি করে শিক্ষার্থী ও জনতাকে হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেন। একই সঙ্গে দেশে সুশাসন ফিরিয়ে আনার দাবিও জানান।
জুলাইয়ের শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। প্রথম সপ্তাহ রাজধানীর শাহবাগ ঘিরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলে। ১৪ জুলাই পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। এরপর দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
সারাদেশে স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে এ আন্দোলন। বাড়তে থাকে প্রাণহানি। ছাত্রদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসেন সর্বস্তরের মানুষ। অবশেষে সরকার পতনের এক দফা দাবি নিয়ে ৪ জুলাই রাস্তায় নেমে আসেন ছাত্র-জনতা।
সকাল সাড়ে ১১টার পরে কারফিউ অমান্য করে উত্তরা এলাকায় জড়ো হতে থাকেন নানা পেশার মানুষ। তারা আজমপুর এলাকায় পৌঁছালে ব্যারিকেড সরিয়ে নেয় র্যাব ও সেনা সদস্যরা। এর এক ঘণ্টা বাদে তারা রাজলক্ষ্মীর দিকে পৌঁছায়। এরপর উত্তরা-আজমপুর থেকে যাত্রা শুরু হওয়া এই জনস্রোত তিন ঘণ্টায় বনানী পার হয়। ওদিকে প্রগতি সরণি দিয়েও হাজারো মানুষ যান শাহবাগের দিকে।
নানা বয়সি, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন এই জনস্রোতে। তাদের অনেকের হাতে পতাকা, কারও হাতে লাঠি দেখা গেছে। কাউকে আবার ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে বিজয়োল্লাস করতে দেখা যায়।
কারফিউয়ের দায়িত্বে থাকা সেনা সদস্যরা আন্দোলনকারীদের বাধা দিচ্ছেন না। কোথাও কোথাও সোনবাহিনীর সঙ্গে হাত মেলাতে, কোলাকুলি করতেও দেখা গেছে আন্দোলনকারীদের।
ঢাকার এই দৃশ্যপট মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৯৯৬ সালের ৩১ মার্চের পরিস্থিতির কথা, যেদিন তীব্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
এর মধ্যেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে আসছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। তার আগে সেনা সদর দফতরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসেছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
দুপুর ১টার দিকে আজিজ মার্কেট ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিউটের দিক থেকে কয়েক হাজার মানুষের দুটি বড় মিছিল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগে আবস্থান নেন।
কিছুক্ষণ পর টিএসসির দিক থেকে আরও একটি বড় মিছিল শাহবাগের দিকে যায়।
এর আগে সকাল থেকে বিভিন্ন দিক থেকে ছাত্র-জনতা জড়ো হয়ে ছোট ছোট দলে শাহবাগ ও শহীদ মিনারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশের বাধায় তা সম্ভব হয়নি।
বেলা পৌনে ৩টার দিকে গাবতলী থেকে পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে, ছেড়ে দেয়া হয়েছে সড়ক। তাতে গাবতলী সেতু এলাকায় আটকে থাকা ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ শুরু করে।
এদিকে শাহবাগে জনতার ঢল নেমেছে। দুপুর দেড়টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ দখল করেন। পরে চতুর্দিক থেকে মিছিল নিয়ে সেখানে আসেন আন্দোলনকারীরা।
শাহবাগে বিপুল পরিমাণ সেনাবাহিনীর সদস্য ও পুলিশ রয়েছে। তবে তারা আন্দোলনকারীদের বাধা দিচ্ছেন না।
বিক্ষোভে আন্দোলনকারীরা ‘এই মুহুর্তে দরকার, সেনাবাহিনী সরকার’, ‘এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’, ‘এক দুই তিন চার, শেখ হাসিনা গদি ছাড়’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’ ইত্যাদি সেøাগান দেন।
জেলায় জেলায় আনন্দ মিছিল
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের খবরে সারাদেশে আনন্দ মিছিল হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চট্টগ্রাম: সদ্য পদত্যাগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে বিজয় উল্লাস করেছে। গতকাল সোমবার বিকেলে ৩টার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর পেয়েই রাস্তায় নেমে এসে বিজয় উদযাপন করতে দেখা গেছে নারী শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষকে। এ সময় উল্লাসিত মানুষকে নানা স্লোগান দিতে দেখা গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বিকেল ৩টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে শুরু হয় বিজয় মিছিল। অংশ নেন নারী-শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ। আধ ঘণ্টার মধ্যে বহদ্দারহাট মোড়ে সমবেত হন অন্তত ১০ হাজার মানুষ। এরপর ছাত্র বিক্ষোভের সময় নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণ করেন বহদ্দারহাট ও মুরাদপুর হয়ে বিজয় মিছিল আগান লালদিঘীর পথে। নগরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এভাবেই খণ্ড খণ্ড বিজয় মিছিল এগোয় লালদিঘীর দিকে। নগরের সব পথ মিশে গেছে ওই ঐতিহাসিক ময়দানে। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ও মাথায় পতাকা স্লোগান দিতে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিন বলে, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন। বিজয় আমাদের। চকবাজারের বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, কি যে আনন্দ লাগছে বোঝাতে পারবো না। এ বিজয় নির্যাতিত ছাত্র জনতার। সেখানে জড়ো হওয়া মানুষ ‘জিতেছেরে জিতেছে, ‘ছাত্র সমাজ জিতেছে, ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘ভুয়া ভুয়া’-সহ সরকার পতনের নানা স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, এখন রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল চলছে। একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। সব হত্যার বিচার হবে। সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখেন। আমরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এর আগে বেলা আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টার শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাত্রা করে। এ সময় তার সঙ্গে তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন।
সিরাজগঞ্জ: বৃষ্টি উপেক্ষা করে পথে পথে জনস্রোত নিয়ে আনন্দ মিছিল উদযাপন করেছেন সিরাজগঞ্জের ছাত্র-জনতা। গতকাল সোমবার বিকেল ৫টায় সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় এ আনন্দ মিছিলে অংশ নিতে সর্বস্তরের মানুষ যোগ দেন। শহরের বিভিন্ন অলিগলি থেকে মিছিল বের হয়। কেউ হেঁটে, কেউ মোটরসাইকেল ও গাড়িতে করে এসে মিছিলে অংশ নেন। পরে শহরের মুজিব সড়ক ও এসএস রোড প্রদক্ষিণ করেন তারা। মিছিলে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী, শিশু, নারী, বয়োবৃদ্ধ সব বয়সীদের অংশ নিতে দেখা গেছে। এর আগে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা খণ্ড খণ্ড মিছিলগুলো বাজার স্টেশন এলাকায় জড়ো হয়। অল্প সময়ের মধ্যে জনতার স্রোত দেখা গেছে। এ সময় বাজার স্টেশন এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাছে গিয়ে অনেকেই ‘স্বাধীন স্বাধীন’ স্লোগান দেন। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শ্রমজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ এ স্লোগান দিতে থাকেন। শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় সেনাবাহিনীর কয়েকটি গাড়ি যাওয়ার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ছাত্রদের হাত মিলাতেও দেখা গেছে। সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মুনতাসীর মেহেদী বলেন, আমাদের এক দফা আন্দোলন সফল হয়েছে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
টাঙ্গাইল: শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে আনন্দ মিছিল করেছে টাঙ্গাইলের শিক্ষার্থী-অভিভাবক সমাজ। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকরাও এ আনন্দ মিছিলে যোগ দেয়। প্রথমে টাঙ্গাইল শহীদ মিনার চত্বর ও পুরাতন বাস স্ট্যান্ডে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিলটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বান্দরবান: শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবরে বান্দরবানে অনন্দ মিছিল করেছে সাধারণ মানুষ। বিকেলে শহরের ট্রাফিক মোড়ে এ আনন্দ মিছিল করা হয়।
ঝিনাইদহ: শেখ হাসিনার পতনের খবরে শিক্ষার্থীরা শহরের পায়রা চত্বরে রং খেলায় মেতে ওঠেন। অনেকেই উঁচু স্থানে উঠে জাতীয় পতাকা নিয়ে স্লোগান দেয়। পুরো শহর উৎসবে মেতে ওঠে।
ভোলা: জাতীয় পতাকা নি?য়ে আনন্দ মি?ছিল ক?রে?ছেন বি?ভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এ সময় তারা বি?ভিন্ন পাড়া-মহল্লা থে?কে শ্লোগান দি?য়ে শহ?রের সদর রোড বি?ভিন্ন সড়ক পদ?ক্ষিণ ক?রে বাংলাস্কুল মো?ড়ে এসে জ?ড়ো হন।
খুলনা: কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীদের আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের এক দফায় পরিণত হয়। সে দাবি মোতাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের মাত্র সাত মাসেই ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন আন্দোলনে পতন হয়েছে সরকারের। শেখ হাসিনার পতনে খুলনার রাজপথে আনন্দ উল্লাস করছেন আন্দোলনকারীরাসহ সাধারণ জনতা। শহরের প্রতিটি অলিগলিতে আনন্দ মিছিল করেন সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন এলাকা থেকে জনস্রোত মহানগরীর শিববাড়ির দিকে এগোচ্ছে। ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূর্ত স্লোগানে স্লোগানে উল্লাসে ফেটে পড়েন। মিষ্টি বিতরণ করেন সবাই। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), সরকারি বিএল কলেজের হাজারও শিক্ষার্থী আনন্দ উল্লাস করেন। সব মিলিয়ে যেন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে খুলনা।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টা থেকে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে জড়ো হতে শুরু করেন ছাত্র-জনতা। বেলা গড়িয়ে দুপুর হলে মিছিলে মিছিলে উত্তাল হয় ওঠে রাজধানী। শাহবাগ, যাত্রাবাড়ী, গাবতলী, উত্তরা, আজমপুর, বাড্ডা, রামপুরা, মহাখালী, শহীদ মিনার, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকা দখলে নেন ছাত্র-জনতা।
শিক্ষার্থী ও জনতা শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ, গুলি করে শিক্ষার্থী ও জনতাকে হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেন। একই সঙ্গে দেশে সুশাসন ফিরিয়ে আনার দাবিও জানান।
জুলাইয়ের শুরুতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। প্রথম সপ্তাহ রাজধানীর শাহবাগ ঘিরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলে। ১৪ জুলাই পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। এরপর দফায় দফায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
সারাদেশে স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে এ আন্দোলন। বাড়তে থাকে প্রাণহানি। ছাত্রদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসেন সর্বস্তরের মানুষ। অবশেষে সরকার পতনের এক দফা দাবি নিয়ে ৪ জুলাই রাস্তায় নেমে আসেন ছাত্র-জনতা।
সকাল সাড়ে ১১টার পরে কারফিউ অমান্য করে উত্তরা এলাকায় জড়ো হতে থাকেন নানা পেশার মানুষ। তারা আজমপুর এলাকায় পৌঁছালে ব্যারিকেড সরিয়ে নেয় র্যাব ও সেনা সদস্যরা। এর এক ঘণ্টা বাদে তারা রাজলক্ষ্মীর দিকে পৌঁছায়। এরপর উত্তরা-আজমপুর থেকে যাত্রা শুরু হওয়া এই জনস্রোত তিন ঘণ্টায় বনানী পার হয়। ওদিকে প্রগতি সরণি দিয়েও হাজারো মানুষ যান শাহবাগের দিকে।
নানা বয়সি, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আছেন এই জনস্রোতে। তাদের অনেকের হাতে পতাকা, কারও হাতে লাঠি দেখা গেছে। কাউকে আবার ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে বিজয়োল্লাস করতে দেখা যায়।
কারফিউয়ের দায়িত্বে থাকা সেনা সদস্যরা আন্দোলনকারীদের বাধা দিচ্ছেন না। কোথাও কোথাও সোনবাহিনীর সঙ্গে হাত মেলাতে, কোলাকুলি করতেও দেখা গেছে আন্দোলনকারীদের।
ঢাকার এই দৃশ্যপট মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৯৯৬ সালের ৩১ মার্চের পরিস্থিতির কথা, যেদিন তীব্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
এর মধ্যেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে আসছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। তার আগে সেনা সদর দফতরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে তিনি বৈঠকে বসেছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
দুপুর ১টার দিকে আজিজ মার্কেট ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিউটের দিক থেকে কয়েক হাজার মানুষের দুটি বড় মিছিল পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগে আবস্থান নেন।
কিছুক্ষণ পর টিএসসির দিক থেকে আরও একটি বড় মিছিল শাহবাগের দিকে যায়।
এর আগে সকাল থেকে বিভিন্ন দিক থেকে ছাত্র-জনতা জড়ো হয়ে ছোট ছোট দলে শাহবাগ ও শহীদ মিনারের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশের বাধায় তা সম্ভব হয়নি।
বেলা পৌনে ৩টার দিকে গাবতলী থেকে পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে, ছেড়ে দেয়া হয়েছে সড়ক। তাতে গাবতলী সেতু এলাকায় আটকে থাকা ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ শুরু করে।
এদিকে শাহবাগে জনতার ঢল নেমেছে। দুপুর দেড়টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ দখল করেন। পরে চতুর্দিক থেকে মিছিল নিয়ে সেখানে আসেন আন্দোলনকারীরা।
শাহবাগে বিপুল পরিমাণ সেনাবাহিনীর সদস্য ও পুলিশ রয়েছে। তবে তারা আন্দোলনকারীদের বাধা দিচ্ছেন না।
বিক্ষোভে আন্দোলনকারীরা ‘এই মুহুর্তে দরকার, সেনাবাহিনী সরকার’, ‘এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’, ‘এক দুই তিন চার, শেখ হাসিনা গদি ছাড়’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’ ইত্যাদি সেøাগান দেন।
জেলায় জেলায় আনন্দ মিছিল
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের খবরে সারাদেশে আনন্দ মিছিল হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চট্টগ্রাম: সদ্য পদত্যাগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে বিজয় উল্লাস করেছে। গতকাল সোমবার বিকেলে ৩টার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর পেয়েই রাস্তায় নেমে এসে বিজয় উদযাপন করতে দেখা গেছে নারী শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষকে। এ সময় উল্লাসিত মানুষকে নানা স্লোগান দিতে দেখা গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বিকেল ৩টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে শুরু হয় বিজয় মিছিল। অংশ নেন নারী-শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ। আধ ঘণ্টার মধ্যে বহদ্দারহাট মোড়ে সমবেত হন অন্তত ১০ হাজার মানুষ। এরপর ছাত্র বিক্ষোভের সময় নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণ করেন বহদ্দারহাট ও মুরাদপুর হয়ে বিজয় মিছিল আগান লালদিঘীর পথে। নগরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এভাবেই খণ্ড খণ্ড বিজয় মিছিল এগোয় লালদিঘীর দিকে। নগরের সব পথ মিশে গেছে ওই ঐতিহাসিক ময়দানে। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ও মাথায় পতাকা স্লোগান দিতে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিন বলে, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন। বিজয় আমাদের। চকবাজারের বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, কি যে আনন্দ লাগছে বোঝাতে পারবো না। এ বিজয় নির্যাতিত ছাত্র জনতার। সেখানে জড়ো হওয়া মানুষ ‘জিতেছেরে জিতেছে, ‘ছাত্র সমাজ জিতেছে, ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘ভুয়া ভুয়া’-সহ সরকার পতনের নানা স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, এখন রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল চলছে। একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। সব হত্যার বিচার হবে। সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখেন। আমরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এর আগে বেলা আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টার শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাত্রা করে। এ সময় তার সঙ্গে তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন।
সিরাজগঞ্জ: বৃষ্টি উপেক্ষা করে পথে পথে জনস্রোত নিয়ে আনন্দ মিছিল উদযাপন করেছেন সিরাজগঞ্জের ছাত্র-জনতা। গতকাল সোমবার বিকেল ৫টায় সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় এ আনন্দ মিছিলে অংশ নিতে সর্বস্তরের মানুষ যোগ দেন। শহরের বিভিন্ন অলিগলি থেকে মিছিল বের হয়। কেউ হেঁটে, কেউ মোটরসাইকেল ও গাড়িতে করে এসে মিছিলে অংশ নেন। পরে শহরের মুজিব সড়ক ও এসএস রোড প্রদক্ষিণ করেন তারা। মিছিলে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী, শিশু, নারী, বয়োবৃদ্ধ সব বয়সীদের অংশ নিতে দেখা গেছে। এর আগে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা খণ্ড খণ্ড মিছিলগুলো বাজার স্টেশন এলাকায় জড়ো হয়। অল্প সময়ের মধ্যে জনতার স্রোত দেখা গেছে। এ সময় বাজার স্টেশন এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাছে গিয়ে অনেকেই ‘স্বাধীন স্বাধীন’ স্লোগান দেন। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শ্রমজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ এ স্লোগান দিতে থাকেন। শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় সেনাবাহিনীর কয়েকটি গাড়ি যাওয়ার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ছাত্রদের হাত মিলাতেও দেখা গেছে। সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মুনতাসীর মেহেদী বলেন, আমাদের এক দফা আন্দোলন সফল হয়েছে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
টাঙ্গাইল: শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে আনন্দ মিছিল করেছে টাঙ্গাইলের শিক্ষার্থী-অভিভাবক সমাজ। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকরাও এ আনন্দ মিছিলে যোগ দেয়। প্রথমে টাঙ্গাইল শহীদ মিনার চত্বর ও পুরাতন বাস স্ট্যান্ডে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিলটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বান্দরবান: শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবরে বান্দরবানে অনন্দ মিছিল করেছে সাধারণ মানুষ। বিকেলে শহরের ট্রাফিক মোড়ে এ আনন্দ মিছিল করা হয়।
ঝিনাইদহ: শেখ হাসিনার পতনের খবরে শিক্ষার্থীরা শহরের পায়রা চত্বরে রং খেলায় মেতে ওঠেন। অনেকেই উঁচু স্থানে উঠে জাতীয় পতাকা নিয়ে স্লোগান দেয়। পুরো শহর উৎসবে মেতে ওঠে।
ভোলা: জাতীয় পতাকা নি?য়ে আনন্দ মি?ছিল ক?রে?ছেন বি?ভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এ সময় তারা বি?ভিন্ন পাড়া-মহল্লা থে?কে শ্লোগান দি?য়ে শহ?রের সদর রোড বি?ভিন্ন সড়ক পদ?ক্ষিণ ক?রে বাংলাস্কুল মো?ড়ে এসে জ?ড়ো হন।
খুলনা: কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীদের আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের এক দফায় পরিণত হয়। সে দাবি মোতাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের মাত্র সাত মাসেই ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন আন্দোলনে পতন হয়েছে সরকারের। শেখ হাসিনার পতনে খুলনার রাজপথে আনন্দ উল্লাস করছেন আন্দোলনকারীরাসহ সাধারণ জনতা। শহরের প্রতিটি অলিগলিতে আনন্দ মিছিল করেন সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন এলাকা থেকে জনস্রোত মহানগরীর শিববাড়ির দিকে এগোচ্ছে। ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূর্ত স্লোগানে স্লোগানে উল্লাসে ফেটে পড়েন। মিষ্টি বিতরণ করেন সবাই। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), সরকারি বিএল কলেজের হাজারও শিক্ষার্থী আনন্দ উল্লাস করেন। সব মিলিয়ে যেন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে খুলনা।