
আক্রান্তরা সবাই সুস্থ আছেন, কোনো সমস্যা হয়নি। তাদের কারও বাইরে যাওয়ার কোনো ইতিহাস নাই। তার মানে সংক্রমণটা দেশের ভেতরেই হয়েছে
\
ঢাকায় এ বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ৮ জন জিকা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।
এদের মধ্যে চার জন শনাক্ত হয়েছেন আইসিডিডিআর,বিতে এবং বাকী চারজন এভারকেয়ার হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করেছিলেন। তারা সবাই ঢাকার বাসিন্দা।
আট জনই স্থানীয়ভাবেই এই রোগে সংক্রমিত হয়েছেন; তাদের তেমন কোনো শারীরিক জটিলতাও ছিল না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এর আগে গত বছর ৫ জন জিকা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল। তারাও ঢাকার রোগী ছিলেন। আইসিডিডিআর,বির একটি গবেষণায় ওই পাঁচজনের জিকা ভাইরাস শনাক্তের বিষয়টি ধরা পড়ে।
জিকা ভাইরাস এইডিস মশাবাহিত রোগ। এই রোগে আক্রান্ত হলে জ্বর, হাল্কা মাথা ব্যথা, অবসাদগ্রস্ততা, কনজাংটিভাইটিস, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, পেশীতে ব্যথা, শরীরে লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি ওঠার মতো উপসর্গ দেখা যায়।
আইসিডিডিআর,বির বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, এ বছরের অক্টোবর মাসে আইসিডিডিআর,বির মহাখালী, উত্তরা এবং ধানমন্ডি সেন্টার থেকে ১৫৫টি নমুনা নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪ জনের শরীরে এই ভাইরাসটি পাওয়া গেছে। তাদের দুজন উত্তরা এবং একজন মহাখালী, একজন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা।
আর সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিডিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরিন বুধবার বলেন, চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ঢাকার বেসরকারি একটি হাসপাতালে পরীক্ষায় চারজনের শরীরে জিকা ভাইরাস ধরা পড়ে। তারা ধানমন্ডি, শ্যামলী, বারিধারা ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা।
গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত জ্বর আক্রান্ত ৩৯৯ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়। এদের মধ্যে ১৫২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫ জনের পজিটিভ আসে।
শফিউল আলম বলেন, তারা গত বছরের অক্টোবর মাসে গবেষণা শুরু করেছিলেন। সেজন্য আইসিডিডিআর,বির ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গু টেস্ট করাতে এসে যাদের ফলাফল নেগেটিভ এসেছিল তাদের মলিকিউলার টেস্ট করা হয়েছিল।
তাদের মধ্যে ৫ জনের জিকা ভাইরাস পাওয়া যায়। গত বছরের ওই পাঁচজন ছিলেন এক কিলোমিটারের মধ্যে। মহাখালী ও আশপাশের এলাকার।
জিকা ভাইরাসের দুটি ধরন-আফ্রিকান এবং এশিয়ান। ঢাকায় পাওয়া জিকা ভাইরাস আক্রান্তরা এশিয়ান ধরনে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন ড. মোহাম্মদ শফিউল আলম।
তিনি বলেন, আক্রান্তরা সবাই সুস্থ আছেন, কোনো সমস্যা হয়নি। তাদের কারও বাইরে যাওয়ার কোনো ইতিহাস নাই। তার মানে সংক্রমণটা দেশের ভেতরেই হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২০১৪ সালে প্রথম জিকা ভাইরাস পাওয়া গেছে। এজন্য রোগটি নতুন কিছু না। কিন্তু যেহেতু পরীক্ষা করা হয় না তাই এটি শনাক্তও হয় না।
বাংলাদেশে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি আছে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ঝুঁকি এই মুহূর্তে নাই। ভবিষ্যতে এই রোগটা ছড়িয়ে পড়তে পারে। জিবিএস (এঁরষষধরহ-ইধৎৎল্ক ংুহফৎড়সব) আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে গর্ভবতী মায়েরা। আমাদের এখানে যে স্ট্রেইন পাওয়া গেছে সেটা এমন হবে কি না তা পরীক্ষা না করে বলা যাবে না।
আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা বলেছেন, জিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আছে তা ঠিক। তবে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে এই রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
এই রোগে মা আক্রান্ত হলে বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি থাকতে পারে, মারা যেতে পারে। নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সবাই যেন যার যার অবস্থানে থেকে এইডিস মশা জন্মায় এমন স্থান পরিষ্কার রাখেন।