
খুলনা প্রতিনিধি
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাসুদ ছাত্রদল ও বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব জাহিদ আহসান ও মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসির। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন সংগঠনটির এই দুই নেতা। এসময় তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কুয়েট উপাচার্য পদত্যাগ না করলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাগছাসের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব জাহিদ আহসান। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল এবং বহিরাগত বিএনপি-যুবদল ক্যাডাররা সাধারণ ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। কুয়েটে দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও ছাত্রদলের জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও পরিচালনার জের ধরেই এই হামলার ঘটনা ঘটে। দলীয় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাসুদের পৃষ্ঠপোষকতায় ছাত্রদল কার্যক্রম পরিচালনা করে এমনকি ছাত্রদল-যুবদল-বিএনপির যৌথ হামলার সময়েও ভিসিকে কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। সেই হামলায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। শিক্ষার্থীরা বারবার প্রশাসনের সাহায্য চেয়েও নিরাশ হয়। লিখিত বক্তব্যে জাহিদ আরও বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবিতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। এমতাবস্থায় গত ১০ এপ্রিল ২২ জন শিক্ষার্থীর নামে মিথ্যা মামলা করা হয়। যদিও এখনও পর্যন্ত হামলাকারী কারও বিরুদ্ধেই কোনও ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সাথে সাথেই শিক্ষার্থীদের নামে মামলার প্রতিবাদ জানায় এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি তোলে। মামলার পরপরই গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিশেষত উপাচার্য শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান করে বিএনপির দলীয় স্বার্থের পক্ষে অন্যায্য অবস্থান ব্যক্ত করছেন। উল্লেখ্য, কুয়েটের ভিসি ড. মোহাম্মদ মাছুদ ছাত্রদল, কুয়েট শাখার সভাপতি ছিলেন। আমরা উপাচার্যের শিক্ষার্থীবিরোধী অবস্থান প্রত্যাখ্যান করছি। বাগছাসের মুখ্য সংগঠক তাহমিদ আল মুদাসসির বলেন, কুয়েটের ঘটনায় আমরা খুব উদ্বিগ্ন। কুয়েটের যে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন তারা আজ অসহায়। তাদের হয়ে কথা বলার কেউ নাই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুরো একটি দলের লেজুড়বৃত্তি করছে। তারা হল বন্ধ করে রেখেছে আর শিক্ষার্থীরা খোলা মাঠে রাত যাপন করছেন কুকুর বিড়ালের সঙ্গে। এটিকে আমরা খুবই এলার্মিং হিসেবে দেখছি। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের নামেই মামলা করা হয়েছে যেটা গত ফ্যাসিবাদী সময়ে আমরা দেখতাম। নতুন করে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি আমরা শুনতে পাচ্ছি। এসময় বাগছাসের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো:
১. কুয়েট ছাত্রদল-যুবদলের হামলা, মামলা এবং শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের বিষয়ে পূর্ণ নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা।
২. আগামী চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের নামে মামলা এবং বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা।
৩. কুয়েটের ভিসি ড. মোহাম্মদ মাছুদকে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ না করলে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে অপসারণ করা।
৪. আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কুয়েটের সব হল খুলে দেওয়া এবং
৫. মাহিন আহম্মেদের ওপর হামলাকারীদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করা।
কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি সাবেক শিক্ষার্থীদের
এদিকে, কুয়েট শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ এবং ছাত্র-শিক্ষক বন্ধন রক্ষার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য ড. মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে সাবেক শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এই দাবি জানানো হয়। দাবি আদায় না হলে কুয়েটের সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা দিবে বলে জানিয়েছেন। মানববন্ধন থেকে তারা আরও দু’টি দাবি জানিয়েছেন। দাবিগুলো হলো: সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করাসহ অবিলম্বে ৩৭ জন শিক্ষার্থীর বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। মানববন্ধনে কুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী মাঈনুল হক মাহী লিখিত বক্তব্য পাঠ করে বলেন, কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রদল ও যুবদল সমর্থিত সন্ত্রাসীদের ন্যাক্করজনক হামলার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত এই হামলার পর শিক্ষার্থীরা ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলনে নামলে, আন্দোলন দমন করার উদ্দেশ্যে প্রশাসন ২৫ ফেব্রুয়ারি হল বন্ধের নোটিশ জারি করে এবং শিক্ষার্থীদের হল থেকে জোরপূর্বক বের করতে পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে অমানবিক আচরণ করে। তিনি বলেন, দীর্ঘ দুই মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, উল্টো বিএনপি মদতপুষ্ট ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে ২২ জন নিরীহ শিক্ষার্থীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং ৩৭ জন সাধারণ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রশাসনের এই আচরণ কুয়েটের পরিবেশকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলেছে এবং বর্তমান প্রশাসনের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পূর্ণভাবে হারিয়েছে। মাহী বলেন, আমরা মনে করি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের দমনমূলক ও রাজনৈতিক প্রভাবিত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ছাত্রসমাজের ভবিষ্যতকে বিপন্ন করে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হলে, কুয়েটের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণায় বাধ্য হবে। মানববন্ধনে কুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জিহাদ তালুকদার, শরিফুল ইসলাম মুবিন, সালিম আবেদিন ফাহিম, এম এম রাফসান জামান প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে তারা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের দিকে যাত্রা করেন।