
* আজ দুপুরের মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হোস্টেল ত্যাগ করার নির্দেশ
বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একইসঙ্গে হোস্টেলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের আজ রোববার দুপুর ১২টার মধ্যে হোস্টেল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার কলেজের অধ্যক্ষ ও একাডেমিক কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. কামরুল আলম স্বাক্ষতির এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
নোটিশে বলা হয়, গতকাল শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কলেজের চলমান অবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে রোববার থেকে এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পেশাগত এমবিবিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও বিদেশি শিক্ষার্থী এই ঘোষণার আওতামুক্ত থাকবেন।
জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবন এবং আবাসিক হল ঝুঁকিপূর্ণ মনে করায়, তা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। বিকল্প আবাসন এবং ছাত্রাবাস ও অ্যাকাডেমিক ভবন সংস্কারের দাবিতে গত ২৮ মে থেকে সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে আসা নবীন ব্যাচ ‘কে-৮২’ তাদের সিনিয়র ব্যাচদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানও বর্জন করে। শিক্ষার্থীরা জানান, ফজলে রাব্বী হলের মূল ভবনের তৃতীয় তলায় ওয়াশরুম ও টয়লেটের সিলিং থেকে ঘন ঘন পলেস্তারা খসে পড়ায় বিপজ্জনক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। বেশিরভাগ জানালায় কাচ ভেঙে গেছে এবং এর আগের একটি ঘটনায়, ঝড়ের সময় পুরো জানালার গ্রিল পায়ে ভেঙে পড়লে একজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন। তৃতীয় তলার বেশ কয়েকটি কক্ষ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। গত ৬ জুন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের আবাসিক হলগুলোতে জীবনের ঝুঁকির কথা জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ফজলে রাব্বি ছাত্রাবাসসহ গার্লস হোস্টেল ও অ্যাকাডেমিক ভবনসহ আরও কয়েকটি ভবন এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ সাত মাস আগে ফজলে রাব্বি হলকে বসবাসের অনুপযোগী এবং পরিত্যক্ত ঘোষণা করা সত্ত্বেও প্রত্যেক শিক্ষার্থী এখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে বসবাস করছেন। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক যে, রানা প্লাজা বা জগন্নাথ হলের ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না যা হবে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য একটি লজ্জাজনক ঘটনা।
এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অ্যাকাডেমিক ভবন ও হোস্টেলের অবকাঠামোগত দুরবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে চলমান অচলাবস্থা নিরসনে গতকাল শনিবার অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে এবং সেজন্য এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের সঙ্গে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দৃশ্যমান ফলাফল প্রাপ্তির টাইম ফ্রেম নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে অনড় অবস্থান রয়েছে, সেটাও আমরা অনুধাবন করি।
উপরন্তু, বারবার নোটিশ দেয়া সত্ত্বেও এবং বিকল্প আবাসন নিশ্চিত করা সত্ত্বেও বিভিন্ন ব্যাচের ছাত্রদের অসহযোগিতার কারণে ডা. ফজলে রাব্বি ছাত্রাবাসের মূল ভবনের গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত পরিত্যক্ত চতুর্থ তলা খালি করা সম্ভব হচ্ছে না, যা তাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত হুমকি স্বরূপ। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন ব্যাচ কে-৮২ স্বপ্রণোদিত হয়ে, অথবা প্ররোচিত হয়ে তাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম বয়কট করেছে, যা ঢাকা মেডিকেল কলেজের জন্য একটি কালো অধ্যায়।
ফলে কলেজের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেশের অন্যান্য মেডিকেল কলেজের বিবেচনায় অ্যাকাডেমিক পিয়ার প্রেসারে ভুগছে। সর্বোপরি মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল পরিদর্শন অন্য মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল বিশ্বাস করে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় এই সংকট কাটিয়ে উঠবে।