
আবার শুরু হয়েছে গণপিটুনি। পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, অপরাধীদের ধরে বেদম প্রহার করে ঝুলিয়েও রাখা হচ্ছে। পুলিশের ওপরও চলছে মব-হামলা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া ব্যক্তিদের বিচার হওয়া দরকার। মবের প্রতিটি ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে সরকার বদ্ধপরিকর। ইতোমধ্যে দেশের সকল নাগরিকের প্রতি আবারও আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে ‘মব’ সৃষ্টি করাকে ফৌজদারী অপরাধ আখ্যায়িত করে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে আবারও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কঠোর হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেছেন, মব সৃষ্টিতে পুলিশের কোনো ভুল থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট্ররা বলছেন, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর ‘মব জাস্টিস’ এর নামে হামলা ও হত্যার হার অনেক বেড়ে যায়। তারই ধারাবাহিকতায় এখন আবার শুরু হয়েছে গণপিটুনিতে হত্যা। তবে দ্রুত এই মব সৃষ্টিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, সর্বশেষ গত ২২ জুন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাকে হেনস্তা করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এরআগে ভয়-ভীতি দেখিয়ে জনগণের ভোট ছাড়া নির্বাচন করার অভিযোগে সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে ২২ জুন মামলা করে বিএনপি। মামলার কয়েক ঘণ্টা পর সন্ধ্যায় ‘মব’ সৃষ্টি করে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার উত্তরার বাসা ঘেরাও করে স্থানীয় কিছু ‘জনতা’। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে হেফাজতে নেয় উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। এর পর নূরুল হুদাকে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেয়ার পর গ্রেফতার দেখানো হয় বিএনপির মামলায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, এক দল লোক ‘মব’ তৈরি করে নূরুল হুদাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় ডিম ছুড়ে মারাসহ তাকে নানাভাবে হেনস্তা ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। কেউ কেউ ফেসবুক লাইভও করেন। এমন একটি লাইভে দেখা যায়, নূরুল হুদার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন এক ব্যক্তি। তার গেঞ্জি ধরে রেখে বক্তব্য দিতে দেখা যায় ওই ব্যক্তিকে। এক ব্যক্তি জুতার মালা থেকে একটি জুতা নিয়ে নুরুল হুদাকে মারধর করেন। এ সময় ওই ব্যক্তির পাশে পুলিশের পোশাক পরা একজনকে দেখা গেছে। পরে পুলিশ জুতার মালাটি খুলে নিয়ে সাবেক সিইসিকে হেফাজতে নেয়। ওই সময় বাসার দরজার সামনে স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার নাম নিয়ে সেøাগান দেয়া হয়। আরেকটি ভিডিওতে নূরুল হুদাকে ঘিরে ধরে ‘স্বেচ্ছাসেবক উত্তর’-এর নামে সেøাগান দিতে শোনা যায় কথিত জনতাকে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের ১/এ নম্বর সড়কের ২৯ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন নূরুল হুদা। রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে এক দল লোক ওই বাড়ির নিচে জড়ো হয়ে ‘মব’ সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে নূরুল হুদার বাসায় ঢুকে লুঙ্গি পরা অবস্থায় তাকে ঘেরাও করা হয়। নূরুল হুদাকে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, কারা এটা করেছে জানি না। তবে বিগত দিনে এসব নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমেই দেশের নির্বাচন ব্যবস্থার পুরোটা ধ্বংস হয়েছে।
কে এম নূরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। অভিযোগ আছে সেই ভোটের আগের রাতে ভরে রাখা হয় ব্যালট বাক্স। নূরুল হুদা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্দেশ পালন করতেন বলেও অভিযোগ করে আসছে বিএনপি। রোববার দুপুরে নূরুল হুদাসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দলটি। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আরও দুই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ১০ নির্বাচন কমিশনার, পুলিশের কর্মকর্তাও আসামি। এতে অজ্ঞাত আসামিও রয়েছে। ওই মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করে উল্টো ভয়-ভীতি দেখিয়ে জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন করে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন খান। ওই মামলা করার পর শেরেবাংলা নগর থানার ওসি ইমাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, মামলা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত ৩১ মে রাজধানীর দারুস সালামের দ্বীপনগর এলাকায় মাইকিং করে তানভীর ও ফাহিম নামের দুই তরুণকে পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয়রা। স্থানীয়সহ পুলিশের দাবি, নিহতরা মাদক কারবারি। এ কারণে এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের পিটিয়ে হত্যা করে। পরদিন একই এলাকা থেকে রাসেল নামের এক কিশোরের রাস্তায় পড়ে থাকা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শুধু রাজধানীর দারুস সালাম নয়, গত ১০ মাসে দেশের আট বিভাগে ১৭২ জনকে এভাবে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটির তথ্য বলছে, কোথাও চোর-ছিনতাইকারী-চাঁদাবাজ এবং কোথাও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সহযোগী ও দোসর অপবাদ দিয়ে মব সৃষ্টি করে এসব মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও ছিল না।
আসকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত আগস্ট থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ১৭২ জনকে আট বিভাগে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৮০ জন, চট্টগ্রামে ২৮ জন, বরিশাল ও রাজশাহীতে ১৬ জন করে, খুলনায় ১৪ জন, রংপুরে ৭ জন, ময়মনসিংহে ৬ জন এবং সিলেটে ৫ জনকে হত্যা করা হয়। মবের সৃষ্টি করে সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। ওই মাসে ২৮ জনকে হত্যা করা হয়।
মব সৃষ্টি করে মানুষ মারা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং গুরুতর অপরাধ বলে উল্লেখ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান। তিনি বলেন, এটি পরিকল্পিত ও ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড। আর যারা এতে অংশ নেয়, তারা সবাই সমানভাবে দায়ী থাকে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী ইচ্ছাকৃত হত্যা শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী করছে আইন নিজের হাতে না তুলে নিতে পুলিশ ও সরকারের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হলেও মব ও গণপিটুনি প্রতিরোধ করতে পারছে না। তবে এবার কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনী। সম্প্রতি কিছু ঘটনা প্রতিহত করেছে পুলিশ, র?্যাব ও সেনাবাহিনী। গত ১৬ মে ধানমন্ডিতে একজন প্রকাশককে ধরতে মব সৃষ্টি করেন কিছু যুবক। তাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে চাপ দেয় তারা, তবে ধানমন্ডি থানার ওসি ক্যশৈন্যু মারমার দৃঢ়তায় সেই মব প্রতিরোধ করা হয়। এ ছাড়া সম্প্রতি ঢাকা, রংপুর, সিলেট ও চট্টগ্রামেও কিছু মব প্রতিরোধ করে পুলিশ ও সেনাবাহিনী।
দেশে মব উৎপাদনের সঙ্গে সরকার জড়িত কি না এমন প্রশ্ন তুলেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে যে বিপ্লবী চরিত্র জনগণ প্রত্যাশা করেছিল, তা এখনও দেখা যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সোমবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এসব মন্তব্য করেন রাশেদ খাঁন। রাশেদ খাঁন লিখেছেন, সরকারের মাথায় কেন বিতর্কিত একতরফা, নৈশ ও ডামি নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত কমিশন, সচিব, ডিসি, এসপি এবং আওয়ামী লীগের ডামি, মামি, স্বতন্ত্রনামধারী এমপি ও মন্ত্রীদের গ্রেফতার বা সম্পদ বাজেয়াপ্তের চিন্তা কাজ করে না? বরং সরকারের উপদেষ্টারা সাবের-মান্নানসহ বেশ কিছু ডামি এমপির জামিন করিয়েছে, পুনর্বাসন করছে। যাদের টাকা আর উপদেষ্টাদের সাথে আত্নীয়তার সম্পর্ক আছে, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তিনি আরও বলেন, যেসব মাফিয়া সম্পদশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী অবৈধ সাম্রাজ্য গঠনে সাহায্য করেছে, তারাও ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরকার যদি এদের শাস্তির আওতায় না আনে, তাহলে কী মব উৎপাদনের জন্য সরকারই রসদ জোগাচ্ছে না?
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে রাশেদ খাঁন লিখেছেন, এখনো পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ৩ হাজারেরও বেশি মাথাওয়ালা ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়নি। শেখ পরিবারের একজনকেও সরকার ধরেনি। গণহত্যার সাথে সরাসরি যুক্ত কতজনকে ধরা হয়েছে? তাহলে গণহত্যার বিচার কীভাবে হবে? তিনি আরও মন্তব্য করেন, সরকার যতদিন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হবে, ততদিন সমাজ থেকে মবোক্রেসি বন্ধ হবে না। মব উৎপাদনের দায় পুরোপুরি সরকারের। সরকারের দুর্বলতার কারণেই বারবার মবের ঘটনা ঘটছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতর থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মব সৃষ্টি না করার জন্য হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। কোনো ব্যক্তি অন্যায় বা অপরাধ করলে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ অথবা নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করতে বলেছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, যেকোনো মবের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া আছে। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে না।
রণদা প্রসাদ সাহা (আর পি সাহা) বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও মানবাধিকার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী লতিফুর রেজা বলেন, কোনো সভ্য সমাজে বিচারব্যবস্থার বাইরে গিয়ে কাউকে হত্যা করা ন্যায়সংগত হতে পারে না। এটা আমাদের মানবিক মূল্যবোধকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। তিনি বলেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, গুজব রোধে দ্রুত তথ্য যাচাই ও ছড়িয়ে দেয়া, কড়া আইন প্রয়োগ, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া নিশ্চিত করতে হবে।
‘মব’ সৃষ্টি করাকে ফৌজদারী অপরাধ আখ্যায়িত করে এর সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে আবারও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। রোববার রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিবৃতিতে এ ব্যাপারে নিজের অবস্থান তুলে ধরে সরকার।
বিবৃতিতে বলা হয়, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদাকে একটি সুনির্দিষ্ট মামলায় রাজধানীর উত্তরা থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। এসময় ‘মব’ কর্তৃক সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও অভিযুক্তকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার দেশের সকল নাগরিকের প্রতি আবারও আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে। অভিযুক্ত সকল ব্যক্তির বিচার দেশের আইন মেনে হবে এবং বিচারাধীন বিষয় ও ব্যক্তির ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তির ওপর আক্রমণ ও তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা বেআইনি, আইনের শাসনের পরিপন্থী ও ফৌজদারি অপরাধ। ‘মব’ সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সকলকে চিহ্নিত করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকল নাগরিককে সহনশীল ভূমিকা পালনের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফট্যানেন্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দেশে এখন মব নেই। যারা মব সৃষ্টি করছে আমরা তাদের আইনের আওতায় আনব এবং মব সৃষ্টিতে পুলিশ বাহিনীর কোনো ভুল থাকলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সোমবার দুপুরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে (পিটিসি) একাডেমি ভবন পরিদর্শন ও বিভিন্ন কোর্সে প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। একইসুরে কথা বলেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, আদর্শ পরিবেশে এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেনি। নন ভায়োলেন্স (অহিংস) ভাবে মব বন্ধ করার চেষ্টা করছে সরকার। সরকার শুধু বিবৃতি দিয়ে বসে থাকেনি। এ নিয়ে ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে। সোমবার সচিবালয়ে পরিবেশ দিবস নিয়ে ব্রিফিংয়ের সময় এক প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন।
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নুরুল হুদাকে মবের (জনতার উশৃঙ্খলা) মাধ্যমে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় সরকার নিন্দা জানিয়েছে বলে জানান পরিবেশ উপদেষ্টা। এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। পুলিশের ব্যাপারে উপদেষ্টা বলেন, পুলিশ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। গেল ১০ মাস ধরে সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে সন্তুষ্ট হওয়া কঠিন। বৃক্ষরোপণ অভিযান নিয়ে ব্রিফিংয়ে প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও জানান, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ ফিরতে শুরু করেছে।
এরআগে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, অভ্যুত্থানের পক্ষে হলে মব করা বন্ধ করেন, আর যদি মব করেন, তাইলে আপনাদেরও ডেভিল হিসাবে ট্রিট করা হবে। আজকের ঘটনার পর আর কোন অনুরোধ করা হবে না। আপনাদের কাজ না আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া। সম্প্রতি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন। পোস্টে মাহফুজ আলম লিখেছেন, অভ্যুত্থানের পক্ষে হলে মব করা বন্ধ করেন, আর যদি মব করেন, তাইলে আপনাদেরও ডেভিল হিসাবে ট্রিট করা হবে। আজকের ঘটনার পর আর কোন অনুরোধ করা হবে না। আপনাদের কাজ না আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া। কথিত আন্দোলন আর মবের মহড়া আমরা এখন থেকে শক্ত হাতে মোকাবেলা করব। রাষ্ট্রকে অকার্যকর এবং ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টা করা হলে একবিন্দু ছাড় দেয়া হবে না। তৌহিদী জনতা! আপনারা দেড় দশক পরে শান্তিতে ধর্ম ও সংস্কৃতি পালনের সুযোগ পেয়েছেন। আপনাদের আহমকি কিংবা উগ্রতা আপনাদের সে শান্তি বিনষ্টের কারণ হতে যাচ্ছে। জুলুম করা থেকে বিরত থাকেন, নইলে আপনাদের উপর জুলুম অবধারিত হবে। লা তাযলিমুনা ওলা তুযলামুনা- যুলুম করবেন না, যুলুমের শিকার ও হবেন না। এটাই আপনাদের কাছে শেষ অনুরোধ!
এ বিষয়ে ঢাবির সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ও অপরাধ বিশ্লেষক মো. তৌহিদুল হক বলেন, মব জাস্টিস হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতিরই বহিঃপ্রকাশ। পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা এবং অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় এধরনের ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, কঠোর হাতে সরকার এই মবদের দমন না করলে এই পরিস্থিতির শিকার হতে পারে নিরীহ মানুষও। সুযোগসন্ধানী এবং অপরাধীরা নানা গুজব রটিয়ে মব সৃষ্টি করে। তিনি বলেন,পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে অবশ্যই আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি করতে হবে। অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আর যারা মব সৃষ্টি ও গণপিটুনির ঘটনা ঘটাচ্ছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে। তবে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, মব জাস্টিস কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার কোনো সুযোগ নাই। যদি অপরাধীও হয়, তাকে পুলিশের হাতে দিতে হবে। যারা মব জাস্টিসে জড়াচ্ছেন, তারা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করছেন। মব জাস্টিসে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সবাইকে আমরা আইনের আওতায় আনছি। তিনি বলেন, পুলিশ এই মব জাস্টিস বন্ধের চেষ্টা করছে। হঠাৎ করেই মব সৃষ্টি হয়। তাই নাগরিকদেরও সচেতন হতে হবে। কোনো সুনাগরিক তো মব জাস্টিসে অংশ নেবেন না। কোনো অপরাধ হলে পুলিশকে খবর দিন। ৯৯৯-এ ফোন দিন। আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।