
উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানে এবার সাড়ে ১২ লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসতে যাচ্ছে। ২০২৪ সালে পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৯৩ জন। ফলে গত বছরের তুলনায় পরীক্ষার্থী কমেছে প্রায় ৮১ হাজার। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বাংলা প্রথম পত্রের মাধ্যমে শুরু হবে লিখিত পরীক্ষা। এই পরীক্ষা চলবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত। তবে পরীক্ষা সুষ্ঠু, নিরাপদ ও নকলমুক্ত রাখতে সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রশ্নফাঁস ও গুজব প্রতিরোধে বাড়তি নজরদারির পাশাপাশি দেশের সব কোচিং সেন্টার আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পরীক্ষার সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিশেষ নজরদারি চালানো হবে। পরীক্ষা নির্বিঘ্ন করতে পরীক্ষার্থীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জারি করেছে শিক্ষা বোর্ড। এসব নির্দেশনায় পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময়ের অন্তত ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে উপস্থিত থাকা, ওএমআর শিটে সঠিকভাবে তথ্য পূরণ, উত্তরপত্র না ভাঁজ করা এবং মোবাইল ফোন কেন্দ্রের ভেতরে না আনার বিষয়ে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বহুনির্বাচনী ও সৃজনশীল অংশের মধ্যে কোনো বিরতি না রেখে পরীক্ষা পরিচালিত হবে। ব্যবহারিকসহ সব অংশেই পৃথকভাবে পাস করতে হবে। পরীক্ষার্থী শুধুমাত্র প্রবেশপত্রে উল্লিখিত বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে এবং কেউ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা দিতে পারবে না আসনবিন্যাসে কেন্দ্র পরিবর্তন করা হয়েছে। এছাড়া উপস্থিতি পত্রে স্বাক্ষর দেয়া বাধ্যতামূলক।
জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সারাদেশে মোট পরীক্ষার্থী ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন। এর মধ্যে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ১০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি। আলিম পরীক্ষার্থী ৮৬ হাজারের বেশি এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৯ হাজারের বেশি। এসব পরীক্ষা নেয়া হবে দেশের ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে। গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ৮১ হাজার ৮৮২ জন। ২০২৪ সালে পরীক্ষার্থী ছিল ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৯৩ জন।
২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় গত বছরের তুলনায় এবার কমেছে পরীক্ষার্থী কমেছে ৮১ হাজার। ২০২৪ সালের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৯৩ জন। ফলে এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ৮১ হাজার ৮৮২ জন।
পরীক্ষা সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত রাখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রশ্নফাঁসের গুজব ঠেকাতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশের সব কোচিং সেন্টার ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। গত মঙ্গলবার এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে এবার পরীক্ষার্থীদের জন্য ১০টি নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা বোর্ড। এরমধ্যে রয়েছে-১.পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হবে। ২. ওএমআর ফরমে সঠিক তথ্য লিখতে হবে এবং বৃত্ত ভরাট করতে হবে। ৩. উত্তরপত্র ভাঁজ করা যাবে না। ৪. শুধু সাধারণ সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে। ৫. এমসিকিউ ও সৃজনশীল অংশের মধ্যে কোনো বিরতি থাকবে না। ৬. মোবাইল ফোন পরীক্ষাকেন্দ্রে আনা যাবে না। ৭. তিনটি অংশ-তত্ত্বীয়, এমসিকিউ এবং ব্যবহারিক পাশ করতে হবে আলাদাভাবে। ৮.শুধুমাত্র প্রবেশপত্রে উল্লিখিত বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নেয়া যাবে। ৯. পরীক্ষার্থীদের নিজ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা হবে না, স্থানান্তরের মাধ্যমে আসনবিন্যাস করা হয়েছে। ১০.উপস্থিতি পত্রে স্বাক্ষর দেয়া বাধ্যতামূলক। এছাড়া, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষার শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ৩৩ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। প্রতি ২০ জন পরীক্ষার্থীর জন্য একজন কক্ষ পরিদর্শক রাখাসহ পরীক্ষাকেন্দ্রে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে বসার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে। পরীক্ষার তিন দিন আগে ট্রেজারি থেকে প্রশ্নপত্র গ্রহণ করে খামে সংরক্ষণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সেট অনুযায়ী খাম খোলা এবং অব্যবহৃত সেট ফেরত পাঠানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রশ্ন আনার সময় পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এর বাইরে, কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, নকল প্রতিরোধে পোস্টার টানানো এবং কেন্দ্রের বাইরে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে শুধুমাত্র কাঁটাযুক্ত ঘড়ি ব্যবহারের অনুমতি থাকবে। বর্ষাকাল বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এড়াতে সংশ্লিষ্ট দফতরকে আগাম প্রস্তুতি নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের সময় পরীক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক খন্দকার এহসানুল কবির জানিয়েছেন, এইচএসসি পরীক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে। স্বাস্থ্যবিধিও উপেক্ষিত নয়। পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের সময় শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবার মাস্ক পরা এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক। ২০২৪ সালের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার সরকারের নজরদারি আরও কঠোর। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। ২০২৬ সালের এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নির্ধারিত পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যসূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।
বুধবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রবিউল কবির চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞাপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এই শিক্ষার্থীরাই ২০২৬ সালের মে-জুনে অনুষ্ঠেয় এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেবেন। এ পরীক্ষাগুলো পূর্ণ সময় ও পূর্ণ নম্বর ভিত্তিক এবং এনসিটিবির প্রণীত সম্পূর্ণ সিলেবাসে নেয়া হবে।
এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সব শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চিঠির অনুলিপি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর, কারিগরি শিক্ষা অধিদফতর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের দায়িত্বশীলদের কাছেও পাঠানো হয়েছে। মূলত, করোনা মহামারীর পর কয়েক বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়া হলেও এখন থেকে ফের পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যক্রমে মূল্যায়নের ধারায় ফিরছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও পাঠ্যবিষয়ের গভীরতা বজায় রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।