
গত ১৩ জুন থেকে চলা ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের অবসান হয়েছে গত মঙ্গলবার। এদিন থেকেই যুদ্ধবিরতি পালন করছে ইরান-ইসরায়েল। ১২ দিনের এ যুদ্ধের পর এদিন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘বিজয় উদযাপন’ করেছে ইরানীরা। এ উপলক্ষ্যে তেহরানে মঙ্গলবার একটি বিশাল র্যালি ও গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করা হয়, যারা প্রচণ্ড সাহসের সঙ্গে জায়োনিস্ট বাহিনীর আগ্রাসনের মোকাবিলা করে আসছে। এদিকে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) কুদস ফোর্সের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কানি মঙ্গলবার তেহরানে ‘বিজয় উৎসব’-এ জনতার সঙ্গে অংশ নেন। ১৩ জুন ইরানের নিহত ২০ জেনারেলের মধ্যে তার নামও ছিলো। খবর বার্তা সংস্থা তাসনিমর।
নারী, পুরুষ ও শিশুসহ হাজার হাজার ইরানী এদিন রাজধানী তেহরানের কেন্দ্রস্থলের ইনকিলাব স্কয়ারে জড়ো হন। তারা ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধকারী ইরানি সেনাবাহিনীর প্রতি জোরালো সমর্থন জানান এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সমাবেশে উপস্থিত ইরানীরা ইসরায়েলি শাসনব্যবস্থার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানান। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে এই রক্তপাতের সহ-অপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত করেন। এ সময় তারা-‘যুক্তরাষ্ট্র নিপাত যাক’, ‘শিশুহত্যাকারী ইসরায়েল নিপাত যাক’ এবং ‘সমঝোতা নয়, আত্মসমর্পণ নয় আমেরিকার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চলবে’ ইত্যাদি বলে সেøাগান দেন। তারা ইরানের জাতীয় পতাকা, ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ছবি এবং সাম্প্রতিক শহিদদের প্রতিকৃতি বহন করেন। এ সময় তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল-‘আমরা শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকব’, ‘আমেরিকা ইসরায়েলের সব অপরাধে অংশীদার’, ‘প্রথাগত শান্তি নয়, স্থায়ী শান্তি চাই’ এবং ‘লাব্বাইক ইয়া খামেনি’। ইরানী জনগণ দেশটির ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি), সেনাবাহিনী, বাসিজ বাহিনী এবং পুলিশের সাহসিকতা ও দৃঢ়তার প্রশংসা করে সেøাগান দেন। তারা এই বাহিনীগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানান।
এদিকে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) কুদস ফোর্সের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কানি মঙ্গলবার তেহরানে ‘বিজয় উৎসব’-এ জনতার সঙ্গে অংশ নিয়েছেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজ এজেন্সি একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যেখানে দেখা যায়, কানি রাজধানী তেহরানে উপস্থিত হয়েছেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘ডিভাইন ভিক্টরি’ নামে পরিচিত সামরিক অভিযানের সাফল্য উদযাপন করতে। তাসনিমের পোস্টে বলা হয়েছে, ‘অপারেশন ডিভাইন ভিক্টরির পর তেহরানের জনগণের সমাবেশে অংশ নেন কমান্ডার কানি।’ সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত প্রেস টিভিও ভিডিওটি প্রকাশ করে জানিয়েছে, ‘আইআরজিসি কুদস ফোর্সের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কানি আজ (গতকাল) তেহরানে বিজয় উদযাপনের সময় উচ্ছ্বসিত জনতার কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন।’ তবে কানি যে জীবিত রয়েছেন, তা ঘিরে বিতর্ক ছিল। চলতি মাসের শুরুতে নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে কানিও নিহত হয়েছেন। গত ১৩ জুন থেকে ইসরায়েল ইরানের একাধিক স্থানে বিমান হামলা চালায়, যার মধ্যে ছিল সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনাও। ইসরায়েলের দাবি ছিল, ইরান নাকি পরমাণু বোমা তৈরির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। তবে এই দাবি বরাবরের মতোই জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে তেহরান। জবাবে ইরানও চালায় পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রও যুক্ত হয় সংঘাতে এবং রোববার তারা ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। ১২ দিন ধরে চলা এই আকাশযুদ্ধের পর সোমবার গভীর রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। তেহরানে কানি উপস্থিত থেকে বিজয় উদযাপনে অংশ নেয়ায় এখন স্পষ্ট যে তিনি জীবিত এবং সুস্থ আছেন এবং ইসরায়েলের হামলায় তার মৃত্যুর যে গুঞ্জন ছিল, তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।