
বাংলাদেশীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার হারানোর শঙ্কা বাড়ছে। এমনিতেই সিন্ডিকেট বাণিজ্যের কারণে প্রায় এক বছর মালয়েশিয়া বাংলাদেশী কর্মী নেয়া বন্ধ করে রেখেছে। ভিসা থাকলেও নির্ধারত সময়ের পর বাংলাদেশীদের দেশটিতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। তবে দেশটির সরকার নতুন করে ওসব কর্মীকে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও জঙ্গি সংগঠন আইএসের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৩৬ বাংলাদেশীকে আটকের ঘটনা নতুন সংকট তৈরি করেছে। এ কারণে শুধু নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগই নয়, বরং বাংলাদেশী শ্রমিকদের প্রতি আস্থার সংকট তৈরির শঙ্কা রয়েছে। তাতে পুনরায় মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তা অনিশ্চত হয়ে যেতে। এমনকি কঠিন হয়ে উঠতে পারে মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশের শ্রমবাজারেও বাংলাদেশীদের প্রবেশ। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) এবং জনশক্তি রফতানিকারকদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছরই কর্মসংস্থানের সন্ধানে দেশ ছাড়ে লাখ লাখ মানুষ। কিন্তুসম্ভাবনাময় জনশক্তি রফতানি খাত ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। মূলত অবৈধ অনুপ্রবেশ, কর্মক্ষেত্রে অপরাধে জড়ানো, আইন না মানা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও মানব পাচারসহ নানা কারণে অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। গত ১২ বছরে বাংলাদেশীদের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে ওমান, বাহরাইন, ইরাক, লিবিয়া, সুদান, মিসর, রোমানিয়া, ব্রুনাই ও মালদ্বীপের শ্রমবাজার। গত বছর জুলাইয়ে আন্দোলন করায় ভিসা বন্ধ করে দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাতও। এখনো ওই বাজার চালু হয়নি। সমপ্রতি সৌদি আরবও পেশাগত দক্ষতার সনদ ছাড়া ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দিয়েছে। সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া সম্প্রতি বাংলাদেশীদের আইএস-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ শ্রমবাজারে বিরূপ প্রভাব ফেলার আশঙ্কা রয়েছে। তবে তার অনেকটাই নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের ওপর। বাংলাদেশ সরকার যদি বিষয়টি নিয়ে যথাযথ সমঝোতা করে তাহলে শ্রমবাজারের ওপর খুব বেশি প্রভাব নাও পড়তে পারে। তবে বাংলাদেশ সরকার কীভাবে ঘটনায় কি প্রতিক্রিয়া দেখায়, মালয়েশিয়াকে কী বলা হয়, মানুষের মাঝে সচেতনতার জন্য কী করছে তার ওপর নির্ভর করবে অনেক কিছু ।’
এদিকে অতিসম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল জানান, জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় আটক বাংলাদেশী দলটি সিরিয়া ও বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সেলগুলোকে অর্থ পাঠাতো। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে পরিচালিত ধারাবাহিক অভিযানে ওই ৩৬ বাংলাদেশীকে আটক করা হয়। তারা মূলত কারখানা, নির্মাণ ও সেবা খাতে কর্মরত ছিলো। বাংলাদেশীদের চক্রটি অন্য বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে থেকে সদস্য বাড়াচ্ছিলো। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে “উগ্রবাদী মতাদর্শ”ছড়াচ্ছিলো। আটকদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা হয়েছে। ১৫ জনকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে আর এখনো পুলিশ হেফাজতে ১৬ জন। মূলত যাদের সংশ্লিষ্টতা কম তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে আর যাদের সম্পৃক্ততা বেশি, তাদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অন্যদিকে প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এরই মধ্যে মালয়েশিয়ায় আটক শ্রমিকদের মধ্যে তিনজন দেশে ফেরত এসেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এই অভিযোগে আটক হয়ে যারা ফেরত আসবে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পেলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।