
ভাসমান টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ বিঘ্নে ভোগান্তিতে পড়ছে চট্টগ্রামবাসী। কারণ দেশে এলএনজি ব্যবহারের পর থেকেই চট্টগ্রামের গ্যাসের সরবরাহ এলএনজির ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে দেশের দুটি ভাসমান টার্মিনালের এলএনজি সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে দৈনিক প্রায় ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি এলএনজি সরবরাহ দেয়া হয়। কিন্তু বৈরী আবহাওয়া হলেই মহেশখালীতে সাগরে অবস্থিত ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে দুর্ভোগ নেমে আসে। খারাপ আবহাওয়ায় ইতিমধ্যে অসংখ্যবার চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহ বিঘ্ন ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহে মহেশখালীতে স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল জরুরি হয়ে পড়েছে। ভুক্তভোগী এবং কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে এলএনজি সরবরাহ চালু করা হয়। দুটি ভাসমান টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। আর এলএনজি সরবরাহ শুরু হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রিড থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ দেয়া হচ্ছে না। ফলে সম্পূর্ণভাবে এলএনজি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বৈরী আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকলে ভাসমান টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে না। আর সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলেই চট্টগ্রামে গ্যাসের চরম ভোগান্তি নামে। তাছাড়া ভাসমান টার্মিনালে সৃষ্ট সমস্যায় ইতিপূর্বে কয়েকবার বন্ধ হয়েছে এলএনজি সরবরাহ।
সূত্র জানায়, মহেশখালীতে বিগত সময়ে এলএনজির ল্যান্ড বেইজ স্টোরেজ নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। ওই লক্ষ্যে সমতলে সার্ভে করা হয়েছিল। কিন্তু যে জায়গায় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তা পিডিবির মালিকানাধীন জায়গা। ফলে জায়গা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় বিষয়টি আর অগ্রগতি হয়নি। কিন্তু চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হলে মহেশখালীতে ল্যান্ড বেইজ স্টোরেজ নির্মাণ করা প্রয়োজন। কারণ এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যায় না। তাতে চরম ভোগান্তি নেমে আসে চট্টগ্রামের শিল্পকারখানা, বাণিজ্যিক ও আবাসিক খাতে। বর্তমানে চাহিদা বেশি থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রামে দৈনিক ২৬০-২৭০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে না। চট্টগ্রামে অনেক শিল্প-কারখানা অবকাঠামো নির্মাণ ও মেশিনারি সরঞ্জাম স্থাপন করে উৎপাদনের উপযোগী হলেও গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারছে না। ওসব প্রতিষ্ঠান সংযোগের জন্য গ্যাস কোম্পানিকে ডিমান্ড নোটের প্রয়োজনীয় টাকাও পরিশোধ করেছেন।
সূত্র আরো জানায়, হাজারো রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনকারী শিল্পকারখানা চট্টগ্রামে রয়েছে। তাছাড়া সরকারি বেসরকারি কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দুটি সার কারখানাও আছে। গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত ঘটলেই ওসব কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়। চট্টগ্রামের শিল্পোদ্যোক্তাদের দাবি, চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ না হলে সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করতে স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন জরুরি। বর্তমানে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি একটি ও দেশীয় সামিট গ্রুপের একটি এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট) রয়েছে। বর্তমানে বিরাজমান স্টোরেজে পাঁচ-ছয় দিনের গ্যাস মজুত রাখা যায়। স্থলভিত্তিক এফএসআরইউ করা হলে কমপক্ষে এক মাসের গ্যাস মজুত রাখা যাবে। তখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও এলএনজি সরবরাহ বিঘ্নিত হবে না। বর্তমানে সাগর উত্তাল হলেই ভাসমান টার্মিনাল এরএনজিবাহী কার্গো বার্থিংয়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী আমিনুর রহমান জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এলএনজি সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা দরকার। চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে স্থলভিত্তিক টার্মিনালের প্রয়োজনীয়তা জরুরি হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে সমপ্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, সরকার স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সমপ্রতি প্রধান উপদেষ্টা কাতার সফরের সময় কাতার এনার্জির সঙ্গে একটি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হবে।